অনেকক্ষন ধরে হাটছেন আবরার সাহেব। অফিস শেষে রাস্তার সামনে গেটটা ধরে দাড়িয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। আশেপাশে কোন রিকশা বা ট্যাক্সি আজকে দেখতে পাচ্ছেননা। আজকের হরতাল টা সবাই বেশ সিরিয়াসলী নিয়েছে। হাতে গোনা দূই একজন রিকসা ওয়ালা দেখা যাচ্ছে।
খুব সতর্কভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। প্যাসেনজার যেমন তাতে জড়সড় হয়ে বসে আছে রিকশাওয়ালা তেমনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চালাচ্ছে। যেন যারাই আজকে বের হয়েছে প্রানটাকে হাতে নিয়ে বের হয়েছে। রাস্তাঘাট শুনশান ফাকা মনে হচ্ছে। এ যেন অনেকটা সেই ৭১ এর সময়টাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
কিছু শাসক গোষ্ঠীর কাছে দেশের মানুষের জীবনটা ছিল তখন অসহায়। সাধারন মানুষ প্রান হাত করে পালিয়ে বেড়িয়েছিল। সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা করেছে অস্রে মোকাবেলা নিজের দেশের মানুষের সাথে।
পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পকিস্তান। আবরার সাহেবের চোখে অনেকটা দুই বিরোধী ভাই ঝগড়া রক্তপাতের পর আলাদা হওয়া।
অবশ্য পুরা ভারত বর্ষের ইতিহাস টা তো তাই। ভারত পাকিস্তান ভাগ হল। পাকিস্তান নুতুন রাষ্ট্র গঠন করল। পাকিস্তান ভাগ হল। আমরা ছোট আর এক ভূখন্ড পেলাম।
নাম হল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখন্ড। স্বাধীন ভূখন্ড? তা কি আর পাওয়া হল কখন? বা কখন ও কি পাব আদৌ হতাশায় তিনি ভাবতে থাকেন। শাসকগোষ্ঠীর কাছে আমরা জনসাধারন সবসময় অসহায়। আমাদেরকে নিয়ে ভাবার মত শাসকরা এখন আর পৃথিবীতে বেচে নাই।
আবরার সাহেবের বয়স এখন তেপ্পান্নো এর কাছাকাছি।
তিনি ভাষা আন্দোলন দেখেছেন দেশভাগ দেখেছেন। সক্রিয় মুক্তিষুদ্ধ না করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায় ছিলেন। এটা ঠিক যে যুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করা তা না। তার কাছে সবাই একদেশের মানুষ। তখন পশ্মিম পাকিস্তান বা হানাদার বাহিনী বা জনগোষ্ঠী ছিল একই দেশের মানুষ।
তিনি তখন কোন আদর্শ মতাবলম্বী ছিলেননা। পুরা যুদ্ধের সময়টা অসহায় জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করেছিলেন। তাদের বাড়ীতে সবসময় মুক্তিযোদ্ধারা এসে থাকতেন। তার মা স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়া পরার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু যুদ্ধ রক্তপাত থেকে তিনি সবসময়ে দুরে ছিলেন।
তার কাছে ওই সময়টা ছিল অনেকটা পরিবারে ষুদ্ধ নিজের দেশের সাথে যুদ্ধ।
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শেষেরদিকে তিনি এক পাকিস্তানী সৈন্যকে সাহায্য করেছিলেন বর্ডার ক্রস করে পালিয়ে যেতে। করেছিলেন সম্পূর্ন মানবিক কারনে। সে সৈন্য গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের ধানক্ষেতের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। অল্প বয়স বিশ কি বাইশ।
