লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই
একঃ
সমাজে অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশে দুই ধরনের যৌন কর্মী আছে। একদল বাস করে সমাজের বাইরে আরেক দলের অবস্থান আবশ্যিকভাবে সমাজের অভ্যন্তরেই। সমাজের বাইরে যারা বাস করে তাদের মধ্যে আছে আবার তিনটি গ্রুপ। একটি গ্রুপ বিভিন্ন জেলা শহরে অবস্থিত পতিতা পল্লীতে বসবাস করে এবং তাদের ব্যবসাও সেখানেই। পতিতালয়ে বসবাসকারী যৌনকর্মীরা পুরোপুরি পেশাদার মানে তাদের জীবন জীবিকা সম্পূর্ণভাবেই যৌনকর্মের উপর নির্ভর করে।
সমাজের ভেতরে তাদের কোনধরনের অবস্থান যেমন নেই তেমনি যৌনকর্মী বাদে তাদের আর কোন পরিচয়ও থাকেনা। এদের নিজস্বতা বলতেও প্রায় কিছুই থাকেনা। কারন এদের সবাইকে পল্লীর সর্দারনীর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এদের শরীরের মালিক ঐ সর্দারনী, সে তাদের শরীরকে খদ্দেরদের কাছে ভাড়া খাটায়।
সমাজ বহির্ভূত আরেক শ্রেণীর যৌনকর্মী-যারা সাধারনত বড় বড় শহরের বিভিন্ন রাস্তা, অলিগলি, নানা ধরনের উদ্যান, লেকের ধার, নানা ধরনের জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে তাদের খদ্দের সংগ্রহ করে থাকে।
যৌনকর্মীদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে নিম্নশ্রেণীর। । এদের রেটও সবচেয়ে কম। এই ভ্রাম্যমান যৌনকর্মীরা হাতে করে সবসময় পেতে দেওয়ার মত কিছু বহন করে। খদ্দের সংগ্রহ করার পর একটু অন্ধকারে গিয়ে অনেকটা জনসম্মুখেই বা অন্যান্য খদ্দেরদের সামনেই তার নিজস্ব খদ্দেরের সাথে মিলিত হয়।
এদের অনেকেরই আগমন বিভিন্ন যৌন পল্লী থেকে। সরকার যখন যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা না করেই বিভিন্ন যৌনপল্লী ভেঙ্গে দেয় তখন তারা অসহায় অবস্থায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। কেউ কেউ আবার আসে শহরের বিভিন্ন বস্তি থেকে। বস্তির মেয়েরা- যাদের চেহারা বা শরীর স্বাস্থ্য পুরোপুরি বা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে অন্য কোন ধরনের কাজ করতে সক্ষম নয় তারা এসে ভিড় জমায় শহরের বিভিন্ন জংলাকীর্ণ জায়গায়। এদের শারীরিক সম্ভ্রম প্রথমে কিভাবে হাড়ালো সেই কথা বলতে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
যাদের জীবন-যাপনে নূনতম কোন সম্ভ্রম নেই তাদের আবার শারীরিক সম্ভ্রম! শারীরিক সম্ভ্রমের কথা সাধারনত আসে নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদের বেলায়। আর উচ্চবিত্তদের বিলাসী জীবন-যাপনে সম্ভ্রম এতো বেশী যে তাদের আলাদা করে শারীরিক সম্ভ্রমের কোন ধরনের প্রয়োজন পড়েনা।
এর বাইরেও ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে আবাসিক হোটেলের নাম করে চলে জমজমাট দেহ ব্যবসা- ওগুলোতেও আস্তানা গেড়েছে কিছু যৌনকর্মী। এই আবাসিক হোটেলগুলোতে অবস্থানকারী যৌনকর্মীরা প্রায় প্রত্যেকেই ভিন্ন কোন পেশার সাথে জড়িত এবং তাদের ঐ ভিন্ন পেশার আড়ালে তাদের যৌনকর্মী পরিচয় অনেকসময় লুকায়িত থাকে। ফলে তারা সমাজের ভেতরে বসবাস করতে পারে এবং সমাজের কিছু সুযোগ সুবিধাও ভোগ করে থাকে।
