ক্যানন এস ১১০
যখন প্রথম ডিএসএলআর কেনার ইচ্ছে হয়েছিল কেন যেন নিকন ছাড়া অন্য কোন কিছুর কথা মাথাতেই আসেনি। যদিও তাঁর আগে আমি চার বছর এসএলআর ব্যাবহার করেছি। আমার মিনলটা ক্যামেরাটা আসলেই ভাল ছিল। ছবি তোলা আর হয়না এটা দিয়ে। পরে রয়েছে আলমারির কোন এক কোণায়।
মাঝে মাঝে তাকাই আর ভাবি, ডিজিটালের কাছে ম্যানুয়ালের সমর্পণ কিভাবে অবশ্যম্ভাবী হয়ে ধরা দিল! ম্যানুয়াল ক্যামেরা, ফিল্ম এর মজা, প্রিন্ট করার আনন্দ,বেদনা- মাত্র তিন দশকের মাঝেই সেগুলির কবর রচনা হয়ে গেল। ডিজিটালই এখন আলোকচিত্রের জগতে রাজা মহারাজ!
ডিজিটাল কমপ্যাক্ট ক্যামেরা একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল। গত পাঁচ ছয় বছর আগে আমাদের দেশেও অনেক মধ্যবিত্তের হাতেই এগুলি দেখা গেছে। এখনও এর আবেদন কমেনি। তবে ইউরোপে স্মার্ট ফোনের কাছে বেশ মার খেতে দেখছি এই কমপ্যাক্ট ক্যামেরাকে।
আগামী পাঁচ ছয় বছরে এর কি অবস্থা দাঁড়ায় তা আর বলা যাচ্ছেনা! হয়ত ঠিক এই কারণেই অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে এই কমপ্যাক্ট জগতে। সবাই চেষ্টা করছেন কম্প্যাক্টের আকৃতি ছোট রেখে এর মাঝে খানিক বড় আকারের সেন্সর কিভাবে ঢুকিয়ে দেয়া যায়! সেন্সর একটু বাড়ালে অনেক সুবিধে। এই ক্যামেরাগুলিকে আগে অ্যাডভানস কমপ্যাক্ট বলা হত। অবশ্য এই লেখকের মতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এইসব ক্যামেরাই সাধারণ কমপ্যাক্ট ক্যামেরা হিসেবে গন্য হবে। কিংবা আদৌ এদের কোন অস্তিত্বই থাকবে কিনা কে জানে! স্মার্ট ফোন এখন একদম রাক্ষসের মতন এক দানব।
আবার অন্যদিকে সম্ভাবনার বিপুল এক দুয়ারও বটে। এর কাছে এইসব কমপ্যাক্ট আর কতদিন যে টিকবে! এইজন্যই নতুন প্রযুক্তির আমদানি না হলে এদের সলিল সমাধি হতে বেশী আর বাকি নেই!
সে যাই হোক, বছর দুই আগে আমি একটি কমপ্যাক্ট ক্যামেরা কিনি। নিয়মিত ডিএসএলআর ব্যাবহারকারি হওয়া সত্ত্বেও একটি কমপ্যাক্ট কেনার খায়েস হয়েছিল কেন আমার? এর একটিই কারণ। কমপ্যাক্ট ক্যামেরা সহজেই প্যান্টের পকেটে ঢোকানো যায়। এটি নিয়ে নিয়মিত অফিস করা যায়।
অফিসে আসা যাওয়ার পথে কত কিছুই তো চোখে পড়ে। ঐযে বালিকাটি ফুল হাতে অপেক্ষা করছে কোন এক সড়কের মোড়ে, ঐযে মাছের বাজারে বড় ভিড় আজ, ঐযে মেয়েটি কোন এক উদাসি চোখে 'বাহির পানে চোখ মেলেছে,' কিংবা কোন এক গাড়ির ভাঙ্গা কাঁচ, কিংবা কোন এক ভাঙ্গা বাড়ির ওপর পরা শেষ বিকেলের আলো, কিংবা অফিসের জানালা দিয়ে দেখা নির্মাণ শ্রমিক, এক রিক্সাচালকের ফোনে কথা বলে যাওয়া, অফিসের কলিগের উদ্ভট সাজ! কত কত সম্ভাবনাময় আলোকচিত্র মুহূর্ত, কত কত গল্পের সন্ধান। শুধু ডিএসএলআর দিয়ে কি এই গল্পের প্রাত্যহিক বয়ান সম্ভব? তাছাড়া এই ভারী ক্যামেরাগুলি তো প্রতিদিন বহন করাও যায়না। মুশকিল হল, সাধারণ কমপ্যাক্ট দিয়ে ছাতার মাথা ভালো কোন ছবিই তোলাই যায়না। একবারে সাদামাটা রঙ, বিচ্ছিরি কন্ট্রাস্ট, ডায়নামিক রেঞ্জ এত কম যে যাই তোলা হয় তাই কেমন মনমরা হয়ে বসে থাকে।
আর একটু আলো কম থাকলে তো কথাই নেই। কেমন গোল গোল আকৃতির স্পট ইমেজ জুরে বসে থাকে। অসহ্য!