তখন যুদ্ধ শেষের দিকে। তার উচিত ছিল মুক্তিবাহিনীর হাতে হানাদার পাকিস্তানী সেনাকে তুলে দেওয়া। প্রবল জ্বরে ভূগতে থাকা এই গুলিবিদ্ধ সৈনিকটির গোপন চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন তিনি এবং ওনার মা বাবা। ছেলেটির নাম ছিল আফতাব। যাওয়ার সময় বারবার তাকে সালাম করেছিলেন।
অশ্রসজল চোখে বলেছিল
হামভি যুদ্ধ নেহী চাতি ভাই। আর্মি ম্যান হুয়া উসকো লিয়ে আনা হ্যায়। এই জং যুদ্ধ মুজছে নাফরাত হ্যায়।
আবরারের সাহেবের সবচেয়ে প্রিয় বন্দু ব্রিগ্রেডিয়ার জামাল ওইসময়ে ছিলেন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা। আফতাবের পালানোর ঘটনায় জামালের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
আমরা কষ্ট করে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করছি আর তুই ওই শয়তানের বাচ্চাগুলারে পালাতে সাহায্য করিস। জামাল রাগে চেচামেচি করেছিল। আমার উচিত তোকে মুক্তিবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া। তুই রাজাকার আমার বন্ধু না। ওরা আমার বোনকে ক্যাম্পে উঠায়ে নিয়ে গেছে বলে সে চিৎকার করে কেদেছিল।
এদেরকে দয়া বা মাপ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এজন্য তোকে ও মাপ করতে পারলামনা।
আমি শুধু অসহায় ছেলেকে প্রানে মারতে চাই নিরে জামাল বলেছিলেন কাতর গলায় আবরার সাহেব।
ঠিক আছে তার যত্ন করেছিস আহত মানুষ। সুস্থ হওয়ার পর আমাদের হাতে তুলে দিতি।
এখন তোর এই আচরন আমি কিভাবে এক্সপ্লেইন করব আমার টিমের কাছে তুই বল। রাগে জামাল বলতে থাকে।
তোদের হাতে যদি তুলে দেই তাহলে বাচানোর কি দরকার ছিল?আবরার সাহেব বললেন।
সেই যে জামাল তাকে ছেড়ে গিয়েছে এখন পর্যন্ত তার সাথে কোন সম্পর্ক নাই। যাওয়ার সময় শুধু এটা জিজ্ঞাসা করেছিল “তুই কোন আদর্শের মানুষ তাহলে?তুই দেশ ভাগ চাসনা?
এই প্রশ্নের উত্তরে নীরব থাকতে হয় আবরার সাহেবকে।
তিনি কি চান এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি। তবে এই যুদ্ধ মারামারি রক্তপাত কখন ও চাননি।
আজকে অনেকটা একই ধরনের ঘটনা কি ঘটছে না দেশে এখন? দুই দলের কোন্দলের মাঝে সারা দেশের অসহায় মানুষ। এসব ভাবতে ভাবতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন করতে করতে রাস্তায় হাটছেন আজকে। আজকে সময় সেপ্টেম্বর বিশ ২০১৩ ক্যালেন্ডার এর পাতায়।
আমাদের ঘটনা এখান থেকে শুরু।
তিন চারবার রিকশা বদল করে অবশেষে আবরার সাহেব বাসায় এসে পৌছলেন। দরজা য় ধাক্কা দিতে ছোট মেয়ে দরজা খুলে দিল।
বাবা এই হরতালের মধ্যে কেন তুমি বের হইছ? মা টেনশানে মাথা খারাপের মত করতেছে। কথার বৃষ্টি ঝরাতে শূরু করল তার মেয়েটি।
এই মেয়ের নাম শাপলা। পড়ে ইডেন কলেজে বিএ। তার বিয়ের কথা চলছে ক্যন্টনমেন্টের এক আর্মী অফিসারের সঙ্গে। তার বাবা জিয়াউর রহমানের সময় পাটমন্ত্রী ছিলেন।
আবরার সাহেবের দুই মেয়ে এক ছেলে।
তার আসার খবর পেয়ে ছেলে এবং স্ত্রী বের হয়ে আসল রুম থেকে। ছেলে নাম হাবিব প্রানীবিদ্যা তে মাষ্টার্স করেছে ঢাকা ভার্সিটি থেকে। বড় মেয়ে সুরভী ডাক্তার। থাকে অষ্ট্রেলিয়া। ওনার ছেলেমেয়ে গুলি সবদিকে অনেক ভাল।
ছেলেমেয়েগুলিকে দেখলে মন ভরে যায়। তারা পড়ালেখায় সবাই ভাল। আচার আচরনে অনেক ভদ্র সভ্য। ফ্যমিলীর দিকে তিনি বেশ সুখী। বড়মেয়ে তাদের ইমিগ্রেশান এর চেষ্টা করছে।
ছেলের নিজের পছন্দের একজন আছে। মেয়ের বিয়ের পর আশা করা যায় ছেলের বিয়ে ও খুব দ্রুত করিয়ে দিবেন। স্ত্রী এবং ওনার এই ইচ্ছা। তারপর ঝাড়া হাত পা। বাড়ীটা বউ এর নামে লিখে দিয়েছেন।
কাজেই তিনি যদি আগে মারা যান বউ বাড়ী ভাড়া দিয়ে ই চলতে পারবে। মেয়ের বিয়ের জন্য আলাদা কিছু টাকা রাখা আছে আর বউ এর নামে সঞ্চয়ী বন্ড করা আছে। সব মিলিয়ে বলা যায় ওনার জীবন পীসফুল টেনশান নাই খাওয়া পরার ভাবনা নাই। ওনার খুব সুখে থাকার কথা এই বয়সে যদি দেশটার এই বিদঘুটে পরিস্থিতি না হত।
টানা হরতালের আজকে চতুর্থ দিন।
দেশের অবস্থা অনেক বাজে মনে হচ্ছে। স্ত্রী রাহেলা হাপাতে হাপাতে পাশে এসে বসল।
কালকে শাপলার এনগেজমেন্ট। এখন ও ছেলের কিছু জিনিস কেনা বাকী। স্ত্রী টেনশান করছেন স্বামীকে বকছেন আর বলছেন তোমাকে কত আগে থেকে বললাম জিনিসগুলো কিনে রাখ।
এখন কিভাবে জিনিস গুলি আনতে যাই। দেশের অবস্থা দেখে ৭১ এর কার্ফিউ র দিনগুলির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এই সময়ে মেয়ের বিয়ের ডেট মনে হয় ফেলানো উচিত হয়নি।
হরতাল শেষ হল পরের দিন সন্ধা। যথাসময়ে সবকিছুই ম্যানেজ হল।
শাপলার এক করিৎকর্মা বান্ধবী এসে কেনাকাটা ঘর গোছানো ঝটপট করে সব করে ফেলল। শাপলাকে পার্লারে সাজানো ছেলের সব জিনিস কেনা সব করে ফেলল। এখনকার মেয়েরা অনেক কাজের দেখা যাচ্ছে।
রাত নয়টায় ছেলেরা আসল। ছেলের বাবা মা ভাই বোন আর ছেলের তিন বন্ধু আর এক মামা এই গেষ্ট।
আংটি পরানো শেষ ছেলের মামা প্রস্তাব দিল আজকে আখত হয়ে যাক। অনুষ্ঠান না হয় পরে হবে। কথামত কাজ কাজী ডেকে আনা হল। আরও কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করা হল।
আখত করার সময় ঝামেলা বাধল সাইন করতে গিয়ে।
মেয়ের বাবার নাম লিখতে গিয়ে গোল বাধলেন ছেলের মামা।
আপনার পুরা নামটা আবার বলুন প্লিজ বললেন আবরার সাহেবকে।
আবরার আহমেদ চৌধুরী। নাম শুনে অনেক গম্ভীর তিনি। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন জামাল আহমেদ কে চেনেন কিনা তার বেয়াই।
আমাকে মনে হয় আপনি চিনতে পারছেননা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বাড়ীতে আমরা প্রায় একমাস ছিলাম। আপনি আমার চেহারা হয়তবা ভূলে গিয়েছেন। এতক্ষনে চিনতে পারলেন আবরার সাহেব এই ভদ্রলোককে। খুব সাহসী সিরিয়াস মুক্তিযোদ্ধা ছিল।
তদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে খোচা মারতে ভূললেননা। অবশ্যই আপনার অতিথি সবাই। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যরা ও আপনার অতিথি দেখছি।
ছেলের নাম আসিফ এবং তার বাবা দুজনে মুখ চাওয়াচাওয়ী করতেছে। মামা ফিসফিসিয়ে কি যেন বললেন।