তারপরেও এদেরকে সমাজের বাইরে বলছি এই কারনে যে, যদি কোন কারনে তাদের এই যৌনকর্মী পরিচয়টি প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে তারা আর সমাজের ভেতরে অবস্থান সক্ষম হয় না। সমাজ তাদের নিক্ষেপ করে আস্তাকুড়ে। তখন তারা বাধ্য হয় অন্য পেশাটি ছেড়ে দিতে এবং ধীরে ধীরে যৌনকর্মী পরিচয়টি তাদের একমাত্র পরিচয় হয়ে উঠে। এদের অধিকাংশ বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে উঠে আসা গার্মেন্টস কর্মী বা শহরের বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমে নিযুক্ত মেয়ে। যৌন কর্ম করার জন্য সাধারনত এদেরকে কেউ পতিতা পল্লীতে অবস্থানকারীদের মত সরাসরি বাধ্য করতে না পারলেও তারা পরোক্ষভাবে সমাজের দ্বারাই বাধ্য হয় এই পেশায় নামতে।
গার্মেন্টসে বা বিভিন্ন কলকারখানায় যারা কাজ করে তারা সাধারনত যে বেতন পায় তা দিয়ে তাদের শহুরে জীবন নির্বাহ করা অনেক বেশী কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বয়স্ক মা-বাবা, ছোট ছোট ভাই-বোন ও পরিজনের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর দায়িত্বও থাকে তাদের ঘাড়ে। মাস শেষ হলেই তার পরিবারের লোকজন তার দিকে চাতক পাখির মতই তাকিয়ে থাকে। গ্রাম থেকে শহরে তাদের উঠে আসার সাথে সাথেই তারা তাদের সহকর্মী, ফোরম্যান, ম্যানেজার এবং বস্তি এলাকার চিছকে গুন্ডা মাস্তানদের হাতে তাদের শারীরিক সম্ভ্রম হারাতে বাধ্য হয়। এদের মধ্যে আবার অনেকেই তাদের শরীরের সম্ভ্রমটুকু নিজ পরিবার বা গ্রামেই হারিয়ে আসে।
কেউ কেউ তাদের ভন্ড প্রেমিক, চাচাতো, ফুপাতো ভাই, দুঃসম্পর্কের আত্মীয়, অনেকেই এলাকার মাতব্বরদের ছেলের কাছে। তাদের এই ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ করলে যেহেতু এই ফতোয়াবাজ সমাজ সবটুকু দোষ তাদের ঘাড়ের উপরই ঢেলে দেবে এবং সমাজে তার পরিচয় হবে নষ্ট মেয়ে বলে তাই তারা ঘটনাগুলোকে গোপন অসুখের মত বুকের ভেতর চেপে রাখে। শহরে এসে আস্তানা গাড়ার পর তারা পুরোপুরি উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয় যে শরীরটা সে নিজে ধারন করে আছে সেটি তার ভোগের জন্য নয়, শরীরে যখন থেকে যৌবন এসেছে তখন থেকেই এটি পুরোপুরি ভাবে অন্যের ভোগের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে আছে এবং থাকবে যতদিন যৌবন বেঁচে আছে। এখানে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন ধরনের মূল্য নেই। টাকার গায়ে যেমন লেখা থাকে চাহিবা মাত্র বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবেন।
তেমনি যেন তার শরীর! যে যখন তার শরীর প্রত্যাশা করবে সেই ভোগ করে চলে যেতে পারবে। তখন তারা চিন্তা করে শরীরটা যেহেতু অন্যের ভোগের জন্য পুরোপুরি নির্দিষ্টই হয়ে গেছে তাহলে এর মাধ্যমে যদি বাড়তি কিছু টাকা আসে, সেটা নেহাত মন্দ কি! এভাবেই তারা ধীরে ধীরে যৌন কর্মীর খাতায় নিজেদের নাম অজান্তেই লিখিয়ে ফেলে। কারখানার পাশের বিবর্ণ বস্তি থেকে একে একে উঠে আসতে থাকে বিভন্ন আবাসিক হোটেলের সাদামাটা কামরাগুলোতে। এই আবাসিক হোটেলগুলোতে উঠে আসা মেয়েদের মধ্যে যাদের চেহারা এবং স্বাস্থ্য বেশ ভালো, খদ্দেরদের মধ্যে তাদের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। তারা মোটামুটি টাকা পয়সার মুখ দেখতে থাকে এবং শহুরে স্রোতে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী জীবনেও অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
