ঠিক এই মুহুর্তে নিজেকে একটা বাঘের মতোই মনে হচ্ছে সুমনের। বাঘ যেভাবে শিকার ধরার পূর্বমুহূর্তে ঘাপটি মেরে থাকে, ঠিক তেমনি সে দাঁড়িয়ে আছে সুযোগের অপক্ষায়। এ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। একবার হাতছাড়া হলে আর কখন সুযোগ আসে তা বলা যায় না। তাই সে বদ্ধপরিকর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সুমনের কাছে এখন সময় একটা বিরাট ফ্যাক্টর। একটা প্রাইভেট কোম্পানির বড় অফিসার পদে আছে সে। এক ঘন্টা বাদেই ইস্ট ওয়েস্ট কোম্পানির লতিফ সাহেবের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। সেটা মিস হলে পুরো ডিলটাই বাতিল হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বসের কাছে সুমনের কদর অনেকখানি কমে যাবে।
তাই কিছুতেই প্রথম সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না।
সময় স্বল্পতা ছাড়াও আরেকটা ব্যাপার আছে। এরকম অবস্থায় বেশ আনইজি ফিল করছে সে। প্রথম সুযোগটা মিস করলে এরকম বিদঘুটে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আরো কিছুক্ষন থাকতে হবে তাকে, যা তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যাবে মানিয়ে নিতে। এটা ঠিক যে, এরকম অবস্থায় আগে অনেকবার পড়েছে সে।
তবে এবারের মতো অনভ্যস্ত এবং বিচলিত আগে কখনো লাগেনি। হুট করে নিজের এ পরিবর্তনে কিছুটা অবাক হয় সে। সদ্য প্রাপ্ত কর্পোরেট চাকরিটা তবে তাকে পাল্টেই দিল! রবির কথাটি তার কান বেজে উঠে হঠাৎ। চাকরিতে জয়েন করার ঠিক আগের দিন তার বন্ধু রবি হঠাৎ করে বলে উঠেছিল, চাকরির পর তো ঠিকই পাল্টে যাবি। রবির কথাটি সেদিন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল সুমন।
পৃথিবীর সবকিছু আমূল পাল্টে গেলেও এই সুমন কখনো পাল্টাবে না। এখন বুঝতে পারছে সে কথাটি নেহায়েৎ ভুল ছিল। মানুষ নিজেকে চিনতেও ভুল করে তাহলে!
যা হোক। সময় ঘনিয়ে আসছে। আর হয়তোবা পাঁচ-ছ মিনিট লাগবে।
কিছুতেই সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না। আশপাশে তাকিয়ে দেখে সুমন। চারপাশে তারই মতো ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা আরো কয়েকজন তাকে হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। সে কি পারবে ঠিক সময়মতো সবার আগে কাজটা করতে? যদি মিস হয়ে যায়! তবে তো যুদ্ধে ইস্তফা দিয়ে চলে যেতে হবে। নাহ! চলে যাওয়াটাওতো চোখে লাগবে সবার।
যে করেই হোক সবার আগে করতে হবে সুযোগের সদ্ব্যবহার। যে করেই হোক।
১০, ৯, ৮... আর মাত্র কয়েক স্যাকন্ড। সামনে বসা লোকটা চেয়ার ছাড়ছে। বের হয়ে আসছে চেয়ার ছেড়ে।
সুমন চোখের পলকেই চেয়ারটা আকড়ে ধরে দুই হাত দিয়ে। সাধারন চেয়ারটিকে তার কাছে হঠাৎ মনে হয় আপাদমস্তক সোনায় মোড়া মুঘল আমলের কোন রাজকীয় মসনদ। মসনদ দখলের লড়াইয়ে আরো কয়েকটি হাত এগিয়ে আসছিল যদিও। সুমনের বিশাল শরীর এবং বিপুল শক্তির কাছে সবাই পরাস্ত হয়। চেয়ারটিতে সে বসতে পারে অবশেষে, বসতে বসতে ভাবে বিয়ের খাবারটা তবে যথাসময়েই শেষ করা যবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।