নাটকীয় পরিবর্তনের মাধমে বিয়ে স্থগিত করা হল একমাসের জন্য। আসিফের বাবা অবরার সাহেব কে জরুরী কাজ ভূলে গিয়েছেন বলে বিয়েটা স্থগিত করলেন একমাসের জন্য। তারা ঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তিনি অনেক কষ্টে চোখে পানি আসা কন্ট্রোল করলেন তার আদরের মেয়ে আর আসিফের কথা মনে করে। মানুষ কি আপনজনের কষ্ট ও বুঝতে পারেনা। আসিফের বাবা কি ছেলের কষ্ট টা খেয়াল করে দেখছেননা।
আসিফ বেদনা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে সেটা তার বাবা খেয়াল ও করছেননা।
সেই রাতের পর আরও সাতটা রাত পার হয়ে গেল না এল ছেলের বাড়ী থেকে ফোন না এসেছে আসিফের ফোন। মেয়েটার মুখের দিকে তিনি তাকাতে পারছেননা। তাকে দেখলে শাপলা মুখ ফিরিয়ে অন্য রুমে ঢুকে পড়ছে। ছেলে ও কথা বলছেনা তার সঙ্গে।
সবার ভাব দেখে মনে হচ্ছে তিনি হাত বাড়িয়ে শাপলার বিয়ে ভেঙ্গেছেন। শুধু তার স্ত্রী জানেন সব ঘটনা তিনি ভূল বোঝেননি।
আফরোজা বানু স্বামীর জন্য নাস্তা এনে দেখে দেয়ালে হেলান দিয়ে স্বামী অসহায় ভাবে ঘুমিয়ে আছে। তিনি স্বামী কে মনে প্রানে ভক্তি শ্রদ্ধা করেন। তিনি জানেন তার স্বামীর মত দরদী ভাল পরোপকারী মানুষ কমই আছে।
তাদের ত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবনের একের পর এক স্বামীর ভাল স্বভাবের পরিচয় পেয়েছেন। ফোন এর আওয়াজ পেয়ে এসে ফোন ধরলেন। আসিফের গলার স্বর পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন।
সালাম আম্মা সুন্দর করে আম্মা বলে ডাকল শারীরিক কুশল জিজ্ঞাসা করল তারপরে শাপলাকে চাইল। তিনি ফোন দিয়ে ইশারায় বলল আসিফ।
কিছুক্ষন কথা বলার পর শাপলা এসে মাকে ফোন দিয়ে বলল ও বাবার সাথে কথা বলতে চায়। সাত দিন পরে মেয়েকে স্বাভাবিক মুডে পেল।
আবরার সাহেব ছুটছেন আর ছুটছেন। চোরাবালিও তার পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে। একসময়ে তিনি পড়ে গেলেন বালিতে।
বালির সাগরে ডুবতে লাগলেন ডুবতে লাগলেন। তিনি শুধু বলতে চাইলেন বালির সমুদ্রকে একটিবার সুযোগ দাও। আমার আদরের মেয়েটাকে একটা কথা বলতে চাই। ওই অবস্থায় কাপতে কাপতে ঘুম থেকে উঠে মেয়েকে সামনে পেলেন। তাকে হাত বাড়িয়ে ফোন দিচ্ছে।
ফোন হাতে নিতে আসিফের সালাম। খুশী হয়ে গেলেন তিনি।
আসিফের যা বক্তব্য বাবা আপনারা দুজন আমার বাবা আপনি কি শুরু করলেন?ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভাববেননা আপনারা। বাবা এখন আপনি যদি বলেন আমি আর শাপলা কোর্ট ম্যারেজ করতে চাচ্ছি। আপনি আমাদের বাসায় এসে বাবার কাছে মাপ চেয়ে নিবেন।
কি যে সব কথা বাবার। আপনি রাজাকার আপনার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিলে এখন বিপদ। চারিদিকে রাজাকার নিধন চলছে যেভাবে। আসিফ বিরক্ত হয়ে ঝাঝিয়ে কথাগুলো বলে উঠে। এই ব্যাপারটাকে এত পাত্তা দেওয়ার কি আছে? যুদ্ধের সময় বাচার জন্য যেই অন্যায় কাজটা করেছেন তার জন্য সারাক্ষন রাজাকার বলতে হবে।
কথাটার আঘাতে আবরার সাহেবের দেহ মন অসাড় হয়ে গেল। একটু আগে আসিফের কন্ঠস্বরে যতটা খুশী হয়েছিল এখন তার কথার ধরনে মনটা ততটাই খারাপ হয়ে গেল।
