আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশ

প্রতিকূলতা, দুর্নীতি, দরিদ্রতা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে সম্ভাবনার দেশ হিসেবে দেখছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। দেশের এই খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী মনে করেন, দেশের সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, তথ্য ও প্রযুক্তি শিল্প এবং কৃষিজ শিল্প ক্রমেই বিকাশ লাভ করছে। তার মতে, এ শিল্পগুলোর বিকাশে শুধুমাত্র সঠিক সময়ে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন 'ওয়ান উইনডো সার্ভিস'। শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে শীঘ্রই গঠন করতে হবে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল।

আর প্রয়োজন গুণগত শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ। আর এগুলো পূরণ হলেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এসব কথা বলেন। শিক্ষাবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী দেশের সম্ভাবনাময় বেশ কয়েকটি খাত নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তৈরি পোশাক খাত।

তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী এ খাতটি দেশের জন্য একটি বড় ধরনের শিল্প। যা দেশে বৃহৎ আকারে কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু গত বছর ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার দুর্ঘটনার কারণে এ শিল্প ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে কর্মপরিবেশ এবং অবকাঠামোগত নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতারা এ শিল্পকে চাপের মুখে রেখেছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আগামী ৩ বছরের মধ্যেই অবকাঠামোগত নিরাপত্তা, কারখানা স্থানান্তরসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।

আর তা যদি সম্ভব না হয় তবে ভবিষ্যতে আমাদের বিরাট বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। সম্ভাবনার আরেকটি শিল্পের মধ্যে এ গবেষক উল্লেখযোগ্য হিসেবে বলেন ওষুধ শিল্পের নাম। এদেশের ওষুধ অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ শিল্পকে আরও কীভাবে প্রসারিত করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, আরেকটি শিল্প হচ্ছে জাহাজ নির্মাণ শিল্প।

সহায়তা বাড়ালে এ শিল্পের ভবিষ্যৎ আরও ভালো হবে। অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তি খাতেও বাংলাদেশ বেশ ভালো করছে। এ শিল্পের বিকাশের জন্য সহায়ক উদ্যোগ নিলে তা দেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলে তিনি মনে করেন। তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে প্রচুর কর্মসংস্থানের দরকার। সম্প্রতি এক সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে এখন চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরাও কাজের অভাবে বেকার বসে আছেন।

এ জনগোষ্ঠীকে দেশে এবং দেশের বাইরে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশিরা যখন বিনিয়োগ করতে আসেন তখন নানারকম বাধার সম্মুখীন হন। প্রথমেই শিল্পে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন জমি। কিন্তু দেশে নিষ্কণ্টক জমি পাওয়া দুরূহ। কোনোভাবে জমি কিনে ফেললেও মালিকানা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়।

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রতিটি জেলায় বিশেষ শিল্প জোন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। বিদেশি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে 'ওয়ান উইনডো সার্ভিস' চালু করতে হবে। জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, বিকাশমান অন্য শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিজ শিল্প। এ শিল্পটির সম্ভাবনা থাকলেও এখনো ভালোভাবে গড়ে উঠেনি। এদিকে মনোযোগী হলে অনেক সমস্যার সমাধান মিলবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বিক্রমপুরে গিয়ে দেখি সেখানে প্রচুর আলু উৎপাদিত হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে এ আলু নিয়েই আলাদা একটি শিল্প গড়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে আলু সংরক্ষণের জন্য যদি হিমাগার নির্মাণ করা হয় এবং বিদেশের মতো আলু কৌটায় সংরক্ষণ করে খাওয়া যায় তবে আলু নিয়ে আরেকটি সম্ভাবনাময় শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে এ প্রকৌশলী বলেন, শিক্ষানীতি ২০১০-এর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন দরকার। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে বিনিয়োগ প্রয়োজন তা এখনো শুরু হয়নি।

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মান আশাব্যঞ্জক নয়। শিক্ষকদের ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে যে ভীতি আছে তা দূর করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে প্রাথমিক শিক্ষা ও কওমি মাদ্রাসার মতো বেশ কয়েকটি শিক্ষাব্যবস্থা সমান্তরালভাবে চালু রয়েছে। কিন্তু সরকারের সব শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। সাবেক এ উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রাথমিকে তো বটেই, আমাদের মাধ্যমিকেও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার বেশি। বিশেষ করে মাধ্যমিকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। এ স্তর পর্যন্ত যারা পেঁৗছায় তাদের মাঝপথে থেমে গেলে চলবে না। শেষ পর্যন্ত শিক্ষা নিতে হবে।

এ ছাড়া কয়েক বছরে অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদন দিলেই চলবে না এতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে কিনা তার তদারকি করতে হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাজের তদারকির জন্য শীঘ্রই অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করতে হবে। আর তা যদি না হয় সেক্ষেত্রে দেশে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও তাদের মান নিয়ে সংশয় থেকে যাবে।

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.