গার্মেন্টস কারখানায় তাদের পাওয়া বেতন তখন খুব গৌণ হয়ে যায়। এভাবেই তারা ধীরে ধীরে পেশাদার যৌনকর্মীর খাতায় নাম লেখায় এবং সমাজ সংসার থেকে ধীরে চ্যুত হয়ে পড়ে। সমাজের বাহিরে অবস্থানকারী যৌন কর্মীদের মধ্যে এদের অবস্থান হয় অনেকটা উপরিভাগে।
সমাজের অভ্যন্তরে অবস্থিত যৌনকর্মীরা সাধারনত দুই ধরনের হয়। শহুরে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত থেকে উঠে আসা মেয়েরা (ছাত্রী, চাকুরীজীবী, গৃহবধু) যারা দেহব্যবসার সাথে জড়িত হয় তাদেরকে সাধারনত কল গার্ল হিসেবে সম্বোধন করা হয়।
শহরের মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত মেয়েদের মধ্যে যারা যৌনকর্মী হিসেবে নাম লেখায় তারা সাধারনত ভোগবিলাসী জীবনের চরম তাড়না থেকেই দেহ ব্যাবসার সাথে জড়িত হয়। তাদের ভোগবিলাসী জীবনের সম্ভ্রমের কাছে শারীরিক সম্ভ্রম খুবই তুচ্ছ মনে হয়। তাদের মনের কথাটা কিছুটা এরকমঃ আমি তো এখানে চুরি করছিনা, এটা কোন ধরনের ডাকাতিও নয়, দূর্নীতির প্রশ্রয় থেকেও দূরে, ঘুষও নেই না কারো নিকট থেকে- সমাজের অন্যান্য আর আট-দশটা স্বাভাবিক কাজের মত সার্ভিস দিচ্ছি টাকা নিচ্ছি। ব্যস চুকে গেলো, এ নিয়ে সমাজের মাতামাতি করার তো কিছু নেই। এদের এই শহুরে সমাজ এটা নিয়ে খুব বেশী মাতামাতি করেনা, কেউ কেউ কথা বলতে চাইলেও ওরা সেটাকে কোনধরনের পাত্তাই দেয়না।
চলচ্চিত্র- টিভি নায়িকা, বিভিন্ন শ্রেনীর মডেল, গায়িকা বা টেলিভিষনের সংবাদ পাঠিকাদের মধ্যে যারা দেহ ব্যবসা করে তারা আমাদের সমাজের সবচেয়ে উচ্চ শ্রেনীর যৌনকর্মী। সিমন দ্যা বেভোয়ার তার বই দ্বিতীয় লিঙ্গ(second sex) এ এদের সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। লেখিকা তার বইয়ে এদেরকে হিথেইরা নামে সম্বোধন করেছেন।
দুইঃ
সমাজে ভিতরে ও বাইরে অবস্থানকারী যৌনকর্মীদের মধ্যে কিছু পেশাগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সমাজের বাইরে অবস্থানকারী পল্লীর এবং ভ্রাম্যমান যৌনকর্মীদের খদ্দেররা হয় সাধারণত নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন।
যৌনকাজে এই শ্রেনীর যৌনকর্মীরা সময় দেয় খুব কম-নেহাত যেটুকু না হলেই নয়। এই কম সময় দেওয়ার পিছনে আবশ্যিকভাবে জড়িত হয়ে আছে একটি অর্থনৈতিক কারন। এদের রেট হয় খুব কম কারন নিম্নশ্রেনী থেকে উঠে আসা খদ্দেরদের পক্ষে এর চেয়ে বেশী রেটে তাদের ভাড়া করা সম্ভব হয় না। আবার ওদিকে যৌনকর্মীদেরকেও তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে যে টাকার দরকার হয় তা যেহেতু এখান থেকেই তুলতে হবে বা পতিতা পল্লীতে অবস্থানরত মেয়েরা প্রত্যেকদিন নির্দিষ্ট পরিমানের টাকা আয় করতে না পারলে পল্লীর সর্দানীর কাছে অত্যাচারিত হতে হয়। আর ভ্রাম্যমান পতিতাদেরও আয়ের একটি অংশ অনিবার্যভাবে চলে যায় পুলিশের হাতে।
