হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই
“What Bangladesh think today, India thinks tomorrow” এক ভারতীয় রাজনীতিক গোপাল কৃষ্ণ গোখলের বিখ্যাত উক্তি, বড় গর্ববোধ করাতাম তখন এই জাতীয় উক্তির জন্য। কিন্তু বর্তমানে ইন্ডিয়ায় যে ভাবে গনধর্ষন বেড়ে যাচ্ছে তাতে এখন আর ওই উক্তি যে সত্যনা তার জন্য গর্ববোধ করি। এখনকার এই যুগে একটু উলটা করে বলতে গেলে বলতে হয় “What India thinks today Bangladesh Thinks tomorrow” আমি আতংকিত কবে না ইন্ডিয়ার এই সব ঘটনায় আমাদের দেশের ধর্ষ্করা উৎসাহিত হয়ে পরে।
আকাশ সংস্কৃতির কারনে আমরা এখন ভারতীয় কালচারের কাছে জিম্মি। ইন্ডিয়ায় গনধর্ষনের পর যেভাবে মেয়েদের পোষাককে দায়ী করার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে তার প্রতিবাদে আমার এ লেখা।
এই একই বিষয়ে লেখা নানা ভাবে বাববার লেখা হচ্ছে, গত ৩০/৪০ বৎসরে শাড়ী না সালোয়ার কামিজ না টপস স্কার্ট শালীন( বিশ্বায়নের পর) এই নিয়ে বিতর্ক চলছেই তো চলছে। এর দুটি পরিস্কার এলাকা আছে। এক হল শালীনরা যাদের ক্ষেত্রে শাড়ীকে শালীন ও রুচিকর পোষাক বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে অন্যপক্ষ, শালিনতা ও সৌন্দর্য্য যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে তার সঙ্গে সাধারন নিরাপত্তা, ভিড়ের মধ্যে যাতায়াতে সুবিধ যোগ করেন, আর একটা হল তরুনীদের স্কার্ট-টপস জাতীয় পোষাক, যা নাকি শুধু অশালীন নয় উত্তেজকও বটে, কারও কারো কাছে তা নাকি ধর্ষনকারীর কাছে আমন্ত্রনমূলক মূলক।
আমি এক আমজনতা, কোন বিশেষজ্ঞ নই তাই আমার এ লেখাকে কেউ দয়া করে বিশেষজ্ঞ মতামত হিসাবে নিবেন না। একটা সস্তা রসিকতা দিয়ে শুরু করি, “মানূষ যখন বনে বাস করত……… কোন পোষাক বিতর্ক ছিল না”(বুজতে পারছেন কেন)। বিতর্ক শুরু হয়েছে পোষাক আসার পর, যখন মানূষের সমাজে সৌন্দ্যর্য্য-অসৌন্দর্য্য, লজ্জা-নির্লজ্জতা বোধ জেগেছে। আমি মাঝে মাঝ লক্ষ্য করছি ইদানিং পোষাক বিতর্ক ভালই জমে উঠছে।
তথাকথিত এক ঝাক সমাজবাদী স্লোগান তুলছে “অশালীন পোষাক চলবে না, ভদ্র পোষাক চাই”, কিছুদিন আগে কোন এক টকশোতে এক নেতা বলছিল “এখান কার মেয়েদের যে পোষাক……” অর্থ্যাৎ ধর্ষন ইত্যাদির জন্য মেয়েরা দায়ী, ছেলেদের কোন দোষ নেই, আরও বড় সমস্যা হল এই ধরনের সস্তা কথাবার্তা মিডিয়ার কল্যানে আর অলিতে গলিতে থাকেনা একেবারে রাজপথে চলে যায়। আবার এটাও একটু খেয়াল করবেন বিতর্ক শুধু মেয়েদের পোষাক নিয়ে, ছেলেদের পোষাক কখনও না।
ভাই রে জিন্স আমার খুব পছন্দের একটা পোষাক, অনেক দিন পরা যায়, যেকোন জায়গায় ব্যাবহার করা যায়, শক্ত আরো অনেক গুন আছে, তো অনেক দিন পর সেদিন নিউ মার্কেটের দোতলায় গেলাম জিন্স কিনতে কি দেখলাম জানেন লম্বায় ঠিক আছে কিন্ত কোনটাই আমার নাভীর চার আঙ্গুলের নীচের উপর আর ওঠে না। মনে হল ভুল জাগায় আসছি অন্য দোকানে যাই, বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না সব জিন্স নাভীর চার আঙ্গুল নীচ পর্যন্ত। শুনলাম এটাই বর্তমান পোলাপানের ফ্যাশন।
জানি না কোন ছেলে কি নাভী দেখিয়ে ফ্যাশন করতে পারে কিনা? আমাদের কালে আমরা স্টাইল করতাম, ফ্যাশন না। জিন্স বলতে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে হলিউডের ক্লিন্ট ইস্টউডের বেল বটম প্যান্ট, কোমরে সিক্স শুটার, পায়ে স্পারওয়ালা জুতো, জিন্সের উত্তপত্তিই কিন্ত কঠিন টাইপের পুরুষদের জন্য, নাভী বের করে হিজড়া সাজার জন্যনা। এই জেনারেশনের পোলাপানরা কি বুজে না, পুরষের সৌন্দর্য্য পুরুষত্বে, কই যাচ্ছি আমরা?
