আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে দ্বিধাহীন

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শক্ত অবস্থানে গণমাধ্যম। কিন্তু তারপরও থেমে নেই হামলা, মামলা, ভয়ভীতির মতো বিষয়গুলো। একজন সংবাদকর্মীকে সব কিছু মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়। গেল বছর মুন্সীগঞ্জ গিয়েছিলাম সরকারি দলের প্রভাবশালী এক নেতার মামলার হাজিরা দিতে। হাজিরার সময় বাদীপক্ষের আইনজীবীর প্রস্তাব লোহার খাঁচার ভেতরে অবস্থানরত হ্যান্ডকাফ পরা কয়েকজন দাগি আসামির সঙ্গে সম্পাদককে দাঁড়াতে হবে।

আমাদের আইনজীবীদের তুমুল আপত্তি। আইনজীবীদের বললাম, আমার আপত্তি নেই। তবে মাননীয় আদালতকে বলুন, অন্য আসামিদের সরিয়ে নিতে। তাহলে সমস্যা থাকে না। কিন্তু বাদীপক্ষের আইনজীবী আগে কমিউনিস্ট পার্টি করতেন।

তিনি কোনোভাবেই ছাড় দিতে নারাজ। এ নিয়ে আদালতে তুমুল বিতর্ক চলল কিছুক্ষণ। আমার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেওয়া আইনজীবীর সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। দলমত নির্বিশেষে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। বাদীপক্ষের মাত্র একজন আইনজীবী।

আদালত দীর্ঘক্ষণ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনলেন। তারপর অনুমতি দিলেন আমাকে লোহার খাঁচার কাঠগড়ার বাইরে দাঁড়ানোর। পত্রিকা চালাতে গিয়ে এমন নানামুখী অভিজ্ঞতার শেষ নেই। কোর্টে হাজিরা স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে পড়ে। তার চেয়েও বড় বিষয় টেলিফোনে, চিঠিতে, ই-মেইলসহ নানাভাবে হুমকি-ধমকি।

অবশ্যই তা করে থাকেন প্রভাবশালীরা। জঙ্গিবাদ থেকে দুই রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বের অফিস কর্মচারীরাও এ তালিকার বাইরের নন। কিন্তু আজ অবধি কোনো রক্তচক্ষুই আমাদের থামাতে পারেনি। বাংলাদেশ প্রতিদিন এগিয়ে চলছে পাঠকদের দেওয়া অঙ্গীকারকে সামনে রেখে। আমরা জনগণের পক্ষে।

আমরা সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে দ্বিধাহীন। অকুতোভয়।

আমরা বিশ্বাস করি, সমাজ না বদলালে রাষ্ট্র বদলাবে না। তাই রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন মূল্যবোধকে জাগ্রত করা। ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করা।

মুক্তবুদ্ধি, মুক্তবিবেককে লালন করা। আর সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। আমরা শুধু সমাজের অসঙ্গতিগুলোই তুলে ধরছি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের আবেগ, বিরাগ, ক্ষোভ কোনোটাই নেই। কিন্তু সত্য কারও গাত্রদাহের কারণ হলে কিচ্ছু করার নেই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্বাস করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায়। রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থেকে স্বাধীন সাংবাদিকতায়। আমাদের সংবিধানের ৩৯(২) খ অনুচ্ছেদে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদানের কথা বলা হয়েছে। গণতন্ত্র ও মিডিয়ার স্বাধীনতা একটি আরেকটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অব্যাহত না থাকলে মিডিয়া কখনো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না।

তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরা মিডিয়ার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যা ঘটছে তা তুলে ধরতে। কাউকে ছাড় দিইনি আজ অবধি। এ কারণে পাঠক তার ভালোবাসার শীর্ষে রেখেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে। বাংলাদেশ প্রতিদিন পাঠকের কাগজ।

প্রতিদিন আজ গণমানুষের দৈনিক।

প্রিয় পাঠক, দেখতে দেখতে আপনাদের ভালোবাসার বাংলাদেশ প্রতিদিনের চারটি বছর চলে গেল। আজ পঞ্চমবর্ষে পা রাখছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। দেশে সংবাদপত্রের ইতিহাসে পত্রিকাটি নজিরবিহীন এ সাফল্যের স্বর্ণশিখরে অবস্থান নিয়েছে শুধু আপনাদের ভালোবাসায়। এ মুহূর্তে সারা দেশে পত্রিকার সংখ্যা ১ হাজার ১৮৭।

তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রচার সংখ্যায় সবার শীর্ষে। সরকারিভাবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রচার সংখ্যা এখনো ৫ লাখ ৫৩ হাজার ১৫০। জাতীয় সংসদে গত ১০ মার্চ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এ তথ্য প্রকাশ করেন। বাস্তবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের চাহিদা ৭ লাখের বেশি। সংবাদপত্রের লাভ-লোকসানের হিসাবে প্রচার সংখ্যার লাগাম টেনে রেখেছি আমরা।

