আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাল্গুনের প্রথম দিনেঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

ফাল্গুনের প্রথম দিনেঃ সবুজের সমারোহ নিয়ে বসন্ত আসছে শীতকে বিদায় জানাতে। ফুলে ফুলে সেজেছে বসুন্ধরা। দূর থেকে ভেসে আসে ফুলের সুঘ্রান আর কোকিলের কুহু কুহু সমধুর ডাক। বসন্তের প্রথম দিনে এগুলোর দেখা না মিললেও পয়লা ফাল্গুন তো আমাদের কাছে উৎসবেরই দিন। এ বসন্ত উৎসব শুধু নাচ-গানের অনুষ্ঠান নয়; বাঙালি সংস্কৃতিকে চেনা-জানা ও নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার উৎসব।

তাই ১৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা জাগে নতুন প্রাণে, নতুন সুরে। তাই পয়লা ফাল্গুন নিয়েই ছোট্ট পরিসরে আজ আমার এই লেখাঃ মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির মধ্যেই সে বেড়ে ওঠে। যে প্রকৃতির মাঝে সে বেড়ে ওঠে, সেই প্রকৃতি সে দেখবে না- তা তো হতেই পারে না। নইলে যে বড় স্বার্থপর হয়ে যাবে মানুষ।

তাই কবিতায় ও সুরে প্রকৃতির প্রকাশ করে মানুষ। প্রকৃতি যেন বিভিন্ন অনুভূতির দ্বার উন্মোচন করে দেয়। প্রকৃতির দ্বারা সব সময়ই চিত্রে আলোড়িত হয়। বিভিন্ন কবির লেখায় বিভিন্ন ঋতুর বর্ণনা থাকলেও বসন্তকেই "ঋতুরাজ" বলা হয়। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার "বসন্ত বন্দনা" কবিতায় লিখেছেন, -"হয়তো ফোটেনি ফুল রবীন্দ্র সংগীতে যত আছে"।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই বসন্তকে সাধারণ মানুষের অনেক কাছে নিয়ে এসেছেন। প্রকৃতি চিরকালই ধরা দিয়েছে কবিদের কবিতায়। প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে মনের পরিবর্তনের বিষয়গুলো খুব ছোট মনে হলেও এর বিশাল প্রভাব আছে। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে এই ছোট খাটো উপলব্ধিগুলোই মনে এনে দেয় ভিন্ন মাত্রা। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়েই পাওয়া যায় নির্মল আনন্দ।

আর এ আনন্দ যদি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তবে জীবনের সৌন্দর্য সবার চোখেই ধরা দেবে। পয়লা ফাল্গুনের অনুভূতি সম্পর্কে কবি আসাদ চৌধুরী লিখেছিলেন- "বসন্ত আমার প্রিয় ঋতু। বসন্তের প্রথম দিনে তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ সুন্দর করে সাজগুজু করে, যা দেখতে ভাল লাগে। পয়লা ফাল্গুনকে বরণ করতে অনুষ্ঠানে কবিতা পড়বো, গায়ে থাকবে পাঞ্জাবী ও চাদর-এটা ভাবতেই আমি রোমাঞ্চিত হই"। তিনি আরো লিখেছিলেন, "পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে শুধু শহরেই নয়, বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও হয় নানা আয়োজন।

বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে, ওরসের স্থানগুলোতে মিলাদ হয়। সর্বত্রই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। " সত্যি ফালগুনের প্রতি পরতে পরতে প্রকাশ পায় বাঙালিয়ানা ঐতিয্য। বসন্তকে বরণ করতে দীর্ঘদিন থেকে আমাদের দেশের ফ্যাশনে হাউসগুলোতে চলে আসছে নানা আয়োজন। তারা বসন্তের উপযোগী বিভিন্ন পোশাক তৈরি করেন।

আমার কাছে মনে হয়- ফাল্গুন মানেই চির তারুণ্। প্রতিটি মানুষ সর্বদা তরুণ থাকতে পছন্দ করে-তাইতো দেখি-বসন্তের পোশাকে বাসন্তী রঙ, লেমন হলুদ, টিয়া হলুদ, লাল রঙ এর প্রাধান্য। বিভিন্ন পোশাকে থাকে ফুলের সমাহার ও প্রজাপতি। মেয়েদের জন্য তাঁতের শাড়ী ও দেশের জন্য তাঁতের কাপড়ের মানানসই পোশাক থাকে। আমাদের দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোতে দিন দিন পয়লা ফাল্গুনের চর্চা বাড়ছে।

তারা পোশাকে ঐতিহ্যের ধারা বজায় রেখে গোল্ডেন ইয়েলো রঙকে প্রাধান্য দেয়-যা মুলত ফালগুনেরই রঙ। বস্নতের জন্য স্পেশালী মেয়েদের জন্য শাড়ি এবং ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবী তৈরী করে থাকে। অন্যদিকে নগর জীবনে ব্যস্ততা বাড়ায় ফালগুনকে ঘিরেই সেলোয়ার কামিজ, ফতুয়া টপস্ও তৈরি করছে। এগুলো সবই যেনো বসন্তের সাথে মিলে যায়! বাঙালিরা পয়লা ফাল্গুনকে বরণ করে নেয় নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠান।

নাচ, গান, কবিতা কোনো কিছুই বাদ পড়ে না উৎসবে। বাঙালিরা নাচে, গায়, আনন্দ করে। প্রতিবছরই জাতীয় বসন্ত উৎসব পরিষদ বড় ধরনের আয়োজন করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আলাদাভাবে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চও থাকে উৎসব মুখর।

পয়লা-ফাল্গুন বাঙালিদের জন্য একটি বিশেষ দিন। এটি বসন্তের মাতালে হাওয়ায় মেতে ওঠার দিন। শেকড়ের টানে ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব বাঙালীর মিলিত হওয়ার দিন। এ দিনে তাই রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, "আহা আজি এ বসন্তে, কত ফুল ফোটে, কত পাখি গায়"।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।