বর্তমানে পাকিস্তানের অবস্থা ভালো না। প্রতিদিন দেশটির কোথাও না কোথাও বোমা হামলা হচ্ছে। আর এই হামলার শিকার হচ্ছে নিরীহ বা সাধারণ মানুষ। এটা স্রেফ টেরোরিস্ট বা সন্ত্রাসী আন্দোলন। সন্ত্রাসী আন্দোলনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এই আন্দোলন শত্রুকে যতোটা ভীত করে, ততোটাই শঙ্কিত করে মিত্রদেরও।
সন্ত্রাসী বোমা শত্রু-মিত্র বাছাই করে না। তাইতো, বর্তমানের পাকিস্তান ও আফগানিস্তানেও দেখা যাচ্ছে আত্মঘাতী জঙ্গিদের বোমা যতো শত্রু নিধন করছে তার চাইতে বেশি করছে নির্দোষ নিরীহ স্বজননিধন। সন্ত্রাস দ্বারা কোনো মহৎ লক্ষ্য অর্জনও করা যায়নি। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত কয়েক বছর দেশের অভ্যন্তরে যতোগুলো বোমা হামলা হয়েছে, তাতে কারা মারা পড়লো? স্রেফ উত্তর একদম নিরীহ মানুষই।
উদাহরণ টানলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে রমনার বটমূলের কথা। ২০০১ এর ১৪ এপ্রিল বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব রমনার বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা সংঘটিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। ২০ জানুয়ারি ২০০১, পল্টন ময়দান, ঢাকায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি), মহাসমাবেশে এক শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে ৫ জন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সমাবেশ চলাকালে আকস্মিকভাবে বোমাটি বিস্ফোরিত হলে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয় ।
সমাবেশস্থলে এক হৃদয়বিদাক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এই ঘটনার এক ঘন্টা পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে পৃথক এক বোমা বিস্ফোরণে আরো দু’জন নিহত হন। ০৬ মার্চ (দিবাগত রাত ১টা) ১৯৯৯ টাউন হল ময়দান, যশোরে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর জাতীয় সম্মেলনের শেষদিন মধ্যরাতে নৃশংস বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হন। বোমা হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ঘটনার পরদিন ৭ মার্চ এবং ৯ মার্চ এর মধ্যে ১৯৯৯ স্থানীয় শিবির সভাপতি রেজাউল করিম ও দপ্তর সম্পাদক রিয়াজুল ইসলামসহ ৪৬ জনকে গ্রেফতার করে। আটককৃতদের অধিকাংশই জামায়াত ও শিবিরকর্মী।
এই ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯ তারিখে তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ১৪ জানুয়ারি ২০০০ মামলার শুনানি শুরু হয় কিন্তু ২১ জুন ২০০০ মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ৩ মার্চ ২০০৩ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়, মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম বা বিএনপি’র কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। ২৮ জুন ’০৬ মামলার রায় প্রদান করা হয়।
২৩ জন আসামি সবাইকে খালাস দেয়া হয়। হরকাতুল জিহাদ এ ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করে। মাত্র তিনটি উদাহরণ দিলাম। এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। সাংবাদিক সম্মেলনে বোমা হামলা, গীর্জায় বোমা হামলা, সিনেমা হলে বোমা হামলা, টিএসসির ভ্যালেন্টাইন উৎসবের বোমা হামলার দিনে উপস্থিত অন্য সবার মতো আমিও ভুক্তভোগী ছিলাম।
বোমা হামলার সাথে জড়িতদের এটুকু জানা উচিত, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং তাদের পেট্রন হিসেবে পরিচিত ও অভিযুক্ত জামায়াতিরা যতোই চেষ্টা করুক অথবা হুমকি দিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিপনার দ্বারা তারা লক্ষ্য অর্জনের পথে একপা এগুতে পারবে না। তারা তাদের অতীতের কর্মকান্ডের ও সন্ত্রাসের ব্যর্থতা থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করছেন না। বরং নতুন করে দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির হুমকি দিয়ে চলেছেন। ঢাকার কাগজগুলোতেই খবর দেখেছি, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানতে পেরেছেন, সরকারের ব্যাপক সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের মুখে আত্মগোপনকারী জঙ্গি গ্রুপগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং দেশময় ব্যাপক সন্ত্রাস সৃষ্টির পরিকল্পনা আঁটছে। অতএব আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে।
নয়তো দেশটা আবার বর্তমান পাকিস্তানের রূপ নিতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।