তবে পাঠকের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা প্রচার সংখ্যা আগামীতে আরও বাড়াব। আমরা বিশ্বাস করি, পথ চলে সবাই, পথ দেখায় কেউ কেউ। বাংলাদেশ প্রতিদিন পথ দেখাচ্ছে। স্থাপন করে চলছে একের পর এক দৃষ্টান্ত। আমাদের এই পথচলা একটি সুন্দর আগামীর জন্য।

সুখ, সমৃদ্ধিশালী, উন্নত, আধুনিক বাংলাদেশের জন্য। আমাদের কঠোর অবস্থান সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক উন্নত বাংলাদেশ প্রশ্নে বাংলাদেশ প্রতিদিন আপসহীন। আমরা তুলে ধরেছি দেশের সম্ভাবনাকে। শুধু নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক ধারার খবরকে আমরা সমান্তরালভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি।

সাফল্য ও আর সম্ভাবনাকে তুলে ধরছি প্রজন্মের সামনে। কারণ নতুন প্রজন্মই বদলে দেবে বাংলাদেশকে। অবদান রাখবে দেশের জিডিপিতে। এখন দেশের জিডিপিতে সবচেয়ে বড় অবদান বেসরকারি খাতের। বাংলাদেশে ছোট, বড়, মাঝারি শিল্প খাতে বিপ্লব চলছে।

বেসরকারি খাত এগিয়ে নিচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে। কৃষি ও শিল্প খাতের নীরব বিপ্লবের মাঝে আমরা দেখি গোটা দেশের অমিত সম্ভাবনাকে। প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্লোগান- 'আমরা জনগণের পক্ষে'। বাস্তবেও আমরা সেই অঙ্গীকার থেকে একচুল সরিনি। সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলছে বাংলাদেশ প্রতিদিন।

আগামীতেও পাঠকদের ভালোবাসায় আমাদের এ অবস্থান দৃঢ়ভাবে অব্যাহত থাকবে। আমাদের সব সাহস ও বলিষ্ঠ অবস্থান পাঠকের জন্য। তাই এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আবারও গভীর কৃতজ্ঞতা সব পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, পত্রিকার এজেন্ট, বিক্রেতা, মাঠ পর্যায়ের বিক্রয়কর্মী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সবার প্রতি। গত চারটি বছর আপনাদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা না পেলে বাংলাদেশ প্রতিদিন আজকের অবস্থানে আসতে পারত না। আমরা বিশ্বাস করি, আগামীতে আপনাদের এ ভালোবাসা অব্যাহত থাকবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতা ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া ও বসুন্ধরা গ্রুপের শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানের প্রতি। বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যানের স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার সমীকরণই বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের যাত্রা শুরুর সময় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, এই কাগজই হবে দেশের প্রচার সংখ্যায় শীর্ষ দৈনিক। দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পোদ্যোক্তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি শুধু সফল শিল্পোদ্যোক্তা নন, একজন সফল মিডিয়া উদ্যোক্তাও।

আহমেদ আকবর সোবহান যা ধরেন তাই সফল হয়। তার সফল পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ প্রতিদিন আজ সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি সব সময় বলেন, উপরে উঠে যাওয়া যত সহজ, ধরে রাখা তত কঠিন। কর্মক্ষেত্রে তার এই নির্দেশনা সামনে রেখেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবার। তিনি চান এই দৈনিক এক দিন নগর-শহর ছাড়িয়ে গ্রামে গ্রামে প্রতিটি ঘরে থাকবে।

আমরা লড়ছি। টিকে থাকা ও এগিয়ে যেতে পাঠকের প্রত্যাশাই আমাদের কাছে বড়। প্রতিদিন নিজেদের নবায়ন করার মধ্য দিয়ে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। মতামত দিন।

ভুল ধরিয়ে দিন। আপনারাই আমাদের শক্তি ও সাহস। আপনাদের নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন এক যৌথ পরিবার। প্রিয় পাঠক, একটা অটুট বন্ধনের মধ্যে এই পরিবার এগিয়ে চলছে সুন্দর আগামীর পথে। আমার সহকর্মী, ব্যক্তিগত জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান সব সময় একটা কথা বলেন, টিমওয়ার্কই একটি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়।

আমরা একটা টিমওয়ার্কের মধ্যেই কাজ করি। আমাদের সঙ্গে কর্মরত প্রতিটি কর্মীই কমবেশি পরিশ্রম করে পত্রিকাটিকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কৃতজ্ঞতা সবার প্রতি। সবার শ্রম, মেধা, ঘামে আজকের এই অবস্থান। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও সব সহকর্মীর পক্ষে পাঠকদের কাছে অঙ্গীকার- বাংলাদেশ প্রতিদিন অবিচল থাকবে তার অটুট অবস্থানে।

সোচ্চার অবস্থান অব্যাহত রাখবে সমাজের দুর্নীতি, অনিয়ম, অসঙ্গতির বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কখনোই আপস করবে না। তুলে ধরবে সমাজের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের চিত্র। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার প্রশ্নে থাকবে আপসহীন। নানা বৈরী সময় আসে।

ঝড়ের আলামতও দেখেন। আস্থা হারাবেন না। বিশ্বাস রাখবেন। সব প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা মনোবল হারাই না। যুদ্ধে বিজয়ী হতে জানি।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।