গতকাল হঠাৎ করে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স উড্ডয়নের কিছু পরে মালয়েশিয়ান এভিয়েশন অথরিটির রাডার স্ক্রিন থেকে হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া, তারপর দক্ষিণ চায়নার সাগরে বিধ্বস্ত হওয়া অথচ বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার কোন সাইন বা রেকেজ পাওয়ার মতো কোন আলামত না মেলা, মন্দের ওপর যা পাওয়া গিয়েছে, তা শুধু তেলের স্লিক অংশ সাগরের পানির উপর ভেসে থাকা, যা থেকে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত চীনের সি-১৩০ রেস্কিউ টিমের সাথে ভিয়েতনামের একজন সাংবাদিক বিশ্ব মিডিয়াকে জরুরি বার্তার মাধ্যমে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন, যা থেকে বিশ্ব মিডিয়া ও এভিয়েশন এক্সপার্টরা ধরেই নিয়েছেন, হতভাগ্য বোয়িং৭৭৭ ২৩৯ জন যাত্রী সহ চীন সাগরে ডুবে গিয়েছে। কেননা ঘটনার পর থেকে চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর যৌথ উদ্ধারকারী টিম তন্ন-তন্ন করে চীন ভিয়েতনামের মধ্যবর্তী চীন সাগরে অভিযান পরিচালনা করে, ৭ ঘণ্টার নিরবচ্ছিন্ন সাগরের ১২০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অভিযানের পর হতভাগ্য বিমানের ধ্বংসাবশেষের কোন আলামত ওরা পায়নি, কেবলমাত্র ঐ স্থানের পানির উপর ভাসমান তেলের স্লিকাংশ ছাড়া।
ঘটনার সময় মালয়েশিয়ার এই বোয়িং ২৩৯ যাত্রীসহ, যেখানে আমেরিকান, কানাডিয়ান, চীনের নাগরিকেরাসহ একজন শিশুও ঐ সময় যাত্রী ছিলো, মালয়েশিয়া থেকে চীনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। আবহাওয়া তখন এবং চীন ভিয়েতনাম সাগরের মধ্যবর্তী এলাকা সহ সর্বত্র ভালো ছিলো, আকাশ ছিলো পরিষ্কার। মালয়েশিয়ান এভিয়েশন অথরিটির রাডার স্ক্রিনে বিমানটি তখনো পরিষ্কার সিগন্যাল পাঠাচ্ছিলো।
বিমানটির পাইলট ৫৩ বছর বয়স্ক জাহেরী আহমদ শাহ অত্যন্ত দক্ষ এবং ১৮,০০০ মেইল বোয়িং চালনার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ এই পাইলট গত তিন দশক পর্যন্ত তিনি বোয়িং৭৭৭ চালিয়ে আসছিলেন। দক্ষিণ চীন সাগর অতিক্রমের সময় বোয়িং৭৭৭ ৩৫,০০০ ফুট উপরে উঠে হঠাত করে এভিয়েশন অথরিটির স্ক্রিন থেকে উদাও হয়ে যায়, কোন রকমের সামান্যতম কন্টাক্ট বা বিপদের সংকেত না দিয়েই।
এভিয়েশন ম্যাগাজিন ফ্লাইট গ্লোবালের এক্সপার্ট ডেভিড লোরম্যন্ট বলেন, ৩৫,০০০ ফুট উপরে উঠার পরেও প্লেনটির পাইলটের যথেষ্ট সময় থাকে কোন রূপ দুর্ঘটনায় পতিত হলে এরকম পরিস্থিতিতে পানিতে ডুবে যাওয়ার আগে রেডিও সিগন্যাল বা কন্টাক্ট করার, সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স এর পাইলট তা করেননি বা করতে সক্ষম হননি।
আরেক এক্সপার্ট ক্রিস ইয়েট্স বলেন, মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সের সেফটি এবং দক্ষতা রয়েছে। তথাপি দুটি সম্ভাব্য বিষয় হতে পারে, ০১) বিমানটির সেফটি চেক যথাযথ বা রক্ষণাবেক্ষণ আপ টু দ্য ডেট ছিলোনা ০২)সম্ভাব্য সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হতভাগ্য এই বিমানটি।
