সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের দায়িত্ব নিতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ভিত্তিক ফার্ম ডিপি ওয়ার্ল্ড। বিষয়টি নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক হবে। ওই সভায় দেশের বৃহত্তম এ প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারে কোম্পানিটি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের আগে পাঁচ বছরের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করার শর্ত দিয়েছে কোম্পানিটি। টার্মিনাল পরিচালনার পর তারা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ডিপি ওয়ার্ল্ড হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পোর্ট অপারেটর যারা এই প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর আগে আরও দুটি দেশের কোম্পানি এই প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। নেদারল্যান্ড সরকারের মালিকানাধীন কোম্পানি রটেরডাম পোর্ট এবং চায়নিজ কোম্পানি চায়না হারবারও গভীর সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা সফরের সময় ইউএই'র বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী শেখ লুবনা তার দেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগসহ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব চাওয়া হয়।
জানা গেছে, সরকার টু সরকার ভিত্তিতে ইউএইর প্রস্তাবনা খতিয়ে দেখতে দশ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গতবছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রস্তাবনাসহ অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলোও খতিয়ে দেখে। শেষে সোনাদিয়ায় সরকার টু সরকার ভিত্তিক গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে ইএইউর প্রস্তাবনাটিই তাদের কাছে উপযুক্ত মনে হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করে।
২০০৯ সালে জাপানের প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি বিশেষজ্ঞ কোম্পানি সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তারা ২০১০ থেকে ২০২০, ২০২০ থেতে ২০৩৫ এবং ২০৩৫ থেকে তিন ধাপে ২০৫৫ সালের মধ্যে বন্দর নির্মাণের কাজ শেষ করার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। তিন ধাপের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ করতে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা এবং শেষ পর্যায়ের কাজ শেষ করতে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। বন্দর নির্মাণে মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ সরকার এবং বাকি ৭০ শতাংশ অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, প্রথম পর্বের কাজ শেষ করতে পারলে ১১টি জেটি বার্থের মাধ্যমে বন্দরের বাণিজ্যিক পরিচালনা সম্ভব হবে।
২০৩৫ সাল নাগাদ বন্দরে যোগ হবে আরও ২৫টি জেটি বার্থ। বন্দরের তৃতীয় বা শেষ পর্বের কাজ শুরু হবে ২০৩৫ সালে এবং তা শেষ হবে ২০৫৫ সালে। বন্দরের কাজ শেষ হলে জেটির সংখ্যা দাঁড়াবে ৯৬টি। তখন বন্দরটিতে ৯৬টি জাহাজ একসঙ্গে নোঙর করে পণ্য ওঠা-নামানোর কাজ করা সম্ভব হবে। গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে কঙ্বাজারের সোনাদিয়াতে টানেল, ট্রান্স-এশিয়ান রেল ও মহাসড়ক, বিদ্যুৎকেন্দ্র শিল্পপার্ক, পর্যটন জোনসহ আধুনিকায়ন করার বিশাল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে যে হারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে করে খুব বেশি দিন আর চট্টগ্রাম বন্দর দেশের সামগ্রিক আমদানি-রফতানির চাপ সামলাতে পারবে না। দুটি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রামে নয় মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ নোঙর করতে পারে না। আর মংলায় নোঙর করতে পারে সাত মিটার ড্রাফটের জাহাজ। প্রস্তাবিত সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরে ১৪ থেকে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করতে পারবে। কর্মকর্তাদের মতে, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হলে বাংলাদেশে হবে আঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র।
এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক চেহারা বদলে যাবে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন ও শ্রীলঙ্কার বন্দরের সঙ্গে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়ার আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমদানি-রফতানি ব্যয় এবং কনটেইনার পরিবহনে সময়ের অপচয় অনেক কমে যাবে। সরকারের রাজস্ব আয়ও চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে ৮ থেকে ১০ গুণ বেড়ে যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।