আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! টিপটা কপালের মাঝখানে হল কিনা কে জানে ! মীরা আয়নার আর একটু কাছে ঝুকে গেল । একবার মনে হচ্ছে টিপটা ডান দিকে বেশি সরে আছে আর একবার মনে হল যে না ঠিক আছে ।
-কি করছিস মা ?
মীরা একটু চমকে উঠল । একটু অপ্রস্তুতও হল ওর মাকে আসতে দেখে । মীরার মা একটু যেন অবাক হয়েছে এই সাত সকালে মীরাকে সাজতে দেখে ।
অবশ্য সময়টা ব্যাপার না মীরা যে আয়নার সামনে সময় কাটাচ্ছে এটা মীরার মায়ের কাছে একটু নতুন লাগল ।
মীরার পরনের শাড়ির দিকে তাকিয়েও তিনি খানিকটা অবাক হলেন । মীরা অফিস যাওয়ার সময় কখনও শাড়ি পরে না । তাহলে আজকে ? মীরার মা বলল
-তোকে সুন্দর লাগছে রে । অফিস যাবি ?
মীরা বলল
-না মা ।
একজনের বাড়ি যাবো আগে ।
মীরার মার খুব ইচ্ছা হল জানতে কার বাড়ি যাবে কিন্তু জিজ্ঞাস করলেন না । মেয়েকে তিনি যথেষ্ঠ ভয় পান । মীরা বলল
-মা দেখতো টিপটা মাঝ খানে হয়েছে কি না ?
-হয়েছে ।
মীরা আরও কিছুক্ষন আয়নায় তাকিয়ে রইল নিজের দিকে ।
অপু যদি তাকে এই অবস্থায় দেখে নিশ্চই মন খারাপ করে থাকতে পারবে না । অপুর নামটা মনে হতেই মীরার নিজের কাছেই খারাপ লাগল । বেচারার সাথে ঐ দিন একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছিল । আসলে মীরার যখন মাথা গরম হয়ে যায় তখন আশে পাশের কিছুই ওর চোখে পরে না । এই জন্য অফিসের প্রত্যেকটা এমপ্লোয়ীই মীরাকে খুব ভয় করে চলে ।
একে তো মীরা বসের মেয়ে তার উপর এমডি পদে আছে । সমীহ করে চলাটাই স্বাভাবিক ।
কিন্তু অপু ছিল একদম ব্যতীক্রম । অপুকে যে দিন মীরা প্রথম নোটিস করে তখন সবে মাত্র অপু মীরাদের কোম্পানীতে জয়েন করেছে । ঐ মীরা ওর দুজন এম্প্লয়ীকে বকাবকি করছিল ওর কেবিনে ।
এমন সময় অপু কেবিনে এসে হাজির ।
অপুকে দেখে একটু যেন বিরক্ত হল মীরা । ছেলেটা এর আগেও বেশ কয়েকবার ওর কেবিনে এসেছে । কোন বারই ঠিক অনুমুতি নিয়ে ঢোকে না । আজও ঢোকে নি ।
কেবিনের ভিতর ঢুকেই অপু মীরার দিকে তাকিয়ে বলল
-এসির রিমোর্টটা একটু দেখি !
মীরা বলল
-মানে ?
ছোট ছেলেমেয়েদের বোঝানোর জন্য মানুষ যেমন মুখ করে অপু তেমন মুখ করে বলল
-আরে বাবা এসির রিমোর্ট ।
তারপর ডেস্কটার এক কোনে পরে থাকা রিমোর্ট দেখে বলল
-আরে এই তো ।
বলতে বলতেই রিমোর্টটা তুলে নিয়ে এসির জোর বাড়াতে লাগল । মীরা কঠিন গলায় বলল
-আপনি কি করছেন ?
অপু কঠিন মুখকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না নিয়ে বলল
-দেখছেন না এসির জোর বাড়াচ্ছি । ঘরের তাপমাত্রা কমাচ্ছি ।
-কেন করছেন জানতে পারি ?
অপু একটু হেসে বলল
-অবশ্যই জানতে পারেন । আসলে আপনি যখন রেগে যান না মনে হয় যেন আগ্নেগিরির অগ্নিত্পাত হচ্ছে । চারিদিককার তাপমাত্রা বেড়ে যায় । তাই দ্রুত ঠান্ডা করার ব্যবস্থা । আমার কি মনে হয় জানেন গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য আপনার রাগ কিন্তু অনেকাংশে দায়ী !
