শহরে বা গ্রামে কোনো একটি রাস্তায় বা রাস্তার কোনো স্থানে প্রতিবন্ধকতা বা জ্যাম সৃষ্টি হলে মানুষ ওই রাস্তা বা স্থানকে বাইপাস করে অন্যপথে নিজস্ব গন্তব্যে পেঁৗছে যেতে পারে। প্রকৃতিতেও আমরা অনুরূপ বিকল্প পথ সৃষ্টি হতে দেখে থাকি যেমন কোনো একটি নদী বা খালে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ আটকে দিলে প্রকৃতির নিয়মে পানি পাশর্্ববর্তী নালা বা ছোট ছোট শাখা দিয়ে ভাটির দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। এই অবস্থায় ছোট ছোট শাখা নদী বা নালা খোলার পূর্বশর্ত হলো ওই নালার দুই প্রান্তে পানির চাপের পার্থক্য যা বাঁধ নির্মাণের ফলে বৃদ্ধি পায়, ফলশ্রুতিতে পাশর্্বনালায় পানির প্রবাহ এবং গতি দুই-ই বৃদ্ধি পেতে থাকে, এভাবে চলতে থাকলে পানির শ্রোতের তোড়ে একসময় নালার আকার ও গভীরতা বৃদ্ধি পেতে পেতে তা বড় খাল বা নদীর আকার ধারণ করতে পারে। আমরা জানি, হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হতে হতে একসময় রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যাকে সাধারণভাবে ব্লক বলে আখ্যায়িত করা হয়।
যদি কোনো কারণে হঠাৎ কোনো রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায় তবে রক্তপ্রবাহের অভাবে ভাটির দিকে মাংসপেশি মরে বা নষ্ট হয়ে যায় যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হার্টঅ্যাটাক বা মাইওকার্ডিয়া ইনফেকশন বা হার্ট স্ট্রোক বলা হয়। যার জটিলতা হিসেবে রোগীর তাৎক্ষণিক মৃত্যুসহ আরও অনেক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। যদি হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি হঠাৎ বন্ধ না হয়ে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে বা ধীরে ধীরে ব্লকের তীব্রতা বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে ব্লকের ফলে উজান ও ভাটিতে রক্তচাপের বৈষম্য বৃদ্ধির ফলে অনেক সুপ্ত রক্তনালি ও পাশর্্ববর্তী ছোট ছোট রক্তনালিতে রক্তপ্রবাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়ে ভাটির দিকের রক্তপ্রবাহকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় পেঁৗছে দিয়ে ভাটির দিকের মাংসপেশিকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে শুধু রক্ষাই করে না, অনেক ক্ষেত্রে ভাটির দিকের মাংসপেশিকে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনেও সক্ষম রাখতে পারে। যা সম্ভব হয়ে থাকে ব্লকে পাশর্্ববর্তী অন্য ছোট-বড় রক্তনালির মাধ্যমে রক্তপ্রবাহিত করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ধরনের বিকল্প পথে রক্ত সরবরাহকে নেচারাল বাইপাস বলে আখ্যায়িত করা হয়।
মানবদেহে রক্ত সরবরাহের জন্য যেসব রক্তনালি বিদ্যমান আছে তা শহরের রাস্তার মতো জালিকা আকারে সনি্নবেশিত। তাই কোনো একটা রক্তনালি বা পথ বন্ধ হলেও বিকল্প রাস্তা প্রায় সময়ই খোলা থাকে। তবে কিছু কিছু স্থানে তা হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে, যেগুলোকে প্রধান রক্তনালি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেসব ব্যক্তি কায়িক শ্রমে অভ্যস্ত তাদের হৃৎপিণ্ডে নতুন নতুন রক্তনালির সৃষ্টি হয়ে থাকে, কারণ পরিশ্রমকালীন রক্তপ্রবাহের চাহিদা বৃদ্ধি পায় যা পূরণ করতে অধিক পরিমাণ রক্তপ্রবাহের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কায়িক শ্রমের ফলে হৃৎপিণ্ডের অনেক সুপ্ত রক্তনালি আবার কার্যকর হয়ে যায়।
তাই নিয়মিতভাবে কায়িক শ্রমের অভ্যাস করে নেচারাল বাইপাস তৈরিতে হৃৎপিণ্ডকে সহায়তা করা যেতে পারে। তবে কায়িক শ্রম অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় সম্পাদন করলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। ডা. এম. শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও
হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।