যাই হোক ছেলেদের ক্ষেত্রে এই ধরনের আলাপে গেলে বলা হয় এটা ব্যাক্তিস্বাধীনতা, যে যা ভাল লাগবে পড়বে আমি বলার কে? ঠিক। আর মেয়েদের ক্ষেত্রেই ওনারা বলে বসবেন সামাজিক সমস্যা, কেন এই একপেষে দৃষ্টিভঙ্গি? সমাজ বিজ্ঞানীরা ভাল বলবেন? মুখে বলি আর না বলি এতে যে পুরুষ শাষিত সমামাজের প্রভুত্ব ফুটে উঠছে তাতে আর সন্দেহ কি? মুলত পুরুষরাই ঠিক করে নারীর কোন পোষাকটা শোভন আর অশোভন। আমদের দেশে শাড়ী প্রথাগত পরিধান, শাড়ী পরে অসংখ্য নারী অফিস আদালত, নাটকে অভিনয় করেন, নববর্ষের ছায়ানটে লাল পেড়ে সাদা শাড়ী বিশেষ এক আচারিক মহিমা লাভ করে।
এ ক্ষেত্রে নারীবাদিরা ইংরেজীতে বলেন internal colonization বা “অন্তর্গত ঔপনিবেশীকতা”, কিন্তু আমি সেটাও সমর্থন করিনা। পুরুষ নারীর জন্য কোন দৃষ্টি নন্দন কিছু তৈরী করলে তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য হবে আমি তা মনে করিনা। মনে রাখবেন পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় ডিজাইনারা কিন্ত পুরুষ।
মেয়েদের পোষাকের ক্ষেত্রে কতগুলো ভ্রান্ত বিরোধ কাজ করে শাড়ী বনাম সালোয়ার কামিজ। শাড়ী নাকি শালীন আর সালোয়ার নাকি অশালীন।
যতসব ফালতু কথা। বিশ্বাস হয়না? বোম্বের নায়িকাদের শাড়ি পরা দেখছেন? ৮০ বৎসরের বুড়া যৌবন পেয়ে যায়। তা হলে কি ভাবে বলবেন শাড়ী শালীন? আসলে মননশীলতাই আসল
তবে শাড়ী পরিহিত নারীর মধ্যেই আমি অভিজাত ষৌন্দর্য্য খুজে পাই, হয়ত ব্যাতিক্রম আছে কিন্ত আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মতামত এটা। তাই বলে কি শাড়ীর তুলনায় সালোয়ার কামিজ বা টপ্স স্কার্ট অশালীন? একথা আমি এক বারেই মানতে নারাজ। বরং আধুনিক নারীদের পক্ষে রাস্তা ঘাটে চলা ফেরায় কর্মক্ষেত্রে এ গুলো অনেক সুবিধাজনক।
পুরুষরা যে কারনে ধুতি লুঙ্গি ছেড়ে প্যান্ট শার্ট ধরছে সেই একই যুক্তিতে নারীরা সালোয়ার কামিজ বা স্কার্ট টপস পরার যুক্তি রাখে। পাশ্চাত্যে নারীর অনাবৃত, অর্ধাবৃত শরীর শারিরীক সৌন্দর্য্য হিসাবে দেখা হয়। যৌনতা তার থেকে বিচ্ছিন্ন। সুগঠিত পুরুষ শরীরে মত সুগঠিত নারী দেহের সৌন্দর্য্য আছে তা পাশ্চাত্যের হাজার বছরের শিল্প সাংস্কৃতিতে স্বীকৃত। পাশ্চাত্যে পথে পথে যৌন উপকরনের দোকান পথে পথে।
এত স্বর্গীয় উদারতা সত্ত্বেও পাশ্চাত্যে কি ধর্ষনের মত ঘটনা ঘটে না? অবশ্যি ঘটে। তার জন্য পোষাক কে দায়ী করা এক ধরনের মূঢ়তা। অসুস্থ্য যৌন বুভূক্ষে দেশেও আছে সে দেশেও আছে এর জন্য দায়ী কিছু বড়লোকের নেশাখোর বিকৃত মস্তিস্ক ছেলেরা, অশিক্ষা, ইন্টারনেটে নীলছবির সহজলভ্যতা।
ধর্ষন রোধে একটি প্রস্তাব
আগের কালে রাজা মহারাজাদের হেরেম পাহারা দিত কিছু নপুংসক প্রহরী যাদের “খোজা” বলত, আমাদের দেশে এই রকম কিছু ঘটলে শুরুতেই ২/৪ টাকে খোজা করে দিলে আর ঘটবে না। অতঃপর ওই সব খোজা গুলোকে কোন মহিলা হোষ্টলের গার্ড হিসাবে রাখা হোক।
কি খুব বেশি নির্মম হল? আপনার পরিচিত কেউ যদি ধর্ষনের শিকার হয় আমি শিওর আপনি বন্ধুক নিয়ে পথে নামবেন, আমি তো সামান্য খোজা করে দিলাম। I AM TO BE CRUEL ONLY TO BE KIND.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।