আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ রপ্তানির প্রস্তাব!

ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় বহু বছর পর বড় ইলিশের স্বাদ নিতে পেরেছে দেশের মানুষ। বছর জুড়েই পাওয়া গেছে ইলিশ, তাও সাধ্যের মধ্যে। ব্যবসায়ীদের আবেদন আর ভারতের অনুরোধে সেই ইলিশ আবারও রপ্তানির পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু যে দরে বিদেশে ইলিশ পাঠাতে চাইছেন রপ্তানিকারকরা, তা দেশের বাজারদরের চেয়েও কম। এ ব্যাপারে আপত্তি খোদ এফবিসিসিআই'র।

২০০৮ সালের পর সরকারিভাবে ইলিশের রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধি করা হয়নি।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ইলিশের নগণ্য অংশ বিদেশে রপ্তানি হয়। এক বছর ধরে ইলিশ রপ্তানি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ থাকলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে (ইনফরমাল ওয়ে) তা ঠিকই বিদেশে যাচ্ছে। তাহলে রপ্তানি হলে তো কোনো সমস্যা নেই।

তবে এখনো ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ’

গত বছর রমজানের আগে সাধারণ মানুষের চাহিদা ও ন্যায্যমূল্যে মাছ পাওয়ার কথা মাথায় রেখে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মন্ত্রণালয়। রমজানের পর থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা তা উন্মুক্ত করার জন্য বারবার আবেদন করছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। সম্প্রতি ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাতে ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে তার মাত্র ৩ শতাংশের মতো বিদেশে রপ্তানি হয়। ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত করার বিষয়ে সম্প্রতি মাছ রপ্তানিকারক সমিতি ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাতে মাছ রপ্তানিকারকরা বলছেন, ৬০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশের প্রতি কেজির ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য হবে সাত ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৫৪৬ টাকা), প্রতিটি এক থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য হবে ৯ ডলার (৭০২ টাকা) এবং প্রতিটি দেড় কেজির বেশি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য হবে ১৪ ডলার (১০৯২ টাকা)।

মাছ রপ্তানিকারকদের এ প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে এফবিসিসিআইও। সংগঠনটির মতে, রপ্তানিকারকরা যে দর প্রস্তাব করেছেন, দেশের বাজারেও এত সস্তায় ইলিশ পাওয়া যায় না।

রপ্তানিমূল্য অবশ্যই দেশের বাজারদরের চেয়ে বেশি হতে হবে। তাই এফবিসিসিআই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছে যে ৬০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশের প্রতি কেজির ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য হবে ১২ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৯৩৬ টাকা), এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশের প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য হবে ১৪ ডলার (১০৯২ টাকা) এবং দেড় কেজির বেশি ওজনের প্রতিটি ইলিশের প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য হবে ২০ ডলার (১৫৬০ টাকা)।

২০০৮ সালে সরকারের জারি করা আদেশ অনুযায়ী, ৬০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশের প্রতি কেজির ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য হবে ছয় ডলার, এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের ক্ষেত্রে আট ডলার এবং দেড় কেজির বেশি ওজনের ইলিশের ক্ষেত্রে প্রতি কেজির দর হবে ১২ ডলার।

ঢাকা মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শিকদার বলেন, ঢাকার বাজারে এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ খুব কম আসে। বেশির ভাগ ইলিশই আসে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের।

এগুলোর দাম এখন কোনো মতেই কেজিপ্রতি এক হাজার টাকার কম নয়। অভিজাত বাজারে আরো বেশি। কিছুদিন পর বড় ইলিশ পাওয়াই যাবে না। কারণ সরকার রপ্তানির অনুমতি দেবে বলে শুনছি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আগের মন্ত্রী জি এম কাদের ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত করার পক্ষে ছিলেন না।

তাই বার বার ভারতের অনুরোধ সত্ত্বেও এটা উন্মুক্ত হয়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দুই সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া দুটি মতামতই মন্ত্রী ও সচিবের টেবিলে পাঠানো হয়েছে। ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত ও তার মূল্যের বিষয়টি তারাই চুড়ান্ত করবেন।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন উল্লাহ বলেন, ‘ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত করার বিষয়ে আমরা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। তার প্রেক্ষিতে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সরকারের বৈঠকও হয়েছে।

সর্বশেষ গত সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, প্রতিবছর দেশে সাড়ে তিন লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয়। সেখান থেকে রপ্তানি হয় মাত্র ছয় হাজার টন। তাই ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত করা হলে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। ’

দেশের চেয়েও কম দরে বিদেশে ইলিশ রপ্তানির প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. আমিন উল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভরা মৌসুমে ইলিশ কিনি।

পরে রপ্তানি করি। তা ছাড়া দাম বাড়ানো হলে বিদেশিরা ইলিশ কিনবে না। তবে আমরা প্রয়োজনে ২০০৮ সালের নির্ধারিত রপ্তানিমূল্যের চেয়ে এবার ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। কিন্তু এফবিসিসিআই যে ধরনের মূল্য প্রস্তাব করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। কারণ দেড় কেজি ওজনের বড় ইলিশ হলেও বিদেশিরা ১৫০০ টাকায় কোনো ইলিশ খাবে না।

এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এফবিসিসিআইয়ের বক্তব্য হলো, ইলিশ রপ্তানি হতে পারে। তবে তা অবশ্যই দেশের বাজারদরের চেয়ে সস্তায় নয়। ১৪০ ডলার টনের পেঁয়াজ আমরা ভারত থেকে কিনেছি ১২০০ ডলার করে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ না করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজেদের স্বার্থেই দেশটি এমন করেছে।

আমাদেরও তেমনটিই করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ইলিশের যে দাম নির্ধারণ করা আছে, ওই দামে দেশের কোথাও ইলিশ পাওয়া যায় না। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ ঢাকার বাজারে এক হাজার টাকার কমে পাওয়ার আশা করা যায় না। সেখানে ১৫ বছর আগের দরে বিদেশে ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত করে দেশের ক্ষতি হবে।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.