অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই আমাদের ফরেন মিনিস্ট্রি'র পলিসিটা কোন ভাবেই বুঝতে পারতেছি না!
ইউরোপ - আমেরিকা'র সাথে সম্পর্ক খারাপ করলো ডঃ ইউনুস'কে নিয়া, আরব দেশগুলো'র সাথে লীগের সম্পর্ক বাই ডিফল্টই খারাপ, এই দুই মেরু'র মধ্যবর্তী দেশ তুর্কী'র সাথেও এখন একটা খারাপ সম্পর্কের দিকে যাচ্ছে!!!
আমাদের অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের কথা বাদ। এরা তুর্কী'রে মিডল পাওয়ার দেশ মনে করে, তাই তুর্কি'র উপর চোট-পাট করে একটু আত্মশ্লাঘা বোধ করতে চাইতেছে।
কিন্তু সরকারের ভুলে গেলে চলবে না যে, ঐতিহাসিকভাবে এবং সামরিক চুক্তি বলে তুর্কী, মিডল ইস্ট এবং পশ্চিমে'র ভাইটাল কানেকশন। এদের সাথে সুসম্পর্কের সুফল আমরা যেমন সহজেই ঘরে তুলতে পারি, তেমনই এদের সাথে খারাপ সম্পর্কের কুফল খুব সহজেই আমাদের আক্রান্ত করতে পারে।
তুর্কী'র সাথে বর্তমান সরকারের মেয়াদে বেশ কিছু শীর্ষ পর্যায়ের সফর হইলেও সম্পর্কে কাঙ্খিত উন্নতি হয় নাই।
কারন কিছু ঘটনা,
ঘটনা ১- এরদোয়ানের ঢাকা সফরের সময় খালেদা জিয়া'রে ঘর থিকা বের করে দেয়া, ঘটনা ২- রোহিংগা ম্যাসাকারের পর কক্সবাজারে কুরবানীর মাংস বিতড়নের সময় তুর্কি এনজিও কর্মিদের আটক, ঘটনা ৩ - অন এ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে ট্রাইবুন্যাল ভ্রমন এবং আবদুল্লাহ গুলে'র চিঠি'র প্রতিক্রিয়ায় তাদের রাষ্ট্রদুত'কে ডেকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো, প্রতিটা স্টেপেই আমাদের সরকার পর্যাপ্ত বুদ্ধি'র পরিচয় দেয় নাই!
খালেদা জিয়া'রে ঘর থেকে বের করে দেয়া'র ফলে খালেদা জিয়া'র সাথে এরদোয়ানের বৈঠক বাতিল হইছিল, যা নিশ্চিতভাবেই তুর্কি'র কাছে ভাল কোন মেসেজ দেয় নাই সরকার সম্পর্কে।
রোহিংগা ইস্যুতে তুর্কি যখন তাদের 'মুসলিম ঐক্য' পলিসি'র কারনে বিষয়টাতে গভীর প্রতিক্রিয়া দেখাইলো, তখন বাংলাদেশ ওদের সাথে একসাথে কাজ করে রোহিংগা সমস্যাটাকে ইন্টারন্যাশনালাইজ করতে পারতো, কিন্তু বাস্তবে আমরা করলাম পুরা উল্টা। পশ্চিমা বিশ্বে'র সাথে তুর্কী'র পার্টনারশিপ আর মুসলিম বিশ্বে গ্রহনযোগ্যতা'কে কাজে লাগানোর সুবর্ণ সুযোগ তো হাতছাড়া হলোই, উপরন্তু ওদের এনজিও কর্মিদের আটক করে একটা বিরুপ মেসেজও দিয়ে দিল!
এরপর আসলো অন এ্যারাইভাল ভিসা ইস্যু। তুর্কী'র সাথে আমাদের সম্পর্ক বেশ ভাল হবার পথেই ছিল। এই সরকারের মেয়াদেই দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হইছে।
তারপরও অন এ্যারাইভাল ইস্যুটাকে ডিপ্লোম্যাটিক ইস্যু'র বাইরে এনে পাবলিক মিডিয়া ইস্যু বানানো হইলো। যার সর্বশেষ সংযোজন, আবদুল্লাহ গুলে'র চিঠি। যদিও চিঠি'তে গুল বিচার নিয়ে কোন মন্তব্য করে নাই, শুধু বলছে গোআ'র বয়সের বিবেচনায় যেন ফাঁসি না দেই।
তুর্কী'তে মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ। কুর্দি টেরোরিস্ট গ্রুপ, পিকেকে'র প্রধানও এখনো জেলে।
তাই ওদের লিগ্যাল প্রিন্সিপ্যাল অনুযায়ী, মানবিক গ্রাউন্ডে ওরা এমন অনুরোধ করতেই পারে। আবদুল্লাহ গুল নিশ্চিতভাবেই আমাদের লোকাল সেন্টিমেন্ট বুঝে না। যেহেতু দুই দেশের সম্পর্কে কোন সমস্যা ছিল না, তাই বিষয়টাকে ডিপ্লোম্যাটিকালি হ্যান্ডেল করতে বাঁধা ছিল না। কিন্তু সেটা না করে, তাদের রাষ্ট্রদুত'কে ডেকে এনে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানোটা নিশ্চিতভাবেই ঠিক হয় নাই। ফলে, তুর্কীও আমাদের রাষ্ট্রদুত'কে ডেকে পাঠালো।
বাংলাদেশ যখন পশ্চিম ও মধ্যপ্রাচ্যে ফরেন রিলেশনে কঠিন সময় পার করছে, রোহিংগা ও গ্রামীন নিয়ে, মধ্যপ্রাচ্য - পশ্চিম থেকে প্রচন্ড চাপে আছে এবং ভিয়েতনাম-বেলারুশ- থাইল্যান্ডে'র মত মহা গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করছে, তখন সরকারের জন্য কার্যকরী বন্ধু হতে পারতো যেই তুর্কী, তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন না হলেও সম্পর্ক খারাপ করে যে ভাল কিছু হবে না সেটা নিশ্চয়ই কাউকে বলে দেয়ার প্রয়োজন নাই!
সরকারে'র কাছে একটা দাবী, ডিপ্লোম্যাটিক ইস্যুগুলো ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলেই হ্যান্ডেল করুন, পাবলিক মিডিয়ায় ফলাও করে ফরেন রিলেশন্স'কে জোর করে আপনাদের ভোটে'র রাজনীতি'তে ঢুকাবেন না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।