কনস্টেবলরা এদের এবং এদের খদ্দেরদের পেছনে সবসময় ফেউ এর মত লেগে থাকে। যৌনকর্ম চালানোর সময় লাঠি হাতে তাড়া করে-হাতে কিছু টাকা পেলে হাতের লাঠিটি ঘুরাতে ঘুরাতে চলে যায়। ফলে তারা বাধ্য হয় প্রত্যেকদিন অনেকজন খদ্দেরের সাথে মিলিত হতে। এই যৌনকর্মীদের মধ্যে যাদের চেহারা সুরত এবং শরীর স্বাস্থ্য তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে কিছুটা ভালো তাদের যদিও খদ্দেরের অভাব এই যৌনপ্রনয় নিষিদ্ধ সমাজে খুব একটা বেশী পোহাতে হয়না। কিন্তু সমস্যা চরমমাত্রায় ঘনীভূত হয়ে উঠে অন্যদের বেলায়।
তারা খদ্দেরদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করার তাগিদে বিভিন্ন রকম আবেদনময়ী ভঙ্গিতে কাপড়-চোপড় পড়ে, মুখের মধ্যে নানা ধরনের সস্তা মেক আপ লাগায়, যৌন উস্কানীমূলক কথা-বার্তা বলে, খদ্দেরদের সার্ট প্যান্ট লুঙ্গিতে টেনে ধরে। প্রথম আসা খদ্দেরদের অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের আবেগপ্রবন কথা বার্তা বলে নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে আসে। অনেক সময় কাতর স্বরে তাদের সস্তা রেট এবং আতিথেয়তার কথা ঘোষণা করতে দেখা যায় তখন তাদের চোখে মুখে ফুটে থাকে এক ধরনের করুন ছাপ। যৌনকর্মবৃত্তি এবং ভিক্ষাবৃত্তি যেন তাদের চোখেমুখে মিলেমিশে অবস্থান করতে থাকে।
আবাসিক হোটেলগুলোতে অবস্থানকারী যৌনকর্মীরা পল্লীর এবং ভ্রাম্যমান পতিতাদের তুলনায় অনেকবেশী ভদ্রস্থ ব্যবহার করে থাকে তাদের খদ্দেরদের সাথে।
আবাসিক হোটেলগুলোতে কোন খদ্দের আসলে হোটেলের ভেতরে অবস্থানকারী দালাল শ্রেনীর কেউ খদ্দেরটিকে নিয়ে প্রথমে যেকোন একটি খালি কামরায় বসায়। তারপর বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরা কিছু মেয়ে সাথে করে নিয়ে আসে। কামরায় এসেই মেয়েরা ভেতরের চৌকিতে সার বেঁধে বসে যায়- কেউ কেউ অবশ্য দাঁড়িয়েও থাকে। মেয়েগুলো কামরায় আসার পরপরই খদ্দেরটিকে তার নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আবেদনময়ী মুখভঙ্গি করে বা শারিরীক ভাষায় শুরু করে দেয় মৌন আহ্বান। খদ্দেরটি মেয়েগুলোর মুখ ও শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে আর ভাবতে থাকে কোন মেয়েটিকে ভাড়া করলে পকেটের টাকাগুলো উসুল হবে।
খদ্দেরটির যে মেয়েটিকে ভালো লাগে সেই মেয়ের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করার সাথে সাথে ঐ আঙ্গুলের ইশারায় নির্দিষ্ট করা মেয়েটি বাদে বাকী মেয়েগুলো ধীরে ধীরে কামরা ছেড়ে চলে যায়। এদের রেট পল্লীতে অবস্থিত মেয়েদের চাইতে বেশী হওয়ার কারনে খদ্দেরদের এরা বেশ খানিকটা সময় দেয়। এদের খদ্দেররা একটু উঁচু শ্রেণীর- সাধারনত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সরকারী অফিসের কেরানী।
সমাজের ভেতরে অবস্থানকারী শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা যৌনকর্মী যাদেরকে সাধারনত কল গার্ল বলে ডাকা হয় তাদের খদ্দেররা হয় সাধারনত বড় বড় ব্যবসায়ী, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে মোটা বেতনের চাকুরী জীবী। এই কল গার্লদের রেট অনেক বেশী এবং এদের খদ্দেরের পরিমান খুব কম।
এদের অনেকেই খদ্দেরের রক্ষিতায় পরিনত হয়। এরা খদ্দেরদের সময় দেয় অনেকবেশী- একরাত-দু রাত। মাঝে মাঝে এরা আবার খদ্দেরদের সাথে সপ্তাহ পনের দিনের জন্য দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যায়।
