আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলাতি কুত্তা

কুত্তারে যে ভদ্রসমাজে কুকুর নামে ডাকা হয় সেটা হয়ত সবুজবাগ মহল্লার লোকজন ভুলে গিয়েছিলো অথবা কুত্তাকে তারা কখনো কুকুর নামে ডাকার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে নাই। কিন্তু যখন সবুজবাগ মহল্লায় একটা মালিক বিহীন পা-ভাঙ্গা বিলাতি কুত্তার আবির্ভাব হয় তখন ওই কুত্তাকে "বিলাতি কুত্তা" কইতে তাদের সংকোচ লাগে। আবার "বিদেশি কুকুর" শব্দদ্বয়েও তারা ঠিক স্বাছন্দ বোধ করেনা। তখন তারে তারা টমি নামে ডাকা শুরু করে। টমি কেন? কারন টমি ছাড়া বিলাতি কুত্তার আর কি নাম হইতে পারে সেইটা তাদের জানা ছিল না।


সবুজবাগ মহল্লার লোকজন যারা মোড়ের টংয়ে বইসা দেশ-কালের নিকুচি করে অথবা মফিজের পুড়ির দোকানে বইসা দেশ উদ্ধারের উপায় বাতলায়, তাদের নিয়মিত আলোচনায় বিলাতি কুত্তা ঢুকে পড়ায় তারা খানিকটা বিরক্ত হয়। তারা জানতে চায় "কুত্তডা আইলো কোত্থনে" তাদের প্রশ্নের অনুসন্ধানে জানা যায় চা দোকনদার মজিদ এই বিলাতি কুত্তা মানে টমিরে প্রথমে তার টং-দোকানের ঝাপির পাশে দেখতে পায়। চা দোকনদার মজিদ টমি আবিষ্কারের ক্রেডিট নিয়া নিতাছে দেইখা টংয়ের অদূরে দাঁড়ানো হাফিজ কয় "হাওয়ার পো, মিছা কথা কও কেলা?বিয়ান বেলা, আমিই তো তোমারে দেখায়া কইলাম, “এই ল্যাংড়া কুত্তাডার মালিক কেডা?" মজিদ নাকি হাফিজ এই তর্ক জমার আগেই মজিদ পেছন হটে, বলে "হ, এইডার মালিক কেডা?"। হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া এই কুকুরের মালিক বের করা সবুজবাগ মহল্লার লোকজনের জন্যে কঠিন হয়ে দাড়ায়। তখন মালিকবিহীন বিলাতি কুত্তার মালিক হইতে অনেকেই আগ্রহ দেখায়।

মুফতে একটা বিলাতি কুত্তার মালিক হওয়ার চান্স হাত ছাড়া করতে চায়না কেউই। কিন্তু বিলাতি কুত্তার ভরন-পোষন সংক্রান্ত কথা আসলে তারা দ্বিতীয় বার ভাবে। অতঃপর তারা সিদ্ধান্তে আসে মালিক না পাওয়া পর্যন্ত এই বিলাতি কুত্তার ভরন-পোষন তারা প্রত্যেকে বহন করবে। ফলাফলে মজিদের টং অথবা মফিজের পুড়ির দোকান ছেড়ে বিলাতি কুত্তা ঢুকে পড়ে সবুজবাগ মহল্লার মানুষের প্রতিদিনের যাপিত-জীবনে। তাদের পারিবারিক অথবা ব্যক্তিগত আলোচনায় বিলাতি কুত্তা সংক্রান্ত একটা বাড়তি অংশ আংশ যুক্ত হয়।

