কেন? জবাবটা সোজা-- বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বিশ্ব (টহরাবৎংব), সময় (ঞরসব) ও স্থান (ঝঢ়ধপব) সম্পর্কে মানুষের হাজার বছরের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। এই সময়ের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মনে করেন, কোনো একদিন আসবে, যে দিন সময়ের কিংবা দুনিয়ার সম্পূর্ণ ইতিহাস লিখে ফেলা যাবে চার পৃষ্ঠায়, আর তার তিন পৃষ্ঠা জুড়ে থাকবে কেবল আইনস্টাইনের নাম! কাজেই সব বাবা-মা যদি তাদের সন্তানকে আইনস্টাইন বানাতে চান, তাদের কি দোষ দেওয়া যায়?
সব দেখেশুনে মনে হতে পারে, ছোট বেলাতেও আইনস্টাইন ছিলেন একেবারে তুখোড় ছাত্র। ক্লাশে তার জুড়ি নেই কোনো। বিজ্ঞানে আর গণিতে ক্লাসে কেবল শিক্ষকের সঙ্গে তার পাল্লা চলে। শিক্ষক যে কোনো প্রশ্ন করলেই প্রথম উত্তর দেন তিনিই, ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু ঘটনা কি আসলেই তাই?
গণিতের রাজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা হল পাই (৩.১৪)। সহজ করে বললে, বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে পাই বলা হয়। পাইয়ের মান ৩.১৪ বলা হলেও, আসলে এর মান কিন্তু এখনও সম্পূর্ণ নির্ধারণ করা যায়নি। দশমিকের পর এর মান অসীম পর্যন্ত (৩.১৪১৫৯২৬৫৩৫৮৯৭৯৩২৩৮৪৬২৬৪৩৩...)। সংক্ষেপে এর মান ধরা হয় ৩.১৪।
ঘটনাক্রমে আইনস্টাইনের জন্মও এই পাই দিবসে। ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির উল্ম শহরে, হারম্যান-পাউলিনের ঘরে তার জন্ম। কিন্তু তার ছোটবেলা কেটেছে মিউনিখে।
জন্মের সময় আইনস্টাইন বেশ নাদুসনুদুস ছিলেন। সহজে কথাই বলতে পারতেন না। কথা বলার সময় নাকি শব্দই খুঁজে পেতেন না। তোতলা অবশ্য ছিলেন না তিনি।
ছোটবেলায় বাবা তাকে একটি কম্পাস উপহার দেন।
আইনস্টাইনের কাছে এই কম্পাসটি ছিল এক বিস্ময়কর বস্তু। কাঁটাটি কেমন সব সময় উত্তর দিকে মুখ করে থাকে! কী তাজ্জব ব্যাপার!
ছয় বছর বয়সে মিউনিখেই স্কুলে যেতে শুরু করেন তিনি। আর তার মায়ের ধারণা সত্যি প্রমাণ করে তিনি সেখানে ক্রমাগত খারাপ করতে থাকেন। একে তো ঠিক মতো কথাই বলতে পারেন না, তার উপর কোনো দিনই ঠিকমতো পড়া করতেন না। পড়া না পারা স্কুলে তার নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে গেল।
সব মিলিয়ে শিক্ষকরা তাকে মোটেই পছন্দ করতেন না। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষক তো তাকে ক্লাস থেকে বেরই করে দিতেন। স্কুলে তার তেমন কোনো বন্ধুও ছিল না। বাসায় ফিরে তাসের ঘর সাজানো আর বোন মারিয়ার সঙ্গে খেলে গল্প করে তিনি বড় হতে থাকেন।
নয় বছর বয়সে ভর্তি হলেন বড়দের স্কুলে।
তবু তার পড়ালেখার তেমন কোনো উন্নতি হল না। তবে আগ্রহ বাড়তে শুরু করল বিজ্ঞানে আর গণিতে। এর কারণ ছিল দুটি-- প্রথমত তার কাকা তাকে প্রায়ই গণিত আর বিজ্ঞানের বই উপহার দিতেন। অপর দিকে মেডিকেলের শিক্ষার্থী ম্যা· তামুদ ছিলেন তাদের পারিবারিক বন্ধু। ম্যা· প্রতি বৃহস্পতিবার তাদের সঙ্গে ডিনার করতে আসতেন।
তখন আইনস্টাইনের জন্য নিয়ে আসতেন জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও দর্শনের বই। আর সেগুলো পড়ে খুবই আনন্দ পেতেন তিনি। ম্যা·ের দেওয়া একটি জ্যামিতির বই-ই তাকে নতুন করে চিন্তা করতে শেখায়।
তবে আইনস্টাইনের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ জ্যামিতির প্রতি নয়, ছিল ক্যালকুলাসের প্রতি। ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি ক্যালকুলাস শেখার চেষ্টা করেন।
স্কুলে যদিও তখনও ক্যালকুলাসের কোনো বালাই ছিল না।
ব্যবসায়ে ব্যর্থ হয়ে ১৮৯৪ সালে ওদের পরিবার ইতালির মিলানে চলে যায়। পড়ালেখা শেষ করার জন্য তাকে রেখে যাওয়া হয় মিউনিখে। তিনি কিন্তু স্কুলে পড়তে তেমন উৎসাহী ছিলেন না। ছয় মাসের মাথায় একজন ডাক্তারকে রাজি করিয়ে অসুস্থতার সার্টিফিকেট জোগাড়ও করে ফেলেন।
আর তাই দিয়ে নেন স্কুল থেকে ছুটি। স্কুলের পড়া শেষ না করেই চলে যান বাবা-মায়ের কাছে।
আইনস্টাইন ভর্তি হলেন সেখানে। এবং সাফল্যের সঙ্গে প্রায় সব বিষয়েই ফেল করলেন, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান ছাড়া। ওই দুটি বিষয়ে অবশ্য নম্বর ভালোই পেয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ নিয়ম ভঙ্গ করে তাকে ভর্তির শেষ সুযোগ দিলেন। সঙ্গে শর্ত জুড়ে দিলেন, তাকে আগে হাই স্কুল শেষ করতে হবে।
কী আর করা! আইনস্টাইন পাশের আরাউ শহরের একটি বিশেষ স্কুল থেকে ১৭ বছর বয়সে হাইস্কুল পাশ করে চলে আসেন জুরিখ পলিটেকনিকে। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর অবশ্য শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে তার ভালোই সখ্যতা গড়ে ওঠে।
আর শেষ পর্যন্ত তিনি বিজ্ঞানের রাজ্যে কী কী করেছেন, পদার্থবিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে তার অবদান কতটুকু, সে কী আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে!
সুতরাং কেউ ভালো রেজাল্ট করলেই তাকে ‘আইনস্টাইন’ বলা ঠিক না।
বরং আইনস্টাইন তাদেরই বলা উচিত, যাদের গণিতে-পদার্থবিজ্ঞানে তুমুল আগ্রহ আছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।