চৈত্রের তপ্ত দুপুর। তাপমাত্রা ৪০-এর কাছাকাছি। কাঠফাটা রোদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাতাস। সবকিছু উপেক্ষা করে কাল দর্শকরা মিরপুরে এসেছিলেন ক্যারিবীয়-ঝড় দেখতে। কিন্তু মারকুটে গেইল তো শেরেবাংলায় বয়ে দিলেন তুফান।
তবে ক্যারিবীয় তারকা আসল ক্যারিশমা দেখালেন ম্যাচ শেষে। অবিশ্বাস্য ম্যাচ জয়ের পর মাঠে গেইলের সেই পছন্দের ক্যালিপসো (ক্যারিবীয় নৃত্য)। ছয় উইকেটের দারুণ এক জয়ের পর নাচল পুরো দলই। ঠিক বছর দুই আগে শ্রীলঙ্কায় টি-২০ শিরোপা জয়ের পরও এমন দৃশ্য দেখেছিল ক্রিকেটবিশ্ব। শেষ চার বলে ক্যারিবীয়দের দরকার ছিল ১২ রান।
হোক না অনিশ্চয়তার টি-২০। তারপরও অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। ওভারের প্রথম দুই বল ডট হওয়ায় ম্যাচের ভাগ্য হেলে পড়েছিল অসিদের দিকেই। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ বলেই অসিদের সব আশা নষ্ট করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। টানা দুই দুটি বিশাল ছক্কা।
যাকে বলে 'ক্যাপ্টেনস নক'। মাত্র ১৩ বলে ৩৪ রানের 'হার্ডথ্রুব' ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা স্যামি। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলপতি যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে ক্রিকেটবিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন অধিনায়ককে এভাবেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। প্রথম দুই ম্যাচে খোলস থেকেই বের হতে পারেননি গেইল। ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।
টি-২০-এর রাজা খেলেছেন ওয়ানডে স্টাইলে। ভারতের বিরুদ্ধে একবার নতুন জীবন পেয়েও ৩৪। মুশফিকদের বিরুদ্ধে ৪৮ বলে ৪৮ রান। যা ক্যারিবীয় তারকার নামের সঙ্গে খুবই বেমানান। কিন্তু গেইল তো গেইলই, জ্বলে উঠলেন সঠিক সময়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেল দারুণ এক জয়। তিন ম্যাচে দুই জয়ে সেমিফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে গেল ক্যারিবীয়রা। আর টানা দ্বিতীয় হারে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল টপ ফেবারিট অস্ট্রেলিয়ার। গেইল কাল রানের খাতা খোলেন কাভার দিয়ে দারুণ এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। অসি পেসার মিচেল স্টার্কের ওই ওভারের শেষ চার বলেই বাউন্ডারি হাঁকান।
ছক্কার দেখা মেলে পরের ওভারেই। ডগ বলিঞ্জারের ওভারের শেষ বলটি স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন সীমানার বাইরে। হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন মাত্র ৩১ বলে। তবে শুরুতে যে ঝড় তুলেছিলেন হাফসেঞ্চুরির আগে তা খানিকটা স্তিমিত হয়ে যায়। ৪০ রান করেছিলেন মাত্র ১৪ বলে।
শেষ পর্যন্ত ৩৫ বলে ৫৩ রানেই আউট হয়ে যান গেইল।
ক্যারিবীয় তারকার আগে কাল মিরপুরের দর্শকদের রাঙিয়ে দিয়েছেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মারকুটে ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাঙ্ওয়েল। অসি তারকা আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন কাল ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন। সাইক্লোন গতির ব্যাটিং। তিন তিনবার উড়িয়ে বল পাঠিয়ে দিলেন মাঠের বাইরে।
বাউন্ডারি পাঁচটি। মাত্র ২২ বলে ৪৫ রানের আগ্রাসী ইনিংস। আউট হয়েছেন স্যামুয়েলের বল বুঝতে না পেরে মিড উইকেটে ডোয়াইন ব্রাভোর তালুবন্দী হয়ে। তবে ম্যাক্সওয়েল ক্যারিশমা দেখিয়েছেন ফিল্ডিংয়ে। ক্যারিবীয় দুই টপ স্কোর গেইল ও সিমন্স তার হাতেই ধরা পড়েছেন।
গেইলের ক্যাচটি কিছুটা সহজ হলেও ডিপ স্কয়ার লেগে সিমন্সের ক্যাচটি ধরেছেন অসাধারণ দক্ষতায়। সীমান্তে প্রায় দুই হাত শূন্যে লাফিয়ে যে ক্যাