মিচেল জনসন, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের এখন মহাতারকা। অথচ মাস কয়েক আগে ক্রিকেট থেকেই হারিয়ে যেতে বসেছিলেন এই বাঁ হাতি পেসার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাসেজে অদ্ভুত 'দর্শন' গুম্ফ রেখে যেমন বিস্মিত করেছিলেন সবাইকে, তেমনি ফিরে পেয়েছিলেন নিজেকে। সিরিজে ৩৭ উইকেট নিয়ে হোয়াইটওয়াশ করেছিলেন ইংলিশদের। অদ্ভুত দর্শন গুম্ফের পর তরতরিয়ে উপরে উঠেছে তার গ্রাফ।
হয়তো জনসনকে দেখেই উদ্বুব্ধ হয়েছেন ফাওয়াদ আলম। রেখেছেন গুম্ফ। আর তাতেই কথা বলতে শুরু করেছে তার ব্যাট। প্রায় চার বছর পর জাতীয় দলে ডাক পেয়েই আপন আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন ফাওয়াদ। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
কাল ফাইনালে খেললেন ১১৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। যে ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান নামের পাশে লিখে নেয় ৫ উইকেটে ২৬০ রান। অবশ্য ফাওয়াদের দিনে উজ্জ্বল ছিলেন শ্রীলঙ্কান পেসার ল্যাসিথ মালিঙ্গাও। আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নেন এই লঙ্কান।
পাকিস্তানের ইনিংসে রান করেছেন অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকও।
মালিঙ্গার ঝড়ে ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন পুরোপুরি কোণঠাসা পাকিস্তান, তখন মিসবাহকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে শক্ত গাঁথুনি দেন ফাওয়াদ। দুজনে ৩২.১ ওভারে যোগ করেন ১২২ রান। মালিঙ্গার চতুর্থ শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৬৫ রান করেন মিসবাহ। অধিনায়ক বিদায় নেওয়ার পর পঞ্চম উইকেটে ফাওয়াদ আবারও জুটি বাঁধেন উমর আকমলের সঙ্গে। দু'জনে মাত্র ১৩ ওভারে যোগ করেন ১১৫ রান।
শেষ ওভারে আকমল যখন সাজঘরে ফিরেন, তখন তার স্কোর ৫৯।
রান করেছেন মিসবাহ, আকমল। কিন্তু প্রায় চার বছর পর খেলতে নেমে যেভাবে খাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা দলকে টেনে তুলেন ফাওয়াদ, এক কথায় তাকে অপুর্ব বলা যায় কালক্ষেপণ না করেই। ১৮ রানে দলের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের বিদায়, তারপরও অসামান্য দৃঢ়তায় দুই দুটি শতরানের জুটি গড়েন ২৮ বছর বয়সী এই বাঁ হাতি। চাপের মুখে খেলতে নেমে ফাওয়াদ প্রথম ৫০ রান করেন ৯১ বলে।
যাতে ছিল চারটি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। ৫১ থেকে ৭৫ রান করেন মাত্র ১৯ বলে। পরের ২৫ করেন আরও দ্রুত, ১৬ বলে। নব্বইয়ের ঘরে এসে যখন সব ব্যাটসম্যানের পা কাঁপতে থাকে, কাল সেই কাঁপুনির কিছুই দেখা যায়নি মিরপুরের ২২ গজের ধূসর উইকেটে।
উল্টো ৯৪ থেকে থিসারা পেরেরাকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে তুলে নেন ২৯ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ইনিংস খেলেই আনন্দে ব্যাট তুলে ছুটে যান সাজঘরের দিকে। এই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের একটাই কারণ, ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে সাজঘরে ফিরেছিলেন ফাওয়াদ প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে। ২০১০ সালে দুবাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ০ রান করার পর বাদ পড়েছিলেন তিনি। চার বছরে সিন্ধু নদে জল গড়িয়েছে অনেক।
অনেক সিরিজও খেলেছে পাকিস্তান। কিন্তু নির্বাচকদের নজর কাড়তে পারেননি ফাওয়াদ। তখন মনে হচ্ছিল ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই বাকি সময় পার করতে হবে তাকে। কিন্তু অদম্য মানসিকতার ফাওয়াদ ফিরে আসেন দলে। এরপর তো শুধুই গল্প।
এশিয়া কাপে টানা দুই ম্যাচে ৭৪ ও ১১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে পোক্ত করে নেন নিজেকে।
এশিয়া কাপ ফাইনালের প্রথম সেসনটা যদি উজ্জ্বল হয় ফাওয়াদ আলোয়, তাই বলে মালিঙ্গা কিন্তু কম যাননি। আসরের প্রথম ম্যাচে ১৬ বলের বিধ্বংসী স্পেলে ৫ উইকেট নিয়ে একাই হারিয়েছিলেন পাকিস্তানকে। কাল চার স্পেলে বোলিং করে মালিঙ্গা আসরের একমাত্র বোলার হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো নেন ৫ উইকেট। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
দ্বিতীয় স্পেলে একটি এবং শেষ স্পেলে একটি। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ৫৬ রানের খরচে ৫ উইকেট। তবে উইকেট সংখ্যা হতে পারত ৬টি। যদি কাভারে গুম্ফধারী ফাওয়াদের ক্যাচটি নিতে পারতেন চাতুরাঙ্গে ডি সিলভা। তারপরও ফাওয়াদ আলোর মাঝেই কাল তারা হয়ে জ্বলেছেন মালিঙ্গা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।