ভারতে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গুন্ডে’ ছবিতে বাংলাদেশের ইতিহাসকে ব্যাপকভাবে বিকৃত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যশরাজ ফিল্মের ব্যানারে ১৪ই ফেব্রুয়ারী মুক্তি পাওয়া ছবিতে দেখানো হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ হিন্দুস্থান ও পাকিস্তানের মধ্যে ৩য় যুদ্ধ শেষ হয়েছে। ৯০ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পণ করে হিন্দুস্তান আর্মির কাছে আর এর মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় নতুন এক দেশ ‘বাংলাদেশ’।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রীতিমত ঝড় উঠেছে। সেই সাথে ভারতের কাছে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যাখ্যা চাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
ওয়ারিশ আজাদ নাফি নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন-
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা মিথ্যাচার দিয়ে শুরু হয় মুভিটা,সোজা কথা বাংলাদেশ হচ্ছে ইন্ডিয়ার সৃষ্টি। বাংলাদেশের জন্ম নিয়ে এই জঘন্য মিথ্যাচার ওদের সেন্সর বোর্ড আটকে দেয়নি। তারমানে ভারতীয় সরকারের এতে কোন প্রবলেম নেই। তিরিশ লক্ষ শহিদ লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা কে এমন অপমান আর কেউ করেনি।
আরেকটা প্রশ্ন ভারতীয় সরকারের অনুমতিতে মুভিটি প্রদর্শিত হচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশ সরকার কি আনুষ্ঠানিক ভাবে এর ব্যাখ্যা চাইবে না ? সরকারের কাছ থেকে তীব্র প্রতিবাদ চাই।
মুভির ওই সিকোয়েন্স টি বাদ দেয়ার দাবি জানানো হোক। আর জনগণ মানে আপনারা কি করবেন তা আপনাদের ব্যাপার।
একেএম ওয়াহিদুজ্জামান লিখেছেন, “১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানে র যুদ্ধে ভারত জয়ী হয়। ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের কাছে আত্মসমর্পন করে! ভারত এই যুদ্ধ জয়ের ফলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়!”
[ভারতীয় সিনেমা গুন্ডেতে বর্নিত ইতিহাস]
কী আর করা? মুক্তিযুদ্ধে যখন নিজেদের কোন অংশগ্রহণ নাই, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গেলেই যখন এক অখ্যাত মেজরের স্বাধীনতা ঘোষনা আর বীরত্বগাঁথা চলে আসে, তখন মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্বটাও ভারতের হাতে তুলে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
উনারা যারা মুক্তিযুদ্ধে যান নাই, তাদের জন্য চেতনাযোদ্ধা হবার যৌক্তিকতা সেক্ষেত্রে ঘাটে পানি পায়।
‘জন্মযুদ্ধ’ ও একটা বৈধতা পায়। আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস হবে, ‘১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানে র মধ্যে এক জন্মযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাস পর বাংলাদেশের জন্ম হয়। ’ আর যুদ্ধে শহীদ লাখো বাংলাদেশীর রক্তমাখা মাটি ছিলো পেছনের লাল পর্দা।
সংষ্কৃতি মন্ত্রী কী এই সব ইতিহাস ভিত্তিক সিনেমা দেখানোর জন্যই ভারতীয় সিনেমা আমদানী করার অনুমতি দিচ্ছেন!
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব অঞ্জন রায় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন-
ভারতীয় গুন্ডে চলচ্চিত্রটি আমি দেখিনি।
লোকমুখে এটির কাহিনীর কিছু অংশ শুনেই হতবাক হয়ে গেছি। যারা এটি দেখেছেন তাদের কাছে থেকে জানলাম, এখানে বলা হয়েছে-
‘১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানে র যুদ্ধে ভারত জয়ী হয়। ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে! ভারত এই যুদ্ধে জয়ী হয় এবং ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়!’