মীরা প্রথমে কিছুক্ষন অপুর দিকে অবাক তাকিয়ে রইল ।
কেউ যে ওর সাথে এমন কথা বলতে পারে এটা ওর ধারনার ভিতরেই ছিল না । মীরা যে দুজনকে বকছিল তাদের অপু চলে যেতে বলল । প্রথমে একটু দ্বিধা করলেও দুজন কেবিন থেকে বের হয়ে গেল । দুজন বের হতেই অপু বলল
-মিস মীরা এতো রাগারাগির কি আছেন বলুন ? ওরা তো আর রোবট না ! মানুষ ! মানুষ তো ভুল করবেই । তাই না ?
তারপর এসির রিমোর্টটা মীরার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-ঘর খুব ঠান্ডা হয়ে গেছে ।
আমার রীতি মত শীত করছে । আপনার মাথা যদি ঠান্ডা হয় তাহলে এসিটা একটু কমিয়ে দিয়েন ।
মীরা কেবল হাত বাড়িয়ে এসির রিমোর্ট টা নিল । একটা কথা বলল না ।
মীরার সাজগোজ শেষ হয়েছে ।
এখন ওকে বাইরে যেতে হবে । নাস্তার টেবিলে মীরার বাবার সাথে দেখা হয়ে গেল । মীরার বাবাও মেয়ে কে দেখে একটু যেন অবাক হলেন । বললেন
-তোকে আজ অন্য রকম লাগছে ।
মীরা কেবল একটু হাসলো ।
-আয় নাস্তা কর ।
-না বাবা আজ নাস্তা করবো না ।
পেছন থেকে মীরার মা বলে উঠলেন
-সে কি নাস্তা করবি না কেন ?
মীরা মা কে বলল
-মা তোমাকে বললাম না একজনের বাসায় যাবো । নাস্তা ওখানে করবো !
মীরার মা আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না । মীরা যাবার সময় ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবা আজকে অফিসে আসতে একটু দেরি হবে ।
-আচ্ছা মা ! সমস্যা নাই ।
মীরার একটু লজ্জা লজ্জা বাবার সামনে দাড়িয়ে থাকতে । অপুর রিজাইনের বিষয়টা মীরার বাবা খুব ভাল করেই জানেন । উনি নিশ্চই আঁচ করতে পারছেন যে মীরা এই সকাল বেলা কার বাড়ি যাচ্ছে ।
মীরা নিচে নেমে এল ।
মীরাকে নামতে দেখে ওদের ড্রাইভার দৌড়ে এল । মীরা ড্রাইভারকে দেখে বলল
-আজ গাড়ী লাগবে না । আমাকে একটা রিক্সা ডেকে দাও ।
ড্রাভারও খানিকটা অবাক হল । তারপর ছুটে বাইরে চলে গেল ।
দুদিন পরই অপু আবারও এসে হাজির ওর সামনে । ঐ দিন মিরা ওদের একাউন্টেন্ট কে বকছিল । হঠাত্ লক্ষ্য করছে কোথা থেকে যেন বাতাস আসছে । ঠিক মাথায় লাগছে । মীরার প্রথমে মনে হল এসির নিচে দাড়িয়ে আছে এই জন্য হয়তো বাতাস লাগছে ।
কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল একটু আগে বিদুত্ চলে গেছে । আই পি এসে কেবল লাইট গুলো জ্বলছে এসি গুলো বন্ধ । তাহলে বাতাস আসছে কোথা থেকে ?
মীরা বাম দিকে তাকিয়ে দেখে অপু দাড়িয়ে আছে । হাতে ছোট্ট একটা টেবিল ফ্যান । বাতাস ওখান থেকেই আসছে ।
মীরা কিছুক্ষন কঠিন চোখে তাকিয়ে রইল । কিছু বলতে গিয়েও বলল না । ছেলেটার সাহস দেখে অবাক হচ্ছে । একাউন্টেন্ট কে আর বকা হল না ।
মীরা সোজা কেবিনে ফিরে এল ।
কেবিনে এসে রাগে ফুসতে লাগল । গত দিনের পরই মীরা ঠিক করে রেখেছিল অপু খুব বড়সড় আকারে একটা ঝাড়ি মারবে কিন্তু কি এক অদ্ভুদ কারনে অপু সামনে আসলে মীরা কিছু বলতে পারে না । তখন কারনটা না জানলেও এখন মীরা কারনটা খুব ভাল করে জানে ।
-আপা কই যাইবেন ?
