এভাবে এই বৈঠকে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে হবে তা কখনও ভাবিনি। সত্যিইতো এরকমটা কেউ ভাবে ? যে মেয়েটা গত সপ্তাহেই এ আসারে বসেছিল আসর শেষে সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিল সে আজ কেবলই স্মৃতি, ফ্রেমে বাঁধা স্মৃতিতেই পরিণত হয়ে গেল! আমাদের এ আড্ডার আসরে নিয়মিত আসতনা সে এটা ওটা শত ব্যস্ততা তার লেগেই থাকত। একদিন সে এল, সাথে নিয়ে এল এক পশলা বৃষ্টি। আধভেঁজা অবস্থায় গরম গরম সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম আমরা কজন। হঠাৎ মঞ্জুশ্রী বলল, চলেন দাদা বৃষ্টিতে ভিঁজি।
আমি বললাম, মঞ্জুবিশ্রী ওসব সাধ আমার নেই ভিঁজলে জ্বর আসবে আর এরপর টানা অফিসে যাওয়া হবেনা। চাকরি নট হয়ে যাবে। বউ বাচ্চা নিয়ে একেবারে পথে বসতে হবে।
ও রাগ হয়ে বলল, অহেতুক বউ বাচ্চার উদাহরণ দেন কেন ? বিয়েতো করেননি ?
আমি বললাম, এরকম একটা গাম্ভীর্যপূর্ণ কথা না বললে নিজেকে আর পুরুষ মনে হয়না।
ও বলল, কী মজা হত বৃষ্টিতে ভিঁজলে আর আপনিতো একটা কাঠখোট্টা মানুষ।
ওই ভাল কাজ নেই খেয়ে এখন আমি বৃষ্টিতে ভিঁজব।
ও যে কতটা রেগেছিল বুঝলাম। কথা নেই বার্তা নেই অমন একটা মেয়ে আমার মত এমন দুর্বল পুরুষের পেটে ঘুষি মেরে দিল। এ যে ডাকাত মহিলা ডাকাত ! পেটে মৃদু ব্যথা নিয়ে সময় পার করলাম।
ও হালকা ঠাণ্ডা হয়ে বলল, দাদা একটা রিকসা ঠিক করে দিন।
আমি রিকসা ডাকলাম কিন্তু ও রেগে মেগে আবারো অগ্নিমুর্তি ! আমি বললাম, কি হল আবার ?
বলল, ভাড়া কত ?
বলললাম, সে তো রিকসা চালকই জানবে।
চিৎকার করে বলল, একটা রিকসা ঠিক করে দিতে পারেনা আবার পুরুষ মানুষ। জীবনে একটা প্রেমও জুটবেনা এই আমি বলে দিলাম।
আমিও ঈষৎ রাগান্বিত। বললাম, কি ভেবেছ তুমি কতবার প্রেমে পড়েছি জানো ? শুধু বিয়েটাই করা হয়নি।
ওর সোজা জবাব, সমস্যাটা ওখানেই মেয়েরা বুঝেই কেটে পড়েছে। থাক আর গালগপ্প করতে হবে না চলি।
বুঝলাম পরিবেশটা একটু কেমন যেন হয়ে গেছে। আশেপাশের সবাইতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এক রিকসা চালকতো রীতিমত ভাব দেখিয়ে একটা বিড়ি ধরাল।
যাহোক হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এত চঞ্চল মানুষ হয়, তাও আবার মেয়ে মানুষ।
এরপর প্রত্যেক শুক্রবারই টিএসসিতে আড্ডা দিতাম আমরা। ও আসতনা আমি মনে মনে খুশিই হতাম একটা উৎপাতকারিণী আসেনি। কিন্তু সেই শেষ দিন সে এল, সবার সাথে আড্ডা মেরে আমায় বলল, কোনদিকে যাবেন ? আমি বললাম নীলক্ষেত তোমার বৌদির জন্য বই কিনব।
ও বলল বুঝেছি। তবে ভালই হল চলেন একসাথে যাব। মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হলাম। এবার কী বিপদেই না পড়ি। এর সাথে দেখলে সম্ভাব্য প্রেমিকাটা যদি ছুটে যায় ?
বিরক্ত হয়ে বললাম, চা না খেয়ে কোথাও যাব না।
ও বলল, চলেন চা খাই।
চা খেতে খেতে আমাদের গ্রুপের আরো কয়েকজনের সাথে কথা হল। এরপর চললাম ওসহ। মঞ্জুশ্রীকে বললাম, রিকসাটা তুমিই ঠিক কর।
হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল যদিও কিছুটা বৃষ্টি পাগল আমি তার পরও হালকা শীত অনুভব করলাম।
ওকে বললাম ছাতা আছে ? ও ব্যাগ থেকে একটা ছাতা বের করে বলল, এটা নিন মেয়ে মানুষের মত ধরে রাখুন। আমি হাত বাড়ালাম দিলনা। বলল, আমি একটা মেয়ে মানুষ ভিঁজছি আর উনি...
এরপর রোকেয়া হলের কাছে যেতেই বেগুনি-সাদা একটা ফুল দেখিয়ে বলল, এটার নাম জানেন। আমি বললাম, না।
ও বলল তাহলে লিখেন কি করে।
আমি শীতে কাবু হয়েই সামনের দিকে দেখিয়ে বললাম, ওই দেখ ওটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। আর লিখতে অত কিছু জানা লাগেনা। বিড়বিড়িয়ে বলললাম, শখের বসে মাঝে মাঝে দুকলম লিখি। তাতেও শকুনির নজর।
নীলক্ষেত মোড়ে পৌঁছে ওকে বিদায় দেয়ার সময় আরেক ঝামেলা।
ভাড়া দিতে চাইলাম বলল, দাদাগিরি দেখাতে হবে না। বলে চলে গেল। তবে পকেটের লক্ষীর রক্ষা আর হুতোম প্যাঁচার বিদায়ে খুশিই হলাম।
হঠাৎ একটা গাড়ির ধাক্কা খেলাম। চিৎকার দিয়ে উঠে দেখি বিছানায়।
রুমমেট বলল, কী অবস্থা এতোক্ষণ ঘুমের মধ্যে রীতিমতো বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আর এখন চিৎকার করলেন। আমি বুঝলাম স্বপ্নে স্মৃতিচারণ করছিলাম। চট করে বিছানা থেকে উঠে বললাম, বিস্তারিত এসেছে কি ?
মনে হল সব রাতে একটি অনলাইন পত্রিকার খবর দেখছিলাম। খররের হেডলইন দেখলাম, ‘আজিমপুরে সিটি কলেজ ছাত্রী রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ’ বর্ননা যতটুকু ছিল মঞ্জুশ্রী যে যখানে থাকে সেই এলাকা। তবে শেষে লেখা ছিল বিস্তারিত আসছে...।
আর এরই মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এরপর স্বপ্নে স্মৃতিচারণটুকুও হয়েই গেল।
তবে স্বপ্ন ভঙ্গের পর বিস্তারিত দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মেয়েটি অন্য কেউ।
এরপর রাতেই মঞ্জুশ্রীকে মেসেজ পাঠালাম।
পরদিন ফোনে কথা হল, হাসতে হাসতে ওকে বললাম সব।
ও হেসে জবাব দিল, দাদা আপনি আর বদলাবেন না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।