আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিজার্ভে চাপ ‘ফেলবে না’ পদ্মা প্রকল্প

পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ডলার লাগবে, তা যোগানোর আশ্বাস কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এতে রিজার্ভে চাপ পড়বে এবং তার ফল হিসেবে অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

এনিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে পরিমাণ অর্থ পদ্মা প্রকল্পে লাগবে, তাতে রিজার্ভে হাত দিতে হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবস্থাপনার প্রধান কর্মকর্তা কাজী ছাইদুর রহমান রিজার্ভ পদ্মা প্রকল্পে যাওয়ার খবরটিই উড়িয়ে দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৬২ বিলিয়ন (১ হাজার ৮৬২ কোটি) ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

অন্যদিকে পদ্মা প্রকল্পে সম্ভাব্য মোট ব্যয় ২৯১ কোটি ডলার।

বিদেশ থেকে কাঁচামাল কেনাকাটায় এই অর্থও যে একবারে লাগবে না, তা বললেন জায়েদ বখত।

“এই অর্থ লাগবে ভেঙে ভেঙে। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো বছরে হয়ত ১০ কোটি ডলার, কোনো বছরে ২০ কোটি। এক বছরে কোনো অবস্থাতেই ৫০ কোটি ডলারের বেশি লাগার কথা না। ”

২৯১ কোটি ডলারের নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে ১৮০ থেকে ২০০ কোটি ডলার বিদেশ থেকে কেনাকাটায় যেত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থ যোগানে সহায়তা করতে গভর্নর আতিউর রহমান আগ্রহ দেখানোর পর কয়েকটি সংবাদপত্র খবর ছাপা হয়, রিজার্ভ চলে যাচ্ছে পদ্মা সেতুতে।

এরপর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “সরকার রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অপরিণামদর্শী। এতে দেশের উন্নয়ন কার‌্যক্রম ব্যাহত হবে। ”

পদ্মা প্রকল্পে রিজার্ভ ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, “এ তথ্য একেবারেই মিথ্যা। রিজার্ভ কোনো খাতে যাওয়ার কোনো পথ নেই।

“যে সমালোচনা করা হচ্ছে, তা একেবারেই অমূলক। অনেকে না বুঝেই বলছেন, আবার কেউ বুঝেও স্বভাবসুলভ সমালোচনা করছেন। ”

রেমিটেন্সের প্রভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ গত কয়েক বছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী।

ছাইদুর রহমান বলেন, “প্রতিদিনই রিজার্ভ বাড়ছে। আজ যে  রিজার্ভ ছিল ( ১৮ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার), তা দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

আমদানি ব্যয় মেটানোর পরও উদ্বৃত্ত থাকা বৈদেশিক মুদ্রার এই সঞ্চয়ন অন্য খাতে ব্যবহারের সুপারিশও রয়েছে। এর মধ্যেই পদ্মা সেতুতে তা ব্যবহারের আলোচনা ওঠে।

পদ্মা সেতুতে অর্থের জোগান কিভাবে হবে, তার পথও দেখিয়ে দেন জায়েদ বখত ও ছাইদুর রহমান।

বিআইডিএসের অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত বলেন, প্রতি বছর ভেঙে ভেঙে যে ডলার পদ্মা প্রকল্পে প্রয়োজন হবে, সেজন্য রিজার্ভে হাত দিতে হবে না। বিদেশি কেনাকাটা করতে সরকার যে ব্যাংকে এলসি খুলবে, সেই ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনেই এলসি খুলতে পারবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান উদাহরণ হিসেবে জ্বালানি তেল কেনার জন্য ব্যাংকগুলোর তিন থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলার কথা তুলে ধরেন।

“বিশেষ প্রয়োজনে যদি কখনো কিছু ডলার প্রয়োজন হয়, তাহলে যে ব্যাংক এলসি খুলবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনে নেবে। সরকারের যদি বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজনও হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা দিয়ে ডলার কিনে নেবে। ”

ছাইদুর রহমানের মতে, চার-পাঁচ বছরে ২০০ কোটি ডলার ব্যাংকগুলো বাজার থেকেই জোগান দিতে পারবে।

রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে।

বুধবার বাজার থেকে সাড়ে ৮ কোটি ডলার কেনা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে (১ জুলাই থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর‌্যন্ত) বাজার থেকে ৩০০ কোটি (৩ বিলিয়ন) ডলার কেনা হয়েছে বলে জানান ছাইদুর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে ডলার কেনায় প্রায় এক বছর ধরে ডলারের দর একই জায়গায় স্থির রয়েছে।

জায়েদ বখত বলেন, “এটা একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে না কিনলে ডলারের দাম কমে যেত।

সেক্ষেত্রে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। ”

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণে মূল অর্থ জোগান দেয়ার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের, তাদের সঙ্গে ছিল এডিবি, আইডিবি, জাইকাও।

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন তৈরি হয়। বিশ্ব ব্যাংক একবার গিয়ে ফিরেও আসে প্রকল্পে, এরপর সরকার তাদের ‘না’ জানিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু তৈরিতে হাত দেয়।




সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।