আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১বছরের নীচের বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ালে সর্বনাশ!

গরুর দুধের কৌটা/প্যাকেটে বা টিভি বিজ্ঞাপনের নীচের কোনায ছোট্ট করে একটা কথা লেখা থাকে ”এক বছরের নীচের শিশুর জন্য প্রযোজ্য নয়”। আমরা কী কখনো জানতে চেষ্টা করেছি কেন এ কথাটি লেখা থাকে? আপনি শুনলে অবাক হয়ে যাবেন ১ বছরের নীচে যেসব শিশু গরুর দুধের উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্মের ৬ মাসের মধ্যে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা মায়ের দুধ পানকারী শিশুর তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশী। আসুন জানতে চেষ্টা করি ১ বছরের নীচে শিশুকে নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়ালে কী কী ক্ষতি হতে পারে :-

১। ডায়াবেটিস: গরুর দুধে বোভাইন সেরাম এলবুমিন (বি.এস.এ.) থাকে যা শিশুর অপরিপক্ক অন্ত্রের ছিদ্র দিয়ে পরিপাক ছাড়াই সরাসরি রক্তে চলে যেতে পারে। রক্তে গেলে এই প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই প্রোটিনের গঠনের সাথে শিশুর দেহে ইনসুলিন তৈরীকারী বিটা কোষের গাঠনিক প্রোটিন পি৬৯ এর মিল রয়েছে। ফলে অ্যান্টি বি.এস.এ. অ্যান্টিবডি বিটা কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে তাকে ধ্বংস করতে পারে। বিটা কোষ ধ্বংস হলে বড় হয়ে এই শিশুই ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিসে ভূগতে পারে।

২। রক্তাল্পতা: গরুর দুধে আয়রন কম থাকায় এবং দুধের ক্যালসিয়াম ও ক্যাসিন আয়রন শোষনে বাঁধা দেওয়ায় গরুর দুধের উপর নির্ভরশীল ১ বছরের নীচের প্রায় সকল শিশুই আয়রনের অভাব জনিত রক্তাল্পতায় ভোগে।



৩। আন্ত্রিক রক্তক্ষরণ: গরুর দুধের উপর নির্ভরশীল ১ বছরের কম প্রায় ৪০% শিশুর অন্ত্রে আনুবীক্ষনিক রক্তক্ষরণ হয়।

৪। অ্যালার্জি: গরুর দুধের প্রোটিন আকারে বড় হওয়ায় এবং ১ বছরের নীচের শিশুর পরিপাক তন্ত্রের অপরিপক্কতার কারণে এসব প্রোটিন অনেক সময় অ্যামাইনো এসিডে রূপান্তরিত না হয়ে ছোট ছোট প্রোটিন অনুতে পরিনত হয়। এগুলো রক্তে গেলে ইমিউনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশনে নানারূপ অ্যালার্জিজনিত রোগের উপসর্গ তৈরী করে।



৫। শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ: উপরোক্ত ইমিউনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশনের কারনে শিশুর শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হতে পারে, ফলে নাক বন্ধ হওয়া, সর্দি-কাশি প্রায়ই লেগে থাকে। এমনকি হাঁপানীও হতে পারে। মায়ের দুধ খাওয়া শিশুর তুলনায় গরুর দুধের উপর নির্ভরশীল শিশুর শ্বাসতন্ত্রের অসুখ-বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১২০ গুন বেশী।

৬।

পেটের অসুখ:
গরুর দুধের জটিল প্রোটিন হজম করতে না পারা ও অন্যান্য উপাদানের বিশেষতঃ দুধের ল্যাকটোজের প্রতি সহনশীলতার অভাবে প্রায়ই পেটের অসুখ বিসুখ যেমন, পেট ফাপা, ডায়রিয়া, বমি, বদহজম ইত্যাদি শিশুকে আক্রান্ত করে। মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শিশুর তুলনায় গরুর দুধের উপর নির্ভরশীল শিশুর পেটের অসুখ-বিসুখের সম্ভাবনা প্রায় ৪০ গুণ বেশী।

৭। পানিশূন্যতার আশংকা: গরুর দুধের অতিরিক্ত প্রোটিন ও খনিজ পদার্থের কারনে এ দুধের উপর নির্ভরশীল শিশুদের মূত্র তুলনামূলক বেশী ঘন হয়ে থাকে যা অসমোটিক ডাইইউরোসিসের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি পেশাব আকারে বের করে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করে। এসব শিশু জ্বর ও ডায়রিয়ার সময় অন্যান্য শিশুদের তুলনায় অতি দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে যা তার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।



৮। হঠাৎ মৃত্যু:ব গরুর দুধের ক্যাসিন নামক প্রোটিন থেকে শিশুর পেটে বোভাইন-বিটা-ক্যাসোমরফিন-৫ তৈরি হতে পারে। রক্তে এর মাত্রা বেড়ে গেলে শিশুর শ্বাস মাঝে মাঝে আটকে যায়। এমনকি শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। ক্রিব রোগ(Crib disease) বা হঠাৎ শিশু মৃত্যুর এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কারন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২০০০ শিশুর একজন ক্রিব রােগে মারা যায়।

Ref.:- i) DR. Oski, author of “Don’t Drink Your Milk”, Director of department of pediatrics of John Hopkins University School, USA. ii) Fomon Infant Nutrition unit / Department of pediatrics / University of IOWA, USA. iii) Journal of Pediatric Gastroenterology & Nutrition – 2011 June 52(6) 772-5 and 2012; 55; 221-229. iv) Dan Hurley, Medical Tribune; Feb 03, 1995.।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।