জহির রায়হানের স্বপ্নমানসের চলচ্চিত্র 'একুশে ফেব্রুয়ারী' কি কখনো নির্মাণ হবে না? চলচ্চিত্রটি কি আদৌ আলোর মুখ দেখবে না? এমন প্রশ্ন চলচ্চিত্রকার সুচন্দার। অনুদানের মতো সরকারি সহযোগিতা পেলে চলচ্চিত্রটি নির্মাণে আগ্রহী বলেও জানিয়েছেন তিনি। সুচন্দা বলেন, 'মহান ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় জহির রায়হান একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এর জন্য সার্বিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রটির নাম ঠিক করা হয়েছিল 'একুশে ফেব্রুয়ারী'।
চিত্রনাট্য তৈরি ও জমা এমনকি পাত্র-পাত্রীও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এফডিসি থেকে চিত্রনাট্যটি উধাও হয়ে যায়। প্রশাসন মুখে কুলুপ অাঁটে। ফলে চলচ্চিত্রটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ' সুচন্দা জানান, ১৯৬৫ সালে জহির রায়হান চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন এবং কাহিনী লিখেন।
একই বছর শিল্পী মুর্তজা বশীরকে চিত্রনাট্য তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার লেখা গল্পটি ছিল এরকম_ চারটি পরিবার সমাজের চারটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করবে। একটি উচ্চবিত্ত, একটি মধ্যবিত্ত, একটি শ্রমিক ও একটি কৃষক দম্পতি, যারা ঘটনাক্রমে বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিতে এমন একটি স্থানে একত্রিত হবে যেখানে ছাত্রদের মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে। গুলির শব্দের পরপরই একটি কাক আর্তকণ্ঠে উড়বে গোটা ঢাকা শহরের আকাশে। ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে জহির রায়হান চিত্রনাট্যটি এফডিসি স্টুডিওতে জমা দেন।
নবারুন ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিতব্য এ চলচ্চিত্রের জন্য চরিত্র নির্বাচনও চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন তিনি। এতে অভিনয় করার কথা ছিল_ রহমান, শবনম, সুচন্দা, কবরী, সুমিতা, আনোয়ারা, খান আতা প্রমুখ। সুচন্দা জানান, চিত্রনাট্যটি জমা দেওয়ার পর প্রশাসন এটি অনুমোদন দিতে আপত্তি জানায় এবং চাওয়া সত্ত্বেও চিত্রনাট্যটি তাকে আর ফেরত দেওয়া হয়নি। পরে জানানো হয় এটি হারিয়ে গেছে। চিত্রনাট্যটি খুঁজে পেতে এবং অনুমোদন লাভে বারবার চেষ্টা করেও জহির রায়হান ব্যর্থ হন এবং এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে তিনি বলেছিলেন, স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে মনে হচ্ছে আমার একটি স্বপ্নের মৃত্যু হলো।
সুচন্দা বলেন, সাময়িকভাবে হতাশ হলেও 'একুশে ফেব্রুয়ারী' নির্মাণের ইচ্ছা তিনি কখনোই পরিত্যাগ করেননি। জহির রায়হান সব সময়ই বলতেন, ভাষা আন্দোলনের মর্মকথা নিয়ে আমি বাঙালি জাতির দরবারে কোনো না কোনো দিন হাজির হবই। সুচন্দা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ৪৩টি বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। আমি তার স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিয়ে যেতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা।
সরকার যদি এ জন্য অন্তত অনুদানের ব্যবস্থাও করে দেয় তাহলে আমি কাজটি শুরু করতে পারব। তিনি বলেন, 'একুশে ফেব্রুয়ারী' ছিল জহির রায়হানের শিল্পমানসের সৃজনশীল আবেগের অফুরন্ত উৎস। আমি তার স্বপ্ন পূরণ করে যেতে চাই। চলচ্চিত্র বোদ্ধারা আক্ষেপের সুরে বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সোপান ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ভাষা আন্দোলন। অথচ এই বিষয়টি নিয়েই স্বাধীন দেশে এখন পর্যন্ত কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ না হওয়া সত্যিই দুঃখজনক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।