এতক্ষনে তিনি আপনাকে ফিরে পেলেন। কালকে পর্যন্ত তিনি তার এই কাজটির জন্য গিল্টি ফীল করছিলেন। আজকে তিনি শক্তভাবে ভাবলেন
না আমি কোন অন্যায় করিনি।
এবং কথাটা আসিফকে বললেন অনেকটা কড়া সুরে।
কোনটা অন্যায় বলছ আসিফ?আমি এক অসহায় আহত মানুষের সেবা শুশ্রুষা করে তাকে সুস্থ করে তার দেশে ফিরে যেতে সাহায্য করেছি মানবিকভাবে। তাকে হানাদার বাহিনী মনে করিনি । পাকিস্তানি মিলিটারি হিসাবে না দেখে দূর্দশাগ্রস্থ মানুষ হিসাবে দেখেছি। আর আমার কোন অন্যায় এর কথা বলেন তোমার বাবা? বলতে বলতে কাপতে কাপতে তিনি আবার বিছনায় বসে পড়লেন।
মেয়ে আর স্ত্রী এসে তার পাশে বসে সান্তনা দিতে লাগলেন।
ছেলে ও বলল সরি বাবা আমি ও ব্যাপারটাকে ভূল ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম। তুমি কখন ও এত কিছু আমাদের বলনি বাবা।
আসিফ এইভাবে বিয়ে করাতে একজন বাবা হিসাবে আমি মত দিতে পরবনা। আমার অনুরোধ কিছুদিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর বাবার মতের জন্য।
তুমি তো বাবার একমাত্র ছেলে। বাবার আশীর্বাদ নিয়ে বিয়ে কর বাবা। অনুনয়ের স্বরে বললেন আসিফকে।
বাবা কোন কথাই শুনছেননা। এমনকি অন্য জায়গায় মেয়ে দেখছেন।
তিনি সামনে ইলেকশানে দাড়াবেন। উনি বলেছেন আপনার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিলে উনি মনোনয়ন পাবেননা। এটা আসলে বাবার ধারনা না। আমার মামা এই ধারনা ওনার মাথায় ঢুকিয়েছেন। আমি কিছুতে ওনাকে নরম করতে পারছিনা।
আমি ডিশিশান নিয়ে ফেলেছি আমার নিজের দিক থেকে আপনারা রাজী না হলে আমরা নিজেরা বিয়ে করব। রাগ আর বিরক্তিতে সে বলে উঠে।
একমাস পার হল। আসিফদের বাসা থেকে কেউ এখন ও কেউ আসেনি। আবরার সাহেব আসিফের বাবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
তিনি যেহেতু মেয়ের বাবা আর বেশী রিকোয়েষ্ট তিনি করতে পারেননা। তাহলে ডেসপারেট বাবার পর্যায়ে পড়ে যাবেন। সব আল্লাহ র হাতে সপে দিয়েছেন এখন।
দিন যায় মাস যায় আসিফের আর কোন খবর আসেনা। একসময়ে তার মেয়ে স্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
কলেজ যাওয়া শুরু করেছে আবার। আজকে নভেম্বর একুশ তারিখ । ছুটির দিন বলে হরতাল ফ্রী । আবার মনে হয় কালকে থেকে লাগাতার হরতাল।
তিনি মনে মনে ভাবে এই দেশ জাতির কত কিছু হল কত বিপদ গেল।
কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন কখন ও হয়নি হচ্ছেনা হবেনা। সবসময় শাসকগোষ্ঠীর হাতের পুতুল হয়ে থাকলাম। হয়ত এই দেশ আবার ভাগ হবে। দুই ভিন্ন আদর্শের মানুষ নিয়ে দুই দেশ। এভাবে চলতে থাকবে এদেশের মানুষের জীবন তাদের ভাগ্য।
দেখে এসেছে দেশ ভাগ পাক ভারত বর্ষ থেকে আজ পর্যন্ত আমরা সবধরনের বঞ্চনা নির্যাতন অসহায়ত্বের শিকার।
একাত্বরের ফাল্গুন যুদ্ধ করে মানুষ কি পেয়েছে। স্বাধীনতার বেয়াল্লিশ বছর বাদে ২০১৪ এর মার্চ এর এই বিজয়ের মাসে কি পাচ্ছি আমরা? দেশকে দেখে মনে হচ্ছে আবার সেই ৭১ এর মত চরম সংকটের সম্মুখীন।
সমাপ্ত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।