আফগানরা ক্রিকেট খেলে মন দিয়ে। পাকিস্তানিরা ব্যবহার করে চেতনাকে। লঙ্কানরা খেলে বুদ্ধি দিয়ে। ভারতের ক্রিকেট চলে অর্থের দাপটে। কিন্তু বাংলাদেশ? টাইগারদেরও মতাদর্শ আছে, সেটা হচ্ছে 'নির্ভরশীলতা'।
ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর এই ১৬ বছরেও দেশের ক্রিকেট পরিপূর্ণ একটা দল হয়ে উঠতে পারেনি। নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের ওপর 'নির্ভরশীলতা' থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ।
গত দুই বছরে ওয়ানডেতে মুশফিকদের ধারাবাহিকতা দেখে মনে হচ্ছিল হয়তো নির্ভরশীলতা কাটিয়ে একটা পরিপূর্ণ দল হয়ে উঠছে। নির্দিষ্ট কোনো ক্রিকেটার থাকুক বা না থাকুক দল ভালো করবেই। কিন্তু কোথায়! সে আশায় গুঁড়েবালি।
তামিম-সাকিবকে ছাড়া তো বাংলাদেশ যেন একেবারে অথর্ব! শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ ও এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচ দেখে পরিষ্কার হয়েছে যে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এই দলটির মেরুদণ্ড। সাকিব হৃৎপিন্ড। তামিম গুরুত্বপূর্ণ কোনো অঙ্গ। বাকি আট ক্রিকেটার চলে সে াতে গা ভাসিয়ে। মুশফিক-সাকিব-তামিম তিন ক্রিকেটারের যেকোনো দুইজন অনুপুস্থিত থাকলে বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণীর (সামর্থ্যের বিচারে) দলের বিরুদ্ধেও হারতে পারে।
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পরাজয়টা তো সে সাক্ষ্যই দিচ্ছে। ঘরের মাঠে আইসিসির সহযোগী এক দেশের কাছে পরাজয়টা যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য রীতিমতো অপমানজনক। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আজকের ম্যাচ নিয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছেন না সমর্থকরা। তবে খুশির খবর হচ্ছে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আজ ফিরছেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে হৃৎপিণ্ডকে পেয়ে যাচ্ছে টাইগাররা।
যদিও ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের অভাবটা থাকবেই। তারপরেও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ফেরায় তৈরি হয়েছে একটা সম্ভাবনা!
সাকিব শুধু নিছক একজন ক্রিকেটার নন। দলের প্রাণ। অনুপ্রেরণা দায়ী এক যোদ্ধা। সাকিব ব্যর্থ হলেও দলে তার উপস্থিতিটাই সব কিছু বদলে দেয়।
বাকি ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। প্রতিপক্ষ শিবিরে আতঙ্ক তৈরি হয়ে যায়। ক্রিকেট অনেকটা 'মাইন্ড গেম'। এখানে প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়াও একটা বড় কাজ।
সাকিব থাকলে সবচেয়ে বেশি আত্দবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যে একাই দুই ক্রিকেটারের কাজ করেন। তিনি না থাকলে বোলার কিংবা ব্যাটসম্যান হিসেবে বাড়তি একজন ক্রিকেটার খেলাতে হয়। তাছাড়া খুব কম দিনই আছে, যেদিন সাকিব ব্যাটে-বলে একসঙ্গে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই সাকিবের ফেরাটা যেন বদলে দিয়েছে দলের মানসিকতাকেই। হয়তো আজ মাঠে তার প্রভাবটাও চোখে পড়তে পারে!
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ একে তো বর্তমান রানার্সআপ।
তার ওপর ঘরের মাঠে খেলা। তাই টাইগারদের কাছে প্রত্যাশার চাপটা ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে হেরে প্রত্যাশার ফানুসটা ফুটো হয়ে গেছে। বাংলাদেশের নিম্নগামিতা শুরু হয়েছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ থেকেই। হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পাশাপাশি টাইগারদের ওপর নেমে আসে নানা দুর্যোগ।
একের পর এক ইনজুরি, সঙ্গে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা। এর আগে কখনো বাংলাদেশ দলের এমন করুণ অবস্থা আর হয়নি। কিন্তু সাকিব ফেরায় এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই। তাছাড়া আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হার লজ্জাজনক হলেও হতাশায় ভোগার কারণ নেই।
হতাশা যে এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা। যদিও পর পর দুই ম্যাচে পরাজিত হওয়ায় ক্রিকেট ভক্তরা অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু একটি ম্যাচ জিতলেই হয়তো দূর হয়ে যাবে সব বেদনা। সেই ম্যাচটা হতে পারে এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই। তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন অধিনায়ক মুশফিক।
'পরের দুই ম্যাচে আমাদের ভালো করার সুযোগ রয়েছে। '
স্বাধীনতার মাস। ৪৩ বছর আগে এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করেই বাঙালি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল। তাই প্রতিপক্ষ পাকিস্তান মানেই মনে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব চলে আসে। হোক না সেটা খেলার মাঠে।
পাকিস্তানবিরোধী এই আবেগটাই আজ নতুন করে উজ্জীবিত করতে পারে ক্রিকেটারদের। সাকিবের প্রত্যাবর্তন বাড়িয়ে দিতে পারে ক্রিকেটারদের আত্দবিশ্বাসকে। দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেলেই বিজয়ের মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন হয়ে যাবে। এমন প্রত্যাশা নিয়েই আজ মিরপুরের দিকে তাকিয়ে থাকবেন দেশবাসী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।