এটুকু শুনেই আমি হতবাক। এই ইসূতে আপোস করতে জানি না, করবো না কোনোদিন। আর সেই কারণেই এই বিষয়ে দাবি করছি, সরকারি শক্ত বক্তব্য।
এই ইস্যুতে দেখতে চাই, তাদেরই প্রতিবাদ- যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। আশা করি, কোনো দলীয় সীমারেখার মধ্যে নয়- সবাই সোচ্চার হবেন। একই সাথে যারা এই ইস্যুটিকেও ক্যাশ করে চেষ্টা করবেন ভারত বিরোধী রাজনীতির ধুয়া তুলে পানি ঘোলা করার, তাদের প্রতিও নজর রাখতে হবে। কারণ দেশের প্রতি অসম্মানের প্রতিবাদে আমরা সোচ্চার হতে দ্বিধান্বিত নই, কিন্তু আমরা তাদেরও চিনি যারা এই ইস্যুগুলোকে নিয়ে নষ্ট খেলা খেলেন- যারা আমাদের আবেগের পিঠে সওয়ার হয়ে নিজেদের আখের গোছান। ’
আরেক ব্যবহারকারী আসিফুজ্জামান পৃথিল লিখেছেন-
গুন্ডে নিয়ে সবার আলোচনা দেখে সিধান্ত নিয়েছিলাম, না দেখে কোন মন্তব্য করবো না।
তাই রাতেই যশ রাজ ফিল্মসের নতুন মুভিটা দেখলাম।
প্রথমেই বলি, ইতিহাস বিকৃতি ধারাবাহিক ভাবেই হচ্ছে। এটা তারই ধারাবাহিকতায় তৈরি ছবি। প্রথমেই বলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নাকি ভারত পাকিস্থান ৩য় যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারত জিতলে নাকি জন্ম হয় বাংলাদেশের!
সবার এই জায়গাতেই আপত্তি! কিন্তু পুরোটা দেখলে বুঝবেন আমাদের কি সূক্ষ্ম ভাবেই না অপমান করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারন মানুষ অস্ত্র চোরাচালান সহ নানামুখী অপরাধে মেতে উঠেছিল!
এই দেশের মানুষ কয়লা চোর!এবং শেষ অবধি এই দেশের মানুষ নিজেদের ভারতীয় মনে করে, এবং নাগরিকত্ব পেতে সব কিছুই করতে পারে।
আলমগীর কবীর নামের আরেকজন স্ট্যাটাসে লিখেছেন-
ছবিটার শুরুতেই ভয়েস ন্যারেশন, যার বাংলাটা এরকম-
‘১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১, শেষ হলো ভারত পাকিস্তানের তৃতীয় যুদ্ধ। প্রায় নব্বইহাজার পাকিস্তানি ফৌজ আত্মসমর্পণ করলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে সেদিন। এটাছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণ। এই যুদ্ধের ফলে জন্ম নিলো একটি নতুন দেশ, বাংলাদেশ।
ভারতীয় সৈন্য রা যখন ঢাকা ছাড়ছিলো……… ‘
তো এতটুকু শুনে আর বাকিটা শোনার আগ্রহ পেলাম না। চলচ্চিত্রটির পরিচালক একজন বড়মাপের লোক। তিনি কোনো পড়াশুনা ছাড়া এই লাইন গুলো দিয়ে ‘গুন্ডে’ মুভি শুরু করেছেন, তা আমি মানতে পারছি না। তাই আপাতত রাগটা গায়ে জমাচ্ছি।
নো বডি পয়েন্টস দ্য ফিঙ্গার এট আওয়ার লিবারেশন ওয়ার।
কেউ ম্যানিপুলেশন করতে পারে না আমাদের ইতিহাস। কড়া প্রতিবাদ চাই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। ৯ মাস পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর বলিউড যখন প্রচার করবে এটা ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ, আমার মনে হয় না আর মিন মিন করার কোনো উপায় আছে। ইতিহাস বর্গা দেই নাই, যে যার খুশি মত তা বদলাবে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রতিবাদ করলাম এই ইতিহাস ধর্ষনের।
আমরা হতে পারি খুব ছোট্ট একটা দেশ, কিন্তু আমাদের অহম তোমাদের ভূমির আয়তনের থেকেও বড়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।