আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লন্ডনে বিলাতি বাচ্চু !পর্ব ২ (ছবি ব্লগ)

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল প্রথম পর্ব এসে তো পৌছালাম। কিন্তু বার বার একটা জিনিস খটকা লাগছে। সাদা কালো ইন্ডিয়ান নারী পুরুষ সবাই আমার দিকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে ! ঘটনা কি? শুধু পুরুষ তাকালে দিপুমনিকে মনে পড়তো। কিন্ত নারীরাও? এই রে ! নাহ ! মান ইজ্জত তো আর কিছু থাকলো না। হারামের উপার্জন বলেই কিনা, বুক পকেটে পেয়ারা শালা এমনভাবে উচু হয়ে রয়েছে যে মনে হচ্ছে...(শরমের কথা, বলা যাবে না) যেই মুহুর্তে পকেট খালি করবো ওই সময় ইমিগ্রেশন অফিসার ডাক দিলো।

ইনি ইন্ডিয়ান বলেই মনে হচ্ছে। ইংরেজরা যখন ইন্ডিয়া দখল করেছিল, তখন ইনারাই মনিব ভক্তি দেখিয়ে চোখের মণি হয়ে ছিলেন। তার পুরস্কার স্বরুপ তাদের বংশধররা এখন জাতিতে ইংরেজ হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই ব্যাটা মুখ এমন কালো করলো যেন, সতিন দেখেছে। এমন করে নাক সিটকালো যেন ব্রাক্ষ্মণের গায়ে নমশুদ্রের ছোয়া লেগেছে।

লাগেজ নেই তাই বাচোয়া। কিন্তু আমার বুকের দিকে তারও নজর গেলো। - উহা কি আছে? - পেয়ারা। খাবেন? বলে যেই পকেট থেকে পেয়ারা বের করেছি অমনিই বোম্ব বোম্ব বলে ব্যাটা মাটিতে শুয়ে পড়লো। তার ওমন গগনবিদারি শব্দে আশে পাশে যারা ছিল সবাই পপাত ধরণিতল।

নাহ যাত্রার শুরু থেকেই দখি খালি খুফা। কোত্থেকে মুহুর্তের মধ্যেই আমাকে এক দল বৃটিশ পুলিশ ঘিরে ফেললো। সবাই ভয়ংকর সব মারণাস্র তাক করে রয়েছে। পেয়ারা হাতে নিয়েই হ্যান্ডস আপ পজিশনে। এদের তো বিশ্বাস নাই বাবা।

পরে দেখা যাবে গুলি করে মেরে ফেলবে। এর পর বলে দিবে ইসলামিক সন্ত্রাসি লন্ডন বিমান বন্দরে নিহত। সারা দুনিয়াতে তো এই চলছে। তাদের হাতে মিডিয়া, তারা যা বলবে তাই প্রচারিত হবে। কেউ খোজ করে দেখবে না, এই বাচ্চু নিতান্তই ছাপোষা ১৪,৭০০ টাকা বেতনের এক অপদার্থ সাংবাদিক।

আর মান ইজ্জতের ভয়ে বুবুও আমাকে অস্বীকার করবেন। বাংলাদেশের সুশিলরা এই ছুতায় সব মসজিদ মাদ্রাসায় তালা লাগানোর ধান্ধা করবে। আমি আল্লাহ বিল্লাহ করছি। বিয়ে খেতে এসে দেখি আমার খতম তরাবি পড়ার অবস্থা হয়েছে। কিম্ভুতকিমাকার পোষাকে একজন এসে কি সব যন্ত্র দিয়ে আমার সারা শরিরে কি যেন চেক করলো।

এর পর খুব সাবধানে হাত থেকে পেয়ারা নিয়ে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখলো। পকেট চেক করে বাকি দুইটা পেয়ারাও নিলো। সভ্য দেশের কারবারই আলাদা। কিছুক্ষনের মধ্যেই পেয়ারাগুলি বাপ দাদার ১৪ গুস্টির খবর বের করে অবশেষে মুক্তি মিললো। হাফ ছেঁড়ে বাচলাম।

কি ঝামেলারা রে বাবা ! আগে জানলে কে আসতো? এয়ারপোর্টের বাইরে যেতে যেতে ওই ইন্ডিয়ানকে খালি বললাম - তুই একটা ভুদাই। শালা ঘাড় ত্যাড়া। ভেবেছিলাম কোন প্রশ্ন করবে না। কিন্ত না। জিজ্ঞেস করেই বসলো - ইহার মিনিং কি আছে? আবার কোন ঝামেলা হয়।

