স্বপ্ন কি স্বপ্নই রয়ে যায়, না বাস্তবের আচড়ে অঙ্কিত হয়? পরশু রাতে ক্লান্ত শরীরে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ট্রিপল সেঞ্চুরির কথা কি ভেবেছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা? ১৬০ রানে অপরাজিত থাকা এই ড্যাসিং বাঁ হাতি ক্রিকেটার হয়তো ভেবেছিলেন। হয়তো বা না। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর ট্রিপল সেঞ্চুরির ভাবনা শুধু কল্পনাতেই সম্ভব। সেই স্বপ্নকে, কল্পনাকে সাঙ্গাকারা কাল বাস্তবের কঠিন তুলির আচড়ে অাঁকেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সবুজ ক্যানভাসে। খেলেন ৩১৯ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস।
যা দিয়েছে তাকে অমরত্ব। শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, জ্যাক ক্যালিস, রিকি পন্টিং, রাহুল দ্রাবিড়রা যা পারেননি, তাই করলেন সাঙ্গাকারা। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছেন ট্রিপল সেঞ্চুরি এবং করেছেন টাইগারদের পয়মন্ত ভেন্যু চট্টগ্রামে। ট্রিপল সেঞ্চুরির বাঁধনহারা আনন্দে তাই উচ্ছ্বসিত এই লঙ্কান। শীতের কুয়াচ্ছন্ন সকালে যখন মাঠে নামেন সাঙ্গাকারা, তখন তার সঙ্গী মিরপুরের সেঞ্চুরিয়ান কিথুরুয়ান ভিথানাগে।
দিন শুরু করেন বাউন্ডারি দিয়ে। তখনই মনে হয়েছে বড় স্বপ্নই দেখেছিলেন আগের রাতে। এরপর একে একে ভিথানাগে, অজন্থা মেন্ডিস, লাকমল ও প্রদীপদের নিয়ে গড়েছেন ছোট-বড় জুটি। টেনে নিয়ে গেছেন দলকে ৫৮৭ রান পর্যন্ত। ফাঁকে নামের পাশে লিখে নিয়েছেন ট্রিপল সেঞ্চুরি।
এর আগে শ্রীলঙ্কার পক্ষে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন সনত জয়সুরিয়া (৩৪০) ও মাহেলা জয়াবর্ধনে (৩৭৫)। ২২১৭ টেস্ট ইতিহাসে সাঙ্গাকারার ট্রিপল সেঞ্চুরি ২৭ নম্বরে। ১৯৩০ সালে জ্যামাইকার কিংস্টনের সাবিনা পার্কে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি স্যান্ডহাম। সর্বশেষ সাঙ্গাকারা। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে দুটি করে ট্রিপল সেঞ্চুরি রয়েছে স্যার ডন ব্রাডম্যান, ব্রায়ান লারা, বীরেন্দর শেবাগ ও ক্রিস গেইল।
এরমধ্যে লারাই একমাত্র ক্রিকেটার যার নামের পাশে রয়েছে ৪০০ রান।
ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির আগে ডাবল সেঞ্চুরিতে পেঁৗছান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বাউন্ডারি মেরে। আড়াইশ'র ঘরে পেঁৗছান সোহাগ গাজীকে সীমানা ছাড়া করে। ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন ৫ উইকেট নেওয়া সাকিব আল হাসানকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ওভার বাউন্ডারিতে। লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছিলেন সাঙ্গাকারা ২২৩ রান নিয়ে।
লাঞ্চের আধঘণ্টার মধ্যেই পেঁৗছে যান আড়াইশ'র ঘরে। এরপর তিনি ব্যাটিং করেন ওয়ানডে স্টাইলে। বিশেষ করে ইনিংসের আট ছক্কার পাঁচটিই মারেন লাঞ্চের পর এবং সবগুলোই সাকিবকে। ৩১৯ রানের ইনিংসটি খেলেন ৪৪৭ বলে। যাতে ছিল ৩০ বাউন্ডারি ও ৮টি ওভার বাউন্ডারি।
ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করে উচ্ছ্বসিত সাঙ্গাকারা আরও কিছু চেয়েছিলেন দলের জন্য, 'ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ভালো লেগেছে। তবে ভালো লাগতো দলের অবস্থা আরও ভালো হলে। ব্যক্তিগত প্রাপ্তি অনেক। কিন্তু আমরা ম্যাচ জিততে চাই। '
প্রথমদিন ১৬০ রানের ইনিংস খেলে নাম লিখেছিলেন লারা ও গাভাস্কারের পাশে।
গতকাল ট্রিপল সেঞ্চুরির পাশাপাশি গড়েন আরও একটি মাইলফলক। মাহেলার পর দ্বিতীয় লঙ্কান ক্রিকেটার হিসেবে জায়গা করে নেন ১১ হাজার রানের ঘরে। মাহেলার রান ১১৩০৮ এবং ১২২ টেস্টে ৫৭.৮৩ গড়ে সাঙ্গাকারার রান ১১০৪৬। লারা, মাহেলা, দ্রাবিড়দের পাশে নাম লেখালেও পিছনে ফেলেছেন তাদের। এগারো হাজার রানের মাইলফলক গড়েছেন সবচেয়ে কম ইনিংস খেলে।
২০৮ ইনিংসে তিনি করেছেন ১১০৪৬। লারা এগারো হাজার রানের ঘরে পেঁৗছতে ইনিংস খরচ করেছিলেন ২১৩টি। মাহেলা করেন ২৩৭ ইনিংসে। লারাকে পিছনে ফেলতে পারাকে স্বপ্নের মতোই ভাবছেন সাঙ্গাকারা,'লারাকে পিছনে ফেলাটা অবশ্যই আনন্দের। সে একজন জাদুকরি ব্যাটসম্যান।
তার সঙ্গে কোনো তুলনাই হয় না। তার পাশে নাম উচ্চারিত হওয়াই অনেক বড় প্রাপ্তি। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।