রিক্সায়ালার কথা শুনে মীরা যেন বাস্তবে ফিয়ে এল ।
-এইতো সামনে ব্লক সি এর মাথায় যান ।
অপুর বাসাটা ব্লক সি এর মাথায় । মীরাদের বাড়ির ঠিক চার ব্লক আগে । এই বাড়ি চেনা নিয়েও একটা কাহিনী রয়েছে । এক দিন অফিস থেকে বের হতেই অপু ওর সামনে এসে দাড়াল ।
-বাসায় যাবেন না এখন ?
মীরা মুখ শুকনো করে বলল
-জি ।
-কিভাবে যাবেন ?
মীরা খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল
-সাথে গাড়ী আছে । গাড়ীতে করে যাবো ।
-একটা সমস্যা হয়ে গেল যে । আপনার ড্রাইভার কে দেখলাম গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল ।
-মানে ?
-মানে জানি না ।
ফোন দিয়ে দেখেন !
মীরা ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে দেখল গাড়ি সত্যি সত্যি ঘন্টা খানেক আগে বেরিয়ে গেছে । ড্রাইভাই বলল যে অপুই নাকি ড্রাইভার কে চলে যেতে বলেছে ।
মীরার খুব মেজাজ খারাপ হল ড্রাইভারের উপর । খুব জোরে একটা ধমক দিয়ে বলল গাড়ি নিয়ে আসতে ।
মীরা আরো কিছু বলতে যাবে এই সময়ে অপু প্রায় জোর করেই ওর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিল ।
ড্রাইভার এখনও লাইনেই আছে । ড্রাইভার কে বলল আসার দরকার নাই । আমি দেখছি ।
মোবাইলটা মীরাকে ফেরত্ দিতে দিতে অপু বলল
-আচ্ছা আপনার এতো মিষ্টি একটা চেহারা আপনি মানুষকে এভাবে ধমক দেন কিভাবে বলুন । আমার তো বিশ্বাসই হয় না ।
আর আপনি ঐ বেচারাকে ধমক কেন দিলেন ? ওর কি কোন দোষ আছে ?
-আমার কাছে না ও চলে যাবে কেন ?
-আরে আমি বলেছি না ? বকলে আমাকে বকা দেন ।
মীরা চুপ করে রইল । অপু আবার বলল
-আর এখন রাস্তায় যা জ্যাম । ওর আসতে আসতে রাত আটটা বেজে যাবে । তার চেয়ে চলুন রিক্সায় করে যাই ।
সর্টকার্ট রাস্তা আছে তাড়াতাড়ি পৌছানো যাবে ।
-আপনি চলে যান । আমার যাওয়া নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না ।
অপু এবার একটু হাসলো ! অপুর হাসির ভিতর কি ছিল মীরা বলতে পারবে না কিন্তু মীরার লক্ষ্য করলো যে ওর রাগ কমতে শুরু করেছে । অপু বলল
-তা বললে তো হবে না ।
আমার জন্য যেহেতু আপনার গাড়ি চলে গেছে এটা আমার দায়িত্বের ভিতরে পরে আপনাকে বাসায় পৌছে দেওয়া !
মীরা অপু সাথে রিক্সায় উঠল । সত্যি বলতে কি মীরার খুব একটা খারাপ কিন্তু লাগে নি !
অপু কথা বলেই যাচ্ছিল । ছেলেটা এতো কথা বলতে পারে ।
ঠিক অপু ওদের বাসার সামনে এসে নেমে পড়ল । নামার পর রিক্সায়ালা কে বলল
-মামা ! রিক্সা ভাড়া এই ম্যাডাম দিবে ! ইনি হল আমার বস ! ঠিক মত নিয়ে যাবেন ।
আর চার ব্লক পিছনে ইনার বাসা !
রিক্সা চলতে শুরু করলো। মীরা অনেক বার ভাবলো যে পিছন ফিরে তাকাবে না । কিন্তু নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না কিছুতেই । রিক্সা পিছন দিয়ে তাকিয়েই ফেলল ।
তকিয়ে দেখে অপু ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
হাসি মুখে । তারপর ওর দিকে হাত নাড়লো !
মীরা সঙ্গে সঙেই মুখ ঘুরিয়ে ফেলল । নিজের মনে নিজেই কেই খানকক্ষন বকাবকী করল ।
বার বার মন কে শাসন করে বলল কেন তাকালে তুমি ছেলেটার দিকে ?
কোন দরকার ছিল না !!
মীরা তখন না জানলেও এখ জানে যে কিছুটা তো দরকার ছিলই !