তাই বলে দিলাম - ইহার মানে হইলো, ইউ গ্রেট ম্যান। সে খুশিই হলো মনে হয়। বললো - হামি আর কি ভুদাই আছে ! মাই বাপ, দাদা, পরদাদা হামার চেয়েও গ্রেট ভুদাই ম্যান ছিল। ভালোয় ভালোয় বের হলাম এয়ারপোর্ট থেকে। এদিকে আমার ভাগ্য দেখে বুবু মহা বিরক্ত ! কিন্তু কিছু বলতেও পারছেন না।

কারণ দোষ তো আর আমার না ! আমাদের রিসিভ করতে মিজারুল ভাই এসেছিলেন। বুবুকে জিজ্ঞেস করলাম - উনারে বদলি করলা কেন? - কি করমু ক? দিপুমনি তো এক সেকেন্ডের জন্যও দেশে থাকতে চায় না। খালি হুদা কামে উইড়া উইড়া বেড়ায়। ওর লগে তাল দিতে গিয়া মিজারুলের জান কালা হইয়া গেছিলো। তাই হাতে পায়ে ধইরা নিজেই বদলি হইছে।

হু ! ঠিক তো । দিপুমনি যেমন বিদেশ বেড়ায় তেমনি আমাদের পাড়া বেড়ানি জিকুর মায়েও এত বেড়ান বেড়ায় না। তার সাথে সাথে ঘুরতে গেলে আমাদের ময়ুরি বেগমও শুকিয়ে তরুনি কালের ববিতা হয়ে যাবে। ওমা ! এই নাকি বিলাত ? এর জন্য এত্ত গপ্পো আর এত পাগলামি? এতো মনে হয় যেন কলকাতা শহর। খালি ধুতির বদলে প্যান্ট শার্ট পড়া লোকজন।

বিল্ডিং দেখলে মনে হয় সেই লর্ড ক্লাইভের আমলেই পড়ে আছে। পুরানা বিল্ডিং যদিও বেশ ঝকঝকে পরিস্কার আর নতুন রঙ করা। আর রাস্তার অবস্থা কি ভালো হলেও বেশ সরু গলি। মিরপুর রোডের তিন ভাগের একভাগ হবে। যাই হোক, অবশেষ হোটেলে এসে পৌছালাম।

প্রথমে শেরাটন দেখে একটু মন খারাপ হয়েছিল। যার তার সাথে তো আসিনি। ঠাটবাটের সাথে না থাকলে কিসের কি? তবে বাইরে থেকে দেখে খারাপ মনে হলো না। চলে আর কি ! কিন্তু ভেতরে ঢুকে আমার পড়ে যাবার জোগাড়। বড় সোন্দর্য ! এবার নতুন ক্যাচাল।

প্রায় জনা পঞ্চাশেক লোকজন নিয়ে বুবু তো হাজির। কিন্ত এদের থাকা খাওয়ার জন্য যে বিশাল বিল সেটা দিবে কে? যেহেতু বেসরকারি সফর সেহেতু বৃটিশ সরকার সেটা দেবে না। তবে এই সব বিল ফিল দেয়া বুবুর কাছে তো নস্যি ! কিন্ত কি মনে করে বুবু আচলের খুটা ঢিলে করছেন না। ওইদিকে জার্নিতে আমাদের সবার অবস্থাই কাহিল। ্তার মধ্যে খাওয়া দাওয়াও তো করতে হবে।

তবে মুখ ফুটে কারোই কিছু বলার সাহস হলো না। অনেক হাতে পায়ে ধরেও বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে খরচ ম্যানেজ করা গেলো না। শেষ পর্যন্ত কি সব জানি করে বাংলাদেশের রাস্ট্রিয় খরচে ব্যাবস্থা হলো। মানে বুবু বিয়ে খেতে বিদেশে এসেছে, যার ব্যায়ভার দেবে বাংলাদেশের জনগণ। আর দেবে নাই বা কেন? জাতির আপা এসেছেন জাতির নাতনির বিয়ে খেতে।

হাজার হোক, বাংলাদেশের মানুষের যে ঋণ এই শেখ পরিবারের কাছে, তাতে এই সব খরচ তো অতি তুচ্ছ ! তবে মনটা খারাপ হলো অন্য কথা চিন্তা করে। কিছুদিন পর রোজা। দেশের লাখ লাখ মানুষ, প্রবল ইচ্ছা সত্ত্বেও যেখানে ইফতার আর সেহেরিতে তেমন কিছু খেতে পারবেন না, সেখানে বুবুর পেছনে এই বিশাল ব্যয় করাটা খুব ন্যায্য মনে হলো না। তবে আমাদের থাকার বাইরের অংশ দেখে সব ভুলে গেলাম। আহা ! বাংলাদেশের মানুষ মরুক বাচুক আমার কি? এই সুন্দর যায়গায় থাকতে পারবো, এর চেয়ে সুখের আর কি হতে পারে? চলবে...  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।