মালয়েশিয়ান এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বিমানটি মিসিং কিংবা সাগরে ডুবে যাওয়ার পর পরই ২৩৯ প্যাসেঞ্জারের লিস্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে ৬৩ নম্বর ও ১০১ নম্বর সিরিয়ালের দুজন প্যাসেঞ্জার যারা ইটালিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ক্রিস্টিয়ান কোজেল ও লুইজিয়ান মারালডির পাসপোর্ট দুই বছর আগে থাইল্যান্ড থেকে চুরি গিয়েছিলো বলে অস্ট্রেলিয়া ও ইটালিয়ান সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। ইটালিয়ান নাগরিক তার পাসপোর্ট হারিয়ে বা চুরি যাওয়ার ফলে বিকল্প পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে নতুন পাসপোর্ট নিয়েছেন বলে ইটালি বলছে।
মালয়েশিয়ান এভিয়েশন অথরিটির বরাত দিয়ে এভিয়েশন এক্সপার্টরা বলছেন, এই দুই নাগরিকের চুরি যাওয়া পাসপোর্ট নতুন রহস্যের জন্ম দিয়েছে। কেননা পরীক্ষা করার পর এখন ধরা পড়েছে ঐ দিন যে দুজন প্যাসেঞ্জার ৬৩ নম্বর ও ১০১ নম্বর সিরিয়ালের বোর্ডিং পাসধারী বোয়িং এ যাত্রী হয়েছিলেন, তাদের দুজনের পাসপোর্ট চুরির বা নকল আইডি।
আর এই দুই চুরির পাসপোর্ট ধারীদের ঘিরেই গোয়েন্দা এনালিষ্ট আর এভিয়েশন এক্সপার্টরা বলছেন হতভাগ্য ঐ বিমানের ২৩৯ যাত্রী হয়তো কোন সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হয়েছেন। যদিও ২৪ ঘণ্টার মতো ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কিছু সময়ের পরেই এ রকম কোন উপসংহার টানতে সম্মত নন মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ, এভিয়েশন এক্সপার্ট বা খোদ আমেরিকান এক্সপার্টরাও।
বিশ্বব্যাপী বোয়িং৭৭৭ ওয়ার্ল্ড পারফর্ম্যান্স এবং সেফটি রেকর্ড খুবই উঁচু মানের। এমনকি মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সেরও রয়েছে খুব ভালো সেফটি রেকর্ড। বোয়িং৭৭৭ রোলস রয়েস ট্রেন্ট ৮৯২ ইঞ্জিন সমৃদ্ধ, বিশ্বের মধ্যে নিরাপত্তার মাপকাঠিতে সেরা।
বিগত ১৯ বছরের মধ্যে একবার শুধু এই বোয়িং৭৭৭ আশিয়ান এয়ারলাইন্সের জেট সানফ্রানসিসকোতে আগুন লেগেছিলো, ঐ সময় মাত্র তিনজন নিহত হয়েছিলেন।
একই সময়ে সাংবাদিকরা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাককে ঘিরে ধরলে তিনিও বলেন, এটা খুবই আর্লি স্টেইজ যে, এখুনি কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর, তবে আমি সকলকে আশ্বস্ত করছি আমরা সকল ধরনের তথ্য নিয়েই কাজ করছি।
চীনের হোটেলের নিচে যেখান থেকে উদ্ধার কাজ ব্রিফ করা হচ্ছিলো, শেষ রাতে এসে দেখা গেলো অপেক্ষমান যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল ভারী হয়ে উঠলো, কেননা দিন শেষে গভীর রাতেও হতভাগ্য বোয়িং ৭৭৭ এর যাত্রীদের সম্বন্ধে মালয়েশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর এর উদ্ধার কর্মীদের কেউই কোন সংবাদ দিতে পারলেন না। চোখে একরাশ জল আর বুকে কষ্টের পাহাড় বেধে যাত্রীদের স্বজনেরা এখনো অপেক্ষমাণ কেউ বুঝি কোন সান্ত্বনার বাণী শোনাবেন তাদের।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।