আমি সত্যের এবং সুন্দরের পুজারী। কজন মানুষের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা । আর যারা নিজেদের অনেক বড় ভাবে, তাদের প্রতি আমার রয়েছে করুণা । যেটা আমার কাছে ভুল মনে হয় , তার তাত্ক্ষণিক যুক্তিসম্মত প্রতিবাদ করতে আমার ব
পটভূমিঃ “এই রম্য ছোট নাটক টার মাধ্যমে হরতালের কারণে দুর্বিসহ জীবন যাপনকারী দের কষ্ট টাকে তুলে ধরা হয়েছে। নাটকের চরিত্র প্রায় সবাই আমাদের মোটামুটি পরিচিত।
এই ছোট নাটক টা পড়ার সময় যদি চরিত্রগুলা পরিচিত মনে হয়, তাহলে সেই চরিত্রের বাচন ভঙ্গির অনুকরণে তাদের কথা গুলা পড়ার অনুরোধ থাকল”।
দৃশ্য একঃ
মীনাঃ “রাজু চল, ইস্কুলে যাই, ইস্কুলের সময় হইছে তো”!
রাজুঃ “চল মীনা, কিন্তু আইজ না হরতাল, হরতালে ইস্কুল বন্ধ থাকব”
মীনাঃ “হরতাল তো সারা বছর ই থাকব, তাই বলে কি ইস্কুলে যাব না? চল চল ইস্কুলে যাই। আইজ আপার ব্যাং কাটা দেখানোর কথা না!”
দুইজন ব্যাগ গুছিয়ে ইস্কুলে যাচ্ছে।
মাথার উপর চক্কর দিচ্ছে মিঠু……… “ইস্কুউউউউল, হ অ অ অর তাআল, ইস্কুউউউউল………”
দৃশ্য দুইঃ
মীনা-রাজুর স্কুল,
আপা ক্লাস নিচ্ছেন, একটু পর ই ব্যাং কাটা দেখাবেন !
এমন সময় কয়েকজন পিকেটার নুরু, ভুরু, গুলু, বুলু এর আগমন!
নুরুঃ “বাচ্চারা, তোমাদের আজ আর ক্লাস হবে না, সবাই বা্সায় চলে যাও, কালকেও ক্লাস হবে না, কার ও আসার দরকার নাই”.
দৃশ্য তিনঃ
সবাই ভয়ে ভয়ে বাসায় যাচ্ছে,
রাজুঃ আমি কইছিলাম না, হরতাল এ ইস্কুল হইব না!
মীনাঃ কিন্তু রাজু, কাইল ও তো হরতাল, এরপর শুক্রবার, শনিবার, তারপরেও তো আবার হরতাল, ব্যাং কাটা শিখুম না! ইস্কুলের আপা ঠিক ই আইব কাইল। আমিও যাব।
রাজুঃ আইচ্ছা মীনা, কাইল দেখা যাবে। চল এহন এট্টূ খেলাধুলা করি।
দৃশ্য চারঃ
রাজু আজ স্কুলে যাচ্ছে না, মীনা আর তার মা যাচ্ছে, মা আজ মীনার সাথে যাচ্ছেন, কেননা মীনা ভয় পেয়েছে। নুরু, ভুরু, গুলু, বুলু কে বিশ্বাস নাই, ওরা যখন তখন কি ছুড়ে মারে, বিকট শব্দে অনেকে আহত হয়।
মাঃ “মীনা, আইজ ইস্কুল কি হইব? হরতাল না?”
মীনাঃ “মা, হরতাল যদি সারা বছর ই চলে, তাহলে ইস্কুলে যাব কবে ?”
মা চুপ করে যান।
মীনার মাথার উপর যথারীতি ঘুরছে মিঠু ….. “ইস্কুউউউউল, হ অ অ অর তাআল, ইস্কুউউউউল………”
স্কুলের কাছাকাছি আসতেই দেখা গেল, আজ মায়েরা আসছেন সবার সাথে। হঠাত একটু দূরে দেখা গেল নুরু, ভুরু, গুলু, বুলু কে। একটু পরেই বিকট শব্দ, চারিদিকে ধোঁয়া, চিতকার!
