আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৭১ সালে যিনি মারাই যাননি তাকে হত্যার অভিযোগে আসামীঃ সাক্ষ্য আইনে মিথ্যা ও পরস্পরবিরোধী সাক্ষীর শাস্তির বিধান আছে।

২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সরকারী-বেসরকারী প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সততা ফিরে আসুক, এটাই আমার কামনা!!

যাহা বলিব সত্য বলিব বলিয়া যারা মিথ্যা বলে, তাদের শাস্তি কই? তথ্য অধিকার মানে কি আদালতেও মিছে কথা বলে কাউকে ফাসানোর চেষ্টা করা?

যুক্তিতর্ক পেশকালে মিজানুল ইসলাম বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যিনি মারাই যাননি তাকে হত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে। এর চেয়ে জাল-জালিয়াতির অভিযোগ আর কি থাকতে পারে? অভিযোগ ভিত্তিক অকাট্য যুক্তি উপস্থাপনের এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান প্রশ্ন রেখে বলেন, টাইম প্লেস এন্ড ম্যানার প্রমাণ করা কি এই আইনে জরুরি। জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষীদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সাক্ষীরা স্বেচ্ছায় সত্য বলবে-তার ওপরই বিচার হবে।

কিন্তু এখানে সাক্ষীদেরকে মামলার প্রয়োজনে যা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে তাই বলেছেন। এর মধ্যে সত্য বলে কিছু নেই।


এডভোকেট মিজানুল ইসলাম সাক্ষী জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ জালালের উক্তি কোড করে বলেন, “আমি দুইটি ট্রাইব্যুনালে মোট কতবার ভুল উত্তর দিয়েছি তা বলতে পারব না। ”তার এই বক্তব্যের পর তার সাক্ষ্য কতটা গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনার দাবি রাখে।

তিনি বলেন, ১১ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে সাক্ষী শামসুল হক নান্নু সকাল-বিকাল দুই বেলা মতিউর রহমান নিজামীকে পাবনায় দেখেছেন।

আর জহির উদ্দিন জালাল দেখেছেন একই দিন ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে। প্রসিকিউশন দু’জনকেই রিলাই করে। এটা কি করে সম্ভব হতে পারে।


তিনি আরো বলেন, দাফন হওয়া ব্যক্তিকে দাফনের পরে দেখেছেন, ক্লাবের চাঁদার টাকা দিয়ে নিজে বাজার করেছেন, নিজেই বলেছেন, কতবার ভুল বলেছেন তা বলতে পারেন না, এসএসসি পাস করেননি অথচ বলেছেন পাস করেছেন, তাকে বিচ্ছু জালাল উপাধি কেউ দেয়নি, এম আর আক্তার মুকুলকে জড়িয়ে যিনি মিথ্যা কথা বলেছেন, এমন অসত্য তথ্য প্রদানকারীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নাখালপাড়ায় নির্যাতনের সাথে মাওলানা নিজামী যুক্ত থাকার কোন অভিযোগের ন্যূনতম সত্যতা নেই।



ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের প্রশ্নের জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, টাইম, প্লেস এবং ম্যানার এই আইনে প্রমাণ করা জরুরি না হলেও সাক্ষীরা সত্য বলছেন কিনা তা প্রমাণ করা জরুরি। ৮ মে হাবিবুর রহমান হত্যা প্রমাণ করতে একজন সাক্ষী এসেছেন কিন্তু সেই সাক্ষীকে তারা বৈরী ঘোষণা করেছেন। গণহত্যার কোন প্রমাণ তারা উপস্থাপন করতে পারেননি। সাক্ষী নাজিম উদ্দিন খাত্তাব বলেছেন যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী যে ছিল তার নাম মনে নেই। অথচ তখন বিএনপির জন্মই হয়নি।

হাবিবুর রহমানসহ দুইজনের নাম পাবনার শহীদের তালিকার কোথাও নেই। অথচ তাদেরকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে। এটা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।


মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী শাজাহান আলী বলেছেন যে তিনি ১৯৭১ সালে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে প্রথম পাবনায় যান ১৯৭৫ সালে।

তখনও বঙ্গবন্ধু জীবিত ছিলেন। আবার বলেছেন, ১৯৭২ সালে পাবনার একটি স্কুল থেকে এস এসসি পরীক্ষা দেন। পরে ৭৪ সালে এইচএসসিও পাস করেছেন। কিভাবে হতে পারে?
তিনি কখন কি বলেন তা মনে থাকে না।

তিনি বলেন, সাক্ষী খলিলুর রহমান জোৎস্নার আলোতে রাত সাড়ে ৩টায় নিজামীকে দেখেছেন ধুলাউড়ি গ্রামে।

অথচ ১৯৭১ এর ২৭ নবেম্বর রাতে ঐ সময়ের আড়াই ঘণ্টা আগেই চন্দ্র ডুবে গেছে। এর পক্ষে আমরা ১৯৭১ সালের পঞ্জিকা দাখিল করেছি। এতেই বোঝা যায় যে তিনি মিথ্যা বলেছেন। সাক্ষী জনসভায় যাননি কিন্তু তিনি জনসভায় নিজামীকে বক্তব্য রাখতে দেখেছেন। এটা কি করে সম্ভব ?