তো এমন ক্যামেরা নির্মাণ করলে কেমন হয়, যার সেন্সর সাইজ একটু বড় রেখে ইমেজগুন আরেকটু বাড়ানো যায় আবার একইসাথে পকেট সাইজও থাকল। এমন চিন্তা থেকে প্যানাসনিকের এল সিরিজের পরই বাজারে এল ক্যাননের এস ৯০, আর আমি কিনলাম ঠিক তার পরের ভার্সন এস ৯৫ ক্যামেরাটি। এই ক্যামেরাগুলি দেখতে ভারী সুন্দর।
টিপটপ, মনোরম। আর ব্যাবহার করে অনেক আরাম। এস ৯৫ এর ইমেজ গুন আমি ভাল পেলাম। ভাল মানে নিশ্চয়ই ডিএসএলআর এর মতন নয়। আর আমি তা নিশ্চয়ই আশাও করিনি।
ভাল মানে প্রত্যাশামাফিক ভাল আরকি। যখন প্রথম কিনেছি এস ৯৫ আমি খুব অবাক হতাম স্বল্প আলোয় এই ছবিগুলির ইমেজগুন দেখে। প্রথমে তো এলসিডিতে দেখে মাথা নষ্ট হয়ে যেতো, যদিও পরে কম্পিউটারের পর্দায় সামান্য ভোঁতা হয়ে যেত একই ছবি। তারপরেও 'র' সুবিধে আছে বলে ছবিকে খানিক এদিক ওদিক করে নেয়ার সুযোগ ছিল বিস্তর। তবে দেখলাম ভিডিও খুব ভালো হয়, একবার এক্সপোজার একটু বাড়িয়ে দিয়ে আনন্দ আপা আর বাঁধনের কয়েকটি গানের ভিডিও করলাম।
ওমা, দেখি গানের সাউন্ড রেকর্ড দুর্দান্ত এসেছে, আর হবে নাই বা কেন, এর যে স্টেরিও সাউন্ড! আবার ইমেজ গুনও চমৎকার এসেছে। মনে মনে খুব আপ্লুত হয়েছিলাম। আর একটা মজা হল এই ক্যামেরার লেন্সের ধারে একটা রোটেটিং রিং আছে যা একটি কনট্রোল রিং হিসেবে কাজ করে। তার মানে এই ক্যামেরার আছে দুটি কন্ট্রোল ডায়াল। আরে আরে, আমার ডি ৪০ ক্যামেরাতেও তো তা ছিলনা।
ধন্যবাদ ক্যাননের প্রকৌশলীদের।
তবে ক্যামেরাটি নিজের কাছে না রেখে বাঁধন মানে আমার স্ত্রীকে দিয়ে দিলাম ব্যাবহারের জন্য। কিন্তু এবার আমার হবে কি? আমার জন্যেও তো একটা দরকার। এর দুই বছর কেটে যাবার পর আবার কিনলাম এস ১১০, হাতে এল মাস খানেক আগে। দুটি ক্যামেরাই আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনেছি।
এস ১১০ এর সর্বসাকুল্যে দাম পড়ল $১৯০ বা ১৬,০০০ টাকার কাছাকাছি। সস্তায় পেলাম কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অনেক ধরণের ডিল পাওয়া যায়, স্বল্পমূল্যে বাজারে ছেড়ে দেয় কাটতি বাড়ানোর জন্য। আমিও লুফে নিয়েছি। বলা বাহুল্য আমি এস ৯৫ও কিনেছিলাম ওই একই দামে!
প্রথমে ক্যানন এস ১১০ এর কয়েকটি স্পেসিফিকেশন জানিয়ে দিই।
এস ১১০ বলা চলে এস ৯৫ এর জমজ ভাই।
মানে বাইরে থেকে দেখতে প্রায় একই রকম। ফুল মেটাল। এর দুটো রঙ আছে, কালো এবং সিলভার। আমি সিলভারটাই অর্ডার দিয়েছিলাম। যাই হোক, লেন্সে খানিক পার্থক্য আছে দুই ক্যামেরার মাঝে।
এস ৯৫ ছিল ২৮- ১০৫, এস ১১০ এ দাঁড়াল ২৪-১২০, আমার সুবিধে যেটা হল তা হচ্ছে আমার কাছে ২৮ মিমির চাইতে ২৪ মিমি অনেক কাংখিত। আমার কাছে শুধু এই একটি বৈশিষ্ট্যই দুটি ক্যামেরার মাঝে পার্থক্য তৈরি করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট। বডি কন্ট্রোল সব আগের মতই। ইমেজগুনের মাঝে আমি কোন তফাতই বুঝতে পারছিনা এখন অব্ধি। এই এস ১১০ এ একটি নতুন প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়েছে।
ওয়াই ফাই। কিন্তু মুশকিল হল আমি এখন পর্যন্ত এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারলাম না। মানে এটি কিভাবে ব্যাবহার করব তাই বুঝলাম না। এটিকে মেন্যুর মাঝে রেখে কিভাবে ঘুটঘাট করে রেখেছে ক্যানন সায়েব। অযথা জটিল করার কোন মানে হয়? আরে বাবা, দিয়েছিস যখন তখন মেন্যুতে কেন, অপশনটা বডিতে রাখলে কি হয়! ও আর একটি জিনিষ আছে যেটি আগে ছিলনা।
টাচ স্ক্রিন। টাচ স্ক্রিনটা অবশ্য বেশ আরামদায়ক।
তবে যেমনটি বলেছি আগেই, এইসব ক্যামেরা ব্যাবহার করে বড় আরাম। বেশ দ্রুতগতির। আবার ইমেজ স্টেবিলাইজেশন আছে।
অটো আইএসও বেশ ভালো কাজে দেয়। রঙের ক্ষেত্রে এর একটা ভিভিড অপশন আছে, সেটিও ভালো। এদের জেপেগ ইমেজগুলিও ভালই আসে। আমি মাস খানেক হল ক্যামেরাটি ব্যাবহার করছি। এস ৯৫ আর এস ১১০ এর ইমেজগুন একদম আইডেন্টিকাল মনে হল আমার কাছে।
সেখানে যেমন রঙ পেয়েছি এখানেও একই রঙ পেলাম। এর এইচডিআর অপশন এখনও ব্যাবহার করিনি। জানিনা কেমন হয়। আমি ক্যামেরাটি নিয়ে জ্যাকেটের পকেটে রেখেছি। এখন এখানে বেজায় ঠাণ্ডা।
তাই শুধু প্যান্ট নয় জ্যাকেটেও তা বহন করা যাচ্ছে। আমি ইচ্ছেমতন মনের আনন্দে ছবি তুলে যাচ্ছি। কখনও ভারী কুয়াশার, কখনও বৃষ্টি, কখনো সবুজ পাতা, কখনো উজ্জ্বল চাঁদ, কখনও গাড়ির হেডলাইট, কখনো বা শহরের কেন্দ্র কিংবা সাইকেলের বেল। মানে মজা পাচ্ছি খুব। আবার একই সাথে ইমেজ গুন খানিক ভালো হওয়ায় আরও ভাল লাগছে।
২৪ থেকে ১০০ পর্যন্ত যে ফোকাল দূরত্ব সে পর্যন্ত বেশ শার্প ছবি আসছে। যদিও ১২০ এ খানিক সফট মনে হল যেন! মাস খানেকের ব্যাবহারে অবশ্য পুরোটা বোঝা যাবেনা এখুনি। আরও তুলতে হবে। ব্যাটারি ভীষণ দুর্বল মনে হল। আমি মাত্র এক চার্জে এক কি দেড়শর মতন ছবি তুলতে পারলাম।
এলসিডির ছবি আর কম্পিউটার পর্দায় দেখা ছবির মাঝে আকাশ পাতাল ব্যাবধান নেই বলে ভাল লাগল বেশ।
একে তো পকেটেবল, তার ওপর ২৪ মিমি লেন্স তার ওপর এফ ২.০ থেকে শুরু, আর দাম ১৬,০০০ টাকা, আমার জন্য এই ক্যামেরা একটা নো ব্রেইনারের মতন। আমি জানি এর সীমাবদ্ধতা, আমি জানি এর ইমেজ গুন ডিএসএলআর এর সাথে তুলনীয় নয়, তারপরেও আমি জানি, এটাই আমি বেশী ব্যাবহার করব। কারণ হাজার হোক, একে তো আমি সবজায়গায় নিয়ে যেতে পারব। বিয়ে হোক চাই যে কোন অনুষ্ঠান, অফিস হোক চাই যেকোনো স্থান, এটি আমার এখন সর্বক্ষণের সঙ্গী, আপাতত।
আচ্ছা, এইসব ছোট ক্যামেরায় ফুল ফ্রেম সেন্সর পুরে দেয়া যায়না? একি অসম্ভব কোন কাজ? এইবার ছবি যুক্ত করে দেখা যাক এই এস ১১০ ক্যামেরার ইমেজগুন কেমন। তালিকার শেষ তিনটি ছবি ক্যানন এস ৯৫ দিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিগুলির সব কটি জেপেগ দিয়ে তোলা।
১)
২)
৩)
৪)
৫)
৬)
৭)
৮)
৯)
১০)
১১)
১২)
১৩)
১৪)
১৫)
১৬)
১৭)
১৮)
১৯)
২০)
২১)
২২)
২৩)
২৪)
২৫)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।