টি ২০ বিশ্বকাপের থিম সং নিয়ে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক নিউজ ফেড ভরে গিয়েছিল। এখন চলছে মব ফ্ল্যাশ নিয়ে হইচই। ঝাকে ঝাকে ইউনিভার্সিটির পোলাপান রাস্তায় নেমে মব ফ্ল্যাশ করছে। আমি জানিনা আমাদের ইউটি ডালাসের এরকম কোন পরিকল্পনা আছে নাকি। না থাকারই কথা।
এপ্রিলের প্রথম শুক্রবার অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ট্যালেন্ট শোর প্রস্তুতি নিতে নিতেই জান তামাতামা হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন প্রতিবার ফার্স্ট হয়ে আসছে। মাঝে একবার শুধু রানারআপ হয়েছিল। এবারেও শিরোপা ধরে রাখতে হবে ইনশা আল্লাহ। রেপুটেশন ধরে রাখাটা একটা বিরাট মানসিক চাপ!
বলছিলাম টি ২০ বিশ্বকাপ থিম সংয়ের কথা।
আমিও একটা প্রতিক্রিয়া লিখেছিলাম। আমার যাবতীয় অভিযোগ ছিল মিউজিক ভিডিও নিয়ে। আধুনিকতার নামে গু মুত জাতীয় অখাদ্য একটা মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছিল। তাও যদি নিজেরা নিজেরা বুদ্ধি খাটিয়ে বানাতো, সমস্যা ছিল না। ভিডিও দেখলেই বোঝা যাচ্ছিল "কাহার খাতা হইতে নকল করিয়া তাহারা পরীক্ষায় পাশ করিয়াছিল।
"
আমার মতন অনেকেই ভিডিওটির বদনাম করেছিল। তাই বোধয় বিসিবি এইবারে এলো আরেকটা নতুন গান নিয়ে। "স্বপ্নের আলো। " বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরো ইতিহাস ফুটিয়ে তুলল দুই মিনিটে। এবারে যে ভিডিও বানিয়েছে তার হাত সোনা দিয়ে বেঁধে ফেলা উচিৎ! আগের রামছাগল নির্মাতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো উচিৎ এইভাবে ভিডিও বানাতে হয়।
কি নেই তাতে? আমাদের আইসিসি জয়, প্রথম টেস্টে বুলবুলের সেঞ্চুরি, তামিমের লর্ডস জয়, বাংলাওয়াশ, সরকারের চামচামি.....সব আছে!
ঢাকা শহরে থাকিনা কত বছর হয়ে গেল! বিলবোর্ড দেখা হয়না সঙ্গত কারনেই। সেদিন এক বন্ধু তার ফেসবুকে একটা বিলবোর্ডের ছবি আপলোড করে বলল, Someone please help me understand the meaning of it....
বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর বিশাল ছবি। পেছনে জলছাপে ক্রিকেটারদের, খুব ফোকাস করে না দেখলে বোঝাই যায়না কোন ক্রিকেটার। সাথে বিসিবির লোগো। ক্যাপশনে লেখা "একই আদর্শে হই উজ্জীবিত।
"
এই না দেখে আরেকজন সেই পোস্টের নিচে আরেকটা ছবি পোস্ট করলো। এটিও বিলবোর্ডের। এবারে সেখানে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার পাসপোর্ট ফরম্যাটের ছবির পাশে বাংলাদেশের কিছু ক্রিকেটারের ছবি। সাথে বিসিবির লোগো। ক্যাপশনে লেখা "তোমাদের চোখে স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ।
"
আমার বন্ধুটা বুঝতে পারছিল না আসলে কাকে প্রোমোট করা হচ্ছিল। ক্রিকেটকে? নাকি আওয়ামীলীগকে?
আমাদের এক আওয়ামী ঘরানার বন্ধু এগিয়ে এলেন ব্যাখ্যা করতে। তিনি বললেন, "বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করলেই সবাই মনে করে আওয়ামীলীগকে প্রোমোট করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। উনি শুধু একটি পার্টির অ্যাসেট হতে পারেননা।
আপনারা এটা মেনে নিতে পারেননা বলেই আপনাদের গা জ্বালা করে। ইত্যাদি ইত্যাদি। "
কথা ভুল বলেনি। শেখ মুজিবুর রহমান না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। কিন্তু কথায় কথায় তাঁকে টেনে এনে একেবারে সস্তা বানিয়ে ফেলার কী খুব বেশি দরকার ছিল?
একটা ছোট উদাহরণ দেই।
ছোট ছোট বাচ্চাদের খাওয়াবার সময়ে দেখবেন, যে জিনিস খেতে জোর করা হবে সেটাই তারা খেতে চাইবে না। তাদের উপর বেশি জোর খাটানো হলে বমি করে বের করে দিবে। ছোট শিশু পুষ্টিকর খাবারের কিছুই বুঝেনা। সে শুধু এটা বুঝে যে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে কিছু একটা খাওয়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষেরও এখন সেই অবস্থা।
বিসিবির গানটিতে "শেখের বেটির পুরষ্কার দিতে আসা" কী আনতেই হতো? বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যে ক্রিকেটারদের চেয়েও প্রাধান্য পেয়ে গেলেন কে পুরষ্কার দিতে এসেছেন সেটা! চমৎকার একটি গানের ছন্দ পতন ঘটে কেবল মাত্র ঐ একটি লাইনে। মিউজিক ভিডিওতেতো দেখানো হচ্ছেই তাঁকে, গানেও আনার কি দরকার ছিল?
আরেকটা উদাহরণ দেই। খুবই তিক্ত, কিন্তু ঘটনা সত্য।
পাকিস্তান জন্মের সাথে সাথে তার নীতিনির্ধারকরা বিরাট বোকামি করে বসলো। তারা বাঙ্গালির উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো।
জনগণ যথারীতি বমি করে বের করে দিল। তখনকার সময়ে বাংলাদেশের সত্তুর-আশি শতাংশের বেশি মানুষ উর্দুতে কথা বলতে পারতো না। তখন আমরা গান গাইতাম, "ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়....."
এখন পাকিস্তানীরা আমাদের সাথে কথা বলতে গেলে খুব অবাক হয়। আমরা এত ভাল হিন্দি বলতে পারি কি করে?
ডক্টর জাকির নায়েকের মতন টেনে টেনে বলতে ইচ্ছে করে, "সিম্পেএএএল! ইন্ডিয়া আমাদের জোর করেনি ওদের সিনেমা দেখতে, ওদের সিরিয়াল দেখতে। আমরা তাই ভালবেসেই শিখে ফেলেছি।
"
ভাবতে গর্বে বুক ভরে যায়, আমাদের দেশের নব্বইভাগ মানুষ এখন হিন্দি/উর্দুতে কথা বলতে পারে।
বাংলা সিনেমার সেই বিখ্যাত ডায়লগটা নেতানেত্রীদের শোনাতে ইচ্ছে করছে। "টাকা দিয়ে সব কেনা গেলেও, ভালবাসা কেনা যায়না চৌধুরী সাহেব!"
http://www.youtube.com/watch?v=amq1DDY7Kto
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।