মেয়েটা ভার্সিটিতে পড়ে। ভাই বোনগুলিও সবাই চল্লিশোর্ধ। বিভিন্ন উৎসব-আয়োজনে(দেশের) একমাত্র মেয়ে বলে অংশগ্রহনে ভীত বলে, ওকে না করে দেই যেতে। মেয়েটাও এককাঠি সরেস, বাহানা দেয় অমুক ক্লাস আছে, তমুক পরীক্ষা বা এটেন্ড না করলে নাম্বার কাটা যাবে। বাধ্য হয়েই তখন অনুমতি দিতে হয়।
কিন্তু আমি জানি এইদিনটিতে সে তার ক্লাসমেটদের সাথে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াবে। হয়তো আমি কাছে থাকলে এই বাহানা করতে যেত না, কারন আমিই নিয়ে বেড়োতাম। তাই মেনে নিতে হয়।
একদিন গল্পচ্ছলে ওকে আমার একটা কাহিনী বললাম। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে সিগারেট খেতাম।
স্বাভাবিক ভাবেই জামা-কাপড়ে গন্ধ থাকতো। মা কখনো কখনো ধুতে যাবার সময়ে বলতো, কি রে তোর কাপড়ে সিগারেটের গন্ধ কেন? ধরা পরে আমতা আমতা করে কৈফিয়ত দিতাম-মা মুকুল খেয়ে ধোয়াটা আমার দিকে ছেড়েছে তো,তাই। দেখতাম মা হাসিমুখে তাই মেনে আর কোন কথা না বলে বাথরুমে চলে যেতো। । এই নিয়ে আবার বন্ধুদের আড্ডায় হাসি-তামাশাও কম করি নি, মা টা এতো বোকা আর সহজ-সরল বলে।
কিন্তু সেদিন ঘুনাক্ষরেও টের পাই নি যে, মা আমার, সব বুঝেও শুধু ছেলেকে লজ্জার হাত থেকে নিস্কৃতি দিতে এই ছোট্ট অভিনয়টুকু করতো। আজ আব্বু হয়ে যা আমাকেও করতে হচ্ছে। মেয়েটা সব শুনে চুপ করে পাশের রুমে চলে গেলো।
আর ভাইবোনের কথা কি বলবো। যেখানে ৯ভাই-বোন একসাথে খেয়ে-পড়ে বড় হয়েছি।
। একজনের দুঃশ্চিন্তায় সবাইকে দেখেছি উৎকন্ঠিত হতে। আজ প্রায় সবাই এই শেষ প্রান্তে এসে স্বার্থপরতার চুড়ান্ত নমুনা দেখিয়ে যাচ্ছে। কে কাকে ঠিয়ে বড়ভাই-বোনদের কাছ থেকে বেশী আদায় করতে পারে,এরই অন্ধ প্রতিযোগীতায় নেমেছে যেন। প্রয়োজনে মিথ্যে বা বদনামেরও আশ্রয় নিচ্ছে।
আমি দেখি আর অবাক হয়ে ভাবি একদিন এই আমরাই না সবকিছু ভাগাভাগি করে নিয়েছি। ক্ষেত্রবিশেষে নিজে না নিয়েও, সেখানে আজ কি হচ্ছে?? বলাই-বাহুল্য সাথে যুক্তিসম্মত বাহানা তো থাকছেই। যেন এই বাহানার কারনেই বাধ্য হয়ে তাকে এই অন্যায়(আমার ভাষায়) করতে হয়েছে। । আর্থিক দিক দিয়ে একটু দুর্বল বলে ড় হয়েও সব মেনে নেই।
কারন জানি অর্থই সব কিছুর মুলে। এবং এ কারনেই প্রবাসে পড়ে আছি ২২টি বছর ধরে। একেবারে জিরো থেকে আমাকে আজকের পর্যায়ে আসতে হয়েছে। লুপ্ত সন্মানও কিছু কিছু ফিরে পেতে শুরু করছি বন্ধু-বান্ধব তথা আত্মীয়-পরিজনদের মাঝে। সেই চালাকীও কমে গেছে অনেকটা।
কারন এখন যে জবাব দিতে পারি। শুধু পারি না সেই মার কাছে হাতজোড় করে বলতে,মা সেদিন তোমাকে নিয়ে অনেক হাসি-তামাশা করেছি। ক্ষমা চাই সেজন্য।
পাঠকরা হয়তো বিরক্ত হতে পারেন,ব্যক্তিগত ব্যাপার লেখেছি বলে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী এজন্য।
বাহানা আমারও আছে,মনটা আজ ভাল নেই বলে.....।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।