রিক্সা থেমে গেছে ! অপুদের বাড়ির সামনে চলে এসেছে । এই পর্যন্তই মীরা চেনে ।
ঠিক মত জানেও না অপু কোন তলায় থাকে ! দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে হয়তো ।
দারয়ান কে বলতে জানা গেল । অপুদের বাসা তিন তলার ! দরোয়ান বলল থ্রী এ তে অপুরা থাকে !
মীরা লিফটে উঠে ৩ নাম্বর বোটামটা টিপ দিল । এতো ক্ষন ঠিক ই ছিল কিন্তু এখন মনে র ভিতর কেমন জানি লাগছে !
আচ্ছা অপু কি ওর উপর এখনও রাগ করে থাকবে ?
থাকতে পারে ?
ঐদিন মীরা অপুর সাথে যেমন আচরন করেছে বেচারার মুখটা এটুকুটু হয়ে গেছি । সব সময় হাসি খুশি থাকা ছেলেটা এমন মন খারাপ করে ওর কেবিন থেকে বের হল !
অপুর সাথে রিক্সায় চড়ার পর থেকেই মীরার মনের ভিতর কেমন একটা অনুভুতি হচ্ছিল ! বিশেষ করে ছেলেটার গায়ের গন্ধটা ও খুব ভাল করে অনুভব করতে পারছিল ।
তারপর ওর ফিরে তাকানোটা !!
এক প্রকার মন ভাল নিয়েই অফিসে হাজির হয় । কিন্তু অফিসে ঢুকে মীরার কানে বেশ কিছু কথা আসে । সব গুলোই অপু আর মীরাকে কেন্দ্র করে । অফিসের অনেকেই নাকি অপর সাথে মীরাকে রিক্সায় চড়তে দেখেছে । মীরা গম্ভীর হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষন !
মীরা অনুভব করলো ওর রাগ বাড়তেছে ।
ঠিক সেই সময় অপু এসে হাজির । আজ আবার খালি হাতে আসে নাই । এক ডালি চকলেট নিয়ে এসেছে !
অপুর হাতের চকলেটের ডালিটা দেখে মীরার কেন জানি রাগটা আরো একটি বেড়ে গেল ! অপু অবশ্য এসবের কিছুই জানে না । হাসি মুখে এসে মীরার টেবিলের উপরে চকলেটের ডালিটা রাখলো ! বলল
-মিস মীরা ! আপনার জন্য !
ঠিক এটাই যেন বাকি ছিল । মীরার ভিতরে যেন বোমা ফাটলো !
-আপনি অফিসটা কে কি পেয়েছেন ! ফ্লাটিং করার জায়গা ! আপনাকে এতোদিন কিছু বলি নি বলে মাথায় উঠেছেন ! এই সব মেয়ে পটানো কাজ আপনি ফারদার আমার সামনে করবেন না ।
এরপর যদি দেখি সোজা ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব ! আর এই চকলেট কেন এনেছেন ?
এই কথা বলতে বলতে মীরা চলেটের ডালিটা ছুড়ে ফেলে দিল !
ফেলে দিয়েই মীরার মনে হল যেন একটু বেশিই হয়ে গেল । মীরা বাইরে তাকিয়ে দেখে সবাই খানিকটা অবাক হয়েই মীরার কান্ড দেখছে । মীরা এবার অপুর দিকে তাকিয়ে দেখলো অপুর মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে । যেখানে সব !
অপু আসতে আসতে পড়ে থাকা চকলেট গুলো কুড়ালো ! তারপর কেবিন ছেড়ে চলে গেল ।
ঐদিন বিকেল বেলাই অপু রিজাইন করে চলে যায় !!
পরদিন মীরা যখন অফিসে আসলো সবার মুখই কেমন থম থমে ছিল ।
সত্যি কথা বলতে কি মীরার নিজেই কি যেন মিস করছিল । কোন কাজেই যেন মন বসছিল না । তারপর মীরার পিএ যখন ওকে বলল
-ম্যাম একটা কথা বলবো আপনকে ?
-বল !
পিএ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-অপু স্যার আপনাকে আসলেই অনেক পছন্দ করে ! আপনার কালকের ও আচরনে তিনি ......
মীরা কিছু বলতে গিয়েও যেন বলল না । মীরার নিজেও কাল থেকে কেবল ঐ একই কথা মনে হচ্ছে !! অপু কে ছাড়া কেমন সব কিছু ফাকা ফাকা লাগছে !!