হিথেইরারা সাধারন মানুষদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে সবসময়। এদের খদ্দেররা আসে সমাজের সবচেয়ে উঁচু শ্রেনী থেকে।
শিল্পপতি, বড় বড় রাজনীতিবিদ, প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক। এদের প্রত্যেকেরই থাকে তারকা খ্যাতি। যখন এদের তারকা খ্যাতি আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে বা অভিনয় জগতে এদের পসার কমে যায় তখন তারা কল গার্লদের স্তরে নেমে আসে। এবং যৌন কর্মী পেশাটাই তাদের একমাত্র পেশা হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান যুগের এরাই সবচেয়ে জ্বলজ্বলে তারকা।
রুপালী পর্দায় এবং টিভি স্ক্রীনে এদের সবসময় দেখা যায় বলে এদের প্রতি মানুষের অন্যরকম একটা মোহ থাকে। এবং এই কারনেই তাদের আবেদনময়ীতা অন্যান্য সাধারন মেয়েদের থেকে অনেকবেশী মনে হয়। এদের যৌনকর্মী পেশাটা যদিও গোপন থাকে তবুও এদের বিষয়টা এই সময়ে এসে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমাজের বাইরে অবস্থানকারী যৌনকর্মীদের সাধারনত পতিতা বলে ডাকা হয়। এদের আরো বেশ কিছু নাম আছে যেগুলো সাধারনত সমাজে গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়- বেশ্যা, মাগী, খানকি, নটি ইত্যাদি বিভিন্ন গালিতে তাদের সম্বোধন।
এবং এদের চেহারায় সাধারনত একটি ছাপ পড়ে যায়। যা দেখেই যে কেউ বলে দিতে পারে এই মেয়ে একজন যৌনকর্মী। এর ফলেই সমাজে ভেতরে প্রবেশ এদের পক্ষে অসাধ্য হয়ে পড়ে। অসুস্থ মাকে দেখতে আসতে হলেও গভীর রাতে নিজেকে আপাদমস্তক হিজাবে ঢেকে আসতে হয় এবং রাত পোহানোর পূর্বেই ত্যাগ করে যেতে হয় সমাজের আঙ্গিনা। তাদের এই যৌনকর্মী নামটি একটি প্রশাসনিক নাম।
সরকারী বা বেসরকারী বিভিন্ন নথিপত্রে এদের কথা উল্লেখ করতে হলে সাধারনত যৌনকর্মী শব্দটি ব্যাবহার করা হয়া থাকে। অনেক বুদ্ধিজীবি বা কিছু কিছু সাহিত্যিক সাধারনত তাদের নিবন্ধেও যৌনকর্মী শব্দটি ব্যবহার করে। কিন্তু সমাজের সাধারন ভদ্রগোছের মনুষরাও এখনও এদের কথা উল্লেখ করতে হলে পতিতা শব্দটিই ব্যবহার করে থাকে। কেন এদের পতিতা বলা হয়? কারন এরা সমাজ থেকে পতিত, এই যৌনকর্মী পরিচয়ে সমাজে এদের কোন স্থান নেই। কিন্তু টাকার বিনিময়ে শরীর বিক্রি করে বলে শুধু মাত্র এরা পতিতা নয়।
এরা পতিতা কারন এরা নিম্নশ্রেনী থেকে উঠে আসা যৌনকর্মী। উচ্চ শ্রেনীর যারা টাকার বিনিময়ে শরীর বিক্রি করে তাদেরকে তো পতিতা বলে সম্বোধন করা হয় না-এরা সমাজ থেকে পতিত নয়। তাদের অবস্থান সমাজে অনেক উঁচুতে। যৌনকর্মীদের এক অংশ সমাজ থেকে পতিত হওয়ার এবং তাদের পতিতা বলে সম্বোধন করার একমাত্র কারন তাদের শ্রেণী অবস্থান। সমাজের কোন স্তর থেকে এসেছে এটাই একমাত্র বিবেচ্যবিষয়।
একই পেশায় নিযুক্ত থেকেও এই যৌনকর্মীরা শুধুমাত্র তাদের শ্রেনীগত অবস্থানের কারনে কেউ কেউ স্থান পায় সমাজের সবচেয়ে উঁচু শ্রেনীতে, তরুন-যুব সমাজের স্বপ্ন আঙ্গিনায় জ্বলজ্বলে তারা হয়ে জ্বলতে থাকে অবিরাম। আর সমাজের সবচেয়ে নিচের তলাতেও আরেকদলের কোন স্থান হয়না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।