কে কিভাবে বিলাতি কুত্তার আদর যত্ন করছে কিংবা কার সাথে বিলাতি কুত্তা থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে সেটা নিয়ে মজিদের টংয়ে অথবা মফিজের পুড়ির দোকানের আলোচনা জমে। বাড়ি ফিরলে হাফিজের বউ জিগ্যাসা করে, মজিদের মেয়ে জানতে চায়; তারা বলে "বিলাতি কুত্তার কি খবর?"
বিলাতি কুত্তার বিলাতি খাওন আনতে মফিজ একবেলা দোকান বন্ধ কইরা কাটাবন মার্কেট যায়। ফিরার টাইমে পাশের খামারবাড়ি মহল্লার সবাইরে জানান দিয়া আসে - সবুজবাগ মহল্লায় কেবল নেড়ি কুত্তা না বিলাতি কুত্তাও থাকে। খামারবাড়ি মহল্লার লোকজন ব্যাপারটা প্রথমে উড়াইয়া দেয়, কয় "ছাল নাই কুত্তার বাঘারাম ডাক"। . তবে তাদের অস্বস্থি টের পাওয়া যায়।

গত মাসে তারা কেরাম খেলায় সবুজবাগরে হারাইয়া ট্রফি নিছে। কুত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে সবুজবাগের আগাইয়া যাওয়া তাদের পছন্দ হয় না। ছুতো ধরে তাদের কেউ কেউ মফিজের পেছন পেছন টমিরে দেখতে আসে। টমিরে দেইখা তারা কয় "হালাগো ল্যাংড়া কুত্তা লইয়া ভাব দেহ?"। . কথা শুইনা হাফিজ হাসে কয় "হাতি মরলে লাখ টেকা- ল্যাংড়া হইলেও এইডা বিদেশী কুত্তা”।

. তারপর চেহারায় বিরক্ত ফুটাইয়া কয় "আর ল্যাংড়া ল্যাংড়া মারাইতেছো কেন? পাওডাতে একটু জখম হইছে সাইরা উঠব"। . তারপর সবুজবাগ এলাকার লোকজন আমোদ নিয়া খামারবাড়ির এলাকার লোকজনের পিত্তি পোড়া গন্ধ শুঁকে। বাড়ি ফিরলে হাফিজের বউ জিগ্যাসা করে, মজিদের মেয়ে জানতে চায়; তারা বলে "খামারবাড়ি মহল্লার মাইনষের নাকি পিত্তি জ্বলে?"
সবুজবাগ মহল্লায় হঠাৎ কইরা যেমন বিলাতি কুত্তার আবির্ভাব হইছিল তেমনি হঠাৎ কইরা হারাইয়াও যায়। তারা টমির হারাইয়া যাওয়ার পিছনে খামারবাড়ি মহল্লার কালো হাতের যড়যন্ত্র খোঁজে। খামারবাড়ি মহল্লার লোকজন কয় "বিলাতিকুত্তা নিশ্চইয় পা ঠিক হইতেই মালিকে কাছে চইল্লা গেছে"।

. এই নিশ্চিত যুক্তি সবুজবাগ মহল্লার লোকজন মানতে অস্বীকার করে। তারা খামারবাড়ি মহল্লার বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি করে। সেই রাইতে হাফিজের বউ জিগ্যাসা করে, মজিদের মেয়ে জানতে চায়;তার চোখ মুছে বলে "টমিরে পাওন গেছে?"
বিলাতি কুত্তা হারাইয়া যাওয়ার শোক সবুজবাগ মহল্লার সবার উপর নাইমা আসে। মজিদের টংয়ের সামনে হাফিজ ভেউ ভেউ কইরা টমির শোকে কান্দে। সেই কান্দনে চোখের পানি আটকাইয়া রাখতে বাকিরা আসমানের দিকে তাকাইয়া থাকে।

তবে সবুজবাগ মহল্লার নেড়ি কুত্তাদের উপর এর কোন প্রভাব পড়ে না। তারা আগের মতই ডাষ্টবিনের ময়লা ঘাটে আর রাইত হইলে মহল্লার রাস্তায় পাহাড়া দিয়া বেড়ায়; সন্দেহজনক লোকের আনাগোনা দেকলে ভৌউউউ করে চিল্লায়। তখন হাফিজের বউ কিংবা মজিদের মেয়ে ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে অনুযোগ করে, "নেড়ি কুত্তাগুলার যন্ত্রনায় ঘুমানো গেলনা!"
--তানভীর রাব্বানী

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।