মীরা দুবার কলিংবেল বাজিয়েছে । তিন বার বাজাতে যাবে ঠিক তখনই দরজা খুলে গেল ।
মাঝ বয়সী এক মহিলা । মীরাকে দেখে বলল
-কাকে চাই ?
মীরা একটু ইতস্তত করে বলল
-এটা অপু দের বাসা না ?
-হ্যা ! তুমি কে ?
মীরা এখন কি বলবে ?
আসলেই তো ও কে ? ও অপুর কি হয় ?
মীরা বলল
-আমি মীরা ! অপু কি আছে ? ওর সাথে একটু দেখা করা যাবে ?
-এসো ভিতরে ! কি নাম বললে মীরা ?
মীরা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
-জি মীরা !
-অপু বস ?
মীরা একটু মাথা নিচ করে বলল
-ছিলাম । ও গত পরশুদিন আমাদের অফিস থেকে রিজাইন করেছে !
মাঝবয়সী মহিলা বলল
-আমি জানি ! এসো আমার সাথে !
মহিলা ওকে রান্না ঘরের দিকে নিয়ে গেল । তারপর বলল
-আমি অপুর মা হই ! অপু এখনও ঘুমাচ্ছে ! আসলে কাজ কর্ম নি তো তাই বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে ! আসো তোমার কিছুক্ষন গল্প করি ! ও উঠলে তারপর না হয় একসাথে নাস্তা করা যাবে !
দুদিন ধরে অপু ঘুম খুব ভাল হচ্ছে । চাকরি নেই তাড়াতাড়ি ওঠার কোন ঝামেলা নাই ! ঘুম ভাঙ্গার পরেও কিছুক্ষন চুপ করে শুয়েই রইলো !
সকাল বেলা এক কাপ চা খাওয়ার অভ্যাস ! একবার একটু ডাক দিলেই অপু মা চা নিয়ে আসবে ।
অপু মনে মনে ভাবলো যে এখনই চা খাবে নাকি আরো একটু ঘুমাবে !
নাহ !
এখনই চা খাওয়া যাক !!
-মা !! চা দাও তো !!
জোরে একবার চিৎকার দিয়ে বলল !
তারপর আবার খানিকটা শুয়ে পড়লো !!
-এই নিন চা !
অপুর মনে হল মনে হয় স্বপ্ন দেখছে ! মীরা ওর সামনে দাড়ানো চা নিয়ে !!
মীরার দিকে কিছুক্ষন চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো ! মীরা আজ শাড়ি পরেছে । আগে কোন দিনই মীরাকে ও শাড়ি পরা অবস্থায় দেখেনি !!
অপু মোটামুটি সিওর হয়ে গেল যে ও স্বপ্নই দেখছে ! এটা তো হতেই পারে না ! আসলে মীরাকে নিয়ে ইদানিং এতো ভাবছে যে সব খানে কেবল এই, এই মেয়েটাকেই দেখছে !
-কি হল চা নিন !
এই মেয়ে দেখি স্বপ্নের ভিতর এসেও ঝাড়ি মাড়ে !!
অপু আস্তে করে চায়ের কাপটা নিল । চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দেখল চিনি কম হয়েছে !
মীরা বলল
-কি এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন ? চায়ে চিনি কম হয়েছে ?
-হুম !
-অভ্যাস করেন ! আমার হাতের চা খেতে হলে চিনি কমই খেতে হবে !
অপু আরো খানিকটা কনফিউজড হয়ে গেল । সত্যি মীরা নাকি ?
কিন্তু তা কি করে হয় ?
কেমন করে হয় ?
অপু মীরাকে ডাক দিল !
-মীরা !
-হুম !!
-সত্যিই তুমি ? নাকি স্বপ্ন দেখছি !!
মীরা কি যেন ভাবলো ! তারপর অপু আর একটু কাছে এসে ওর হাত ধরলো !! অপুর চোখে সাথে চোখে মিলিয়ে বলল
-তোমার কি মনে হয় ?
অপু বলল
-যদি স্বপ্ন দেখি তাহলে এই স্বপন যেন কখনই না ভাঙ্গে !
-আর যদি বাস্তব হয় ?
অপু কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়েই রইলো !
মীরা বলল
-জলদি রেডি হও ! নাস্তা কর ! তারপর অফিস চল ! ঠিক ! আজ তোমার অফিসে খবর নেব !
অপু আসেলই কিছু বুঝতে পারছে না ! অবশ্য অপু আর কিছু বুঝতে চায়ও না ! মীরা ওর সামনে রয়েছে ! ওর আর কিছু বিঝার দরকারও নাই !! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।