ধোঁয়া একটু কমতেই মীনা দেখল কাছেই রিক্সায় বসা তাদের ক্লাসের রীনা তার চোখ ধরে বসে আছে, আর চোখের পাশ দিয়ে পড়ছে রক্ত!
মীনা দৌড়ে গেল, কান্নারত রীনাকে আর তার মা কে বলল,
“কোন চিন্তা কইর না বোন, তোমার চোখ নষ্ট হইব না, তোমাকে আমরা হাসপাতালে লইয়া গেলেই ডাক্তার রা তোমারে সুস্থ কইরা তুলব। এরপর আমরা একলগে ব্যাং কাটা শিখুম”
মিঠুঃ “হ অ অ র তা আ আ ল, ……… চোখ……ই ই স কু উ উ ল”
দৃশ্য পাঁচঃ
হাসপাতাল, মীনা, মা আর রীনা, রীনার মা এর আগমন জরুরী বিভাগে।
ওয়ার্ডে নার্স, আর একজন রোগী ছাড়া কেউ নাই এত সকালে।
মীনাঃ “দিদি, ডাক্তার কই? আমার বন্ধু চক্ষে ব্যথা পাইছে!”
নার্সঃ “মীনা, তুমি কোন চিন্তা কইর না, আমি দেখতেছি”
কিছুক্ষন দেখার পর মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়ার পর,
নার্সঃ “মীনা, তুমি দেরি না কইরা খুব ভাল সময়ে নিয়ে আসছ, কোন ভয় পাইও না, তেমন ক্ষতি হয় নাই, আমি সব ব্যবস্থা করে দিছি। “
মীনাঃ “দিদি, আপনারে অনেক ধন্যবাদ, কিন্তু ডাক্তার চাচা আসতে পারে নাই না আজ!”
নার্সঃ “মীনা, আসলে ঐ যে বেডে যে রোগী শোয়া আছে, উনি ই ডাক্তার সাব, আইজ সকালে আসার পথে উনার সাইকেল পোড়ায় দিছে, আর উনি পটকা না ককটেল কি যেন বলে, তার আঘাতে আহত হইছেন একেবারে হাসপাতালের কাছে। আমরা উনারে তুইলে আইনা বিছানায় শোয়াইছি। উনি কাজ শুরু করতে চাইছেন, আমরা উনাকে বিশ্রাম নিতে জোর করতেছি। উনি মনে হয় কথা শুনবেন না, একটু পরেই আবার উঠে রোগী দেখা শুরু করবেন।
কেননা আজ অনেক আহত মানুষ আসবে। তুমি দেখে শুনে বাসায় যাইও। “
মীনা, রীনা মন খারাপ করে বাসায় যাচ্ছে। বাসায় যাওয়ার পর দেখে অনেক আহত মানুষ আসছে হাসপাতালে, অনেক লম্বা লাইন। মীনা বুঝে পায় না, “হরতাল কেন হয়! কার কি লাভ?”
দৃশ্য ছয়ঃ
চাচা চৌধুরীর বাসায় বারান্দায় মীনা, রাজু, মিঠু।
রাজুঃ (ফিসফিস করে) “মীনা, এই বুড়া চাচায় কি হরতাল থামাইতে পারব?”
মীনাঃ (ফিসফিস করে) “রাজু, আস্তে, এই বুড়া চাচা’র নাম চাচা চৌধুরী। সবাই বলে
**চাচা চৌধুরীর বুদ্ধি কম্পিউটার এর চেয়েও প্রখর। **”
এমন অবস্থায় চাচার ঘরে ঝড়ের শব্দ শোনা গেল, চাচা চৌধুরী দৌড়ে এসে বারান্দায় রাখা টুলে বসে পড়লেন। ভেতর থেকে রুটি বানানোর ব্যালন হাতে চাচী একবার উঁকি দিয়েই আবার ভেতরে চলে গেলেন।
চাচা চৌধুরীঃ (কিছুই হয় নাই, এমন ভাব করে), “কি পিংকী, কখন আইলা! ঘটনা কি?”
মীনাঃ “চাচা চৌধুরী, আমি পিংকী না, আমি মীনা, এ আমার ছোট ভাই রাজু, আর এইটা আমাদের মিঠু।
আমরা বাংলাদেশ থেকে আসছি আপনার কাছে”
চাচা চৌধুরীঃ “বুঝতে পারছি, তোমরা হরতাল বন্ধ করবার চাও”
কিছু বলার আগেই উনি বুঝে ফেলায়, রাজু অবাক হয়ে মীনার দিকে তাকায়। মীনাও মুচকি হাসে।
**চাচা চৌধুরীর বুদ্ধি কম্পিউটারের চেয়েও প্রখর। **
দৃশ্য সাতঃ
চাচী বের হয়ে এসে বললেন,
“ছেলে মেয়ে দুটা সেই বাংলাদেশ থেকে আসছে। আগে কিছু খেয়ে নিক”
চাচা চৌধুরীঃ হ্যাঁ তোমরা কিছু খেয়ে নাও, আমি জুপিটার গ্রহে একটা মোবাইল করি, সাবুকে আসতে বলি।
মীনা রাজু খাচ্ছে। মিঠুও খাচ্ছে। হঠাত ই সাবু’র আগমন।
সাবুঃ “হু হু বাবা…….. চাচাজী আমায় ডেকেছেন ?”
চাচা চৌধুরীঃ বাংলাদেশে অনেক হরতাল, রাকা কোথায় জান?
সাবুঃ চাচাজী, শুনতে পেয়েছি রাকা ছদ্মবেশে বাংলাদেশে বসে আছে। সে ই এইসব ঘটনা ঘটাচ্ছে আর তার দলে নুরু, ভুরু, বুলু, ভুলু আছে।
রাকাকে এবার প্লুটোতে পাঠাতে হবে।
চাচাজীঃ “সাবু, এইকারণেই তোমাকে ডাকা, মীনা আর মিঠুর খাওয়া শেষ হলেই তুমি ওদের সাথে বাংলাদেশ যাবে। রাকাকে একেবারে প্লুটোতে পাঠিয়ে তারপর আসবে”
মীনা আর রাজু’র মুখে হাসি।
সাবুঃ ইতস্তত করে, “চাচী! একটু খাওয়া হবে”
চাচীঃ “না সাবু, কোন কাজ নাই সারাদিন খালি খাওয়া, বাংলাদেশে গিয়ে নুরু, ভুরু, বুলু, ভুলু আর রাকাদের শায়েস্তা করে আয়। তারপর আবার খাওয়া দিব”
শেষ দৃশ্যঃ
মীনা, রাজু, মিঠু আর সাবু চলে যাচ্ছে রাকাকে প্লুটোতে পাঠাতে।
মিঠু চিতকার করছে…
“ হ র তা আ ল …..ব অ ন্ধ….. ক অ অ র………” এরপর বাংলাদেশে আর কখনো হরতাল হবে না। আর কোন রীনা চোখে ব্যথা পাবে না।
****** শেষ ******
(শেষ কথাঃ এই রম্য নাটক টার মাধ্যমে হরতালে ছাত্র ছাত্রী , অন্যান্য পেশাজীবীর প্রচন্ড কষ্টের কথা হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এই ছোট নাটক টা রম্য হলেও, আমাদের দৈনন্দিন জীবন টা হরতালের কারনে আর রম্য নাই, তা হয়ে উঠেছে প্রচন্ড রকম ভাবে অনিশ্চিত, বিপদ সংকুল, গণতান্ত্রিক অধিকার হরতাল এর কারণে আজ গণমানুষের জীবনের নিরাপত্তাই হুমকির মুখে)।
উতসর্গঃ প্রতিভাবান লেখকেরা তাদের লেখা উতসর্গ করেন অনেকে র নামে।
আমি জীবনযুদ্ধ করে যাওয়া একজন সাধারণ ব্লগার। আমার এই ব্লগীয় লেখা উতসর্গ করলাম অন্তু বড়ুয়া আর সাদিয়া নামের সেই অনেক সাহসী ছোট বোন দুইটার জন্য যারা সাম্প্রতিক সময়ে স্কুলে আসতে গিয়েও ছুড়ে মারা ককটেলের আঘাতে চোখে প্রচন্ড ভাবে আঘাত পেয়েছে। দোয়া করি তারা যেন এই যুদ্ধ জয় করে মানুষের মত মানুষ হয়, এবং যখন তারা সমাজকে lead করার মত position এ যাবে, তখন তারা ও হরতাল এর নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে…………… ব্লগার প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭, জুন ১, ২০১৩ ইং।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।