তিনি বলেন, ধুলাউড়ির ঘটনায় মামলা হয়েছিল, বিচার হয়েছে, রায় হয়েছে যাতে নিজামী সাহেবের নাম আসেনি কখনো ।

সেই চার্জ আবার আনা হয়েছে। এটা আইনসঙ্গত নয়।


এডভোকেট মিজান বলেন, বুদ্ধিজীবীরা নিহত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে কোন পক্ষই দ্বিমত পোষণ করেননি। আমরাও করি না।

এই মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোন সুনির্দিষ্ট স্থান উল্লেখ করা হয়নি। কে বা কারা হত্যাকা- ঘটিয়েছে তাও সুনির্দিষ্ট নয়। এই অভিযোগটা যথাযথভাবে আনা হয়নি। ফর্মাল চার্জে এটা ছিল না। বেলজিয়ামস্থ আহমেদ জিয়া উদ্দিনের লিখিত চার্জ অর্ডার এখানে পড়ে শুনানো হয়েছিল।

অতিরিক্ত সাক্ষী হিসেবে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীকে আনা হয়েছে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে।

তিনি আরো বলেন, শাহরিয়ার কবিরের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বইয়ের ৪৮ পৃষ্ঠায় আছে ডা. আজহারুল হক ও হুমায়ুন কবির হত্যার পর মামলা হয়েছিল। একজন ধরাও পড়েছিল। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার ভাই। ঐ মুক্তিযোদ্ধা তাকে ছাড়িয়ে নেন।

তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেছেন যে এই দুইজনের হত্যাকা-ের বিষয় তিনি জানতেন না। তিনি তদন্ত অব্যাহত রেখে ফর্মাল চার্জের পরে অতিরিক্ত ফর্মাল চার্জ আকারে দাখিল করেন।

সাক্ষী সালমা মাহমুদ ও শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী অভিন্ন বাক্য বলেছেন এই ট্রাইব্যুনালে। তা হলো “আমাদের হাই কমান্ড মতিউর রহমান নিজামীর নির্দেশে ডা. হুমায়ুন কবির ও আজহারুল হককে নিতে এসেছি। ” অথচ এই কথাটি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তারা কেউই বলেননি।

এটা এই দুই সাক্ষীর সাক্ষের প্রধান অংশ হওয়ার কারণে আপিল বিভাগের অবজার্ভেশন সত্ত্বেও এই অংশটি বিচারকরা বিবেচনায় নিতে পারেন। কারণ এই অংশটুকু দুই সাক্ষীকে শিখিয়ে দেয়া মতে ট্রাইব্যুনালে এসে অভিন্ন ভাষায় বলেছেন।

মিজানুল ইসলাম বলেন, ডা. আলীম চৌধুরীর হত্যার ব্যাপারে মামলা হয়েছিল। তার বিচার হয়েছে। তার দায় নতুন করে কেন এই আসামীর ওপর চাপানো হবে? তদন্ত কর্মকর্তা ঐ মামলার বিষয়ে কোন খোঁজখবরই নেননি বলে উল্লেখ করেছে।

আলীম চৌধুরীর স্ত্রী সত্য এবং তথ্য উভয়ই গোপন করে সাক্ষ্য দিয়েছেন এই ট্রাইব্যুনালে।


তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের যত পত্রিকা এই দুই ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন মামলায় জব্দ করা হয়েছে তার কোনটাতেই আলবদর প্রধান হিসেবে মতিউর রহমান নিজামীর নাম নেই।

একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় বইয়ে উল্লেখ আছে যে বুদ্ধিজীবী হত্যায় ৪২টি মামলা হয়েছে। অথচ তার আটককৃত বইয়ের উদ্ধৃতিই অস্বীকার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

বিটিভিতে নাসির উদ্দিন ইউসুফের উপস্থাপনায় প্রচারিত অনুষ্ঠানে শহীদুল হক মামা বলেছেন, বুদ্ধিজীবী হত্যা পরিকল্পনার সমস্ত দলিলপত্র তৎকালীন মন্ত্রী খানে সবুরের বাসভবন থেকে আমরা উদ্ধার করেছিলাম।

ঐ শহীদুল হক মামাকে এই মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। সাক্ষী করা হয়েছে অন্য মামলায়। বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে নিজামী সাহেবের জড়িত থাকার তথ্য অসত্য এটা প্রকাশিত হয়ে পড়বে বিধায় তাকে সাক্ষী করা হয়নি।


তিনি বলেন, রাও ফরমান আলীর অফিস থেকে চিরকুট উদ্ধার হয়েছিল। তাতে বলা আছে যে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয় অবজারভার ভবনে।

সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে বিধায় সেটা দাখিল করেনি প্রসিকিউশন। এসব ঘটনাই প্রমাণ করে যে, বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে নিজামী সাহেবকে জড়িত করে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।


মিজানুল ইসলাম বলেন, সোহরাব হত্যার অভিযোগ কতটা কাল্পনিক তার প্রমাণ রয়েছে অনেক। তার মেয়ে সুরাইয়া সোহরাবের জন্ম ১৯৭৬ সালে। যদি তা হয় তা হলে সোহরাব ১৯৭১ সালে মারা যাননি।

এটাই সত্য। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়ও তার নাম নেই। যে ব্যক্তি ১৯৭১ সালে মারাই যাননি তার হত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, একজন সাক্ষী ধর্ষণের ৪ ঘণ্টা পরে গিয়ে অন্য বাড়িতে ধর্ষিতাদের বিবস্ত্র অবস্থায় দেখলেন। এটা কি বাস্তব সম্মত? তারা লজ্জার কথা বলতে পারবেন না- কিন্তু লজ্জাস্থান বের করে বসে আছে অন্য বাড়িতে।

এত চরম মিথ্যাচার করেছেন সাক্ষী। প্রসিকিউশনের শেখানো মতে কথা বলেছেন।


সুত্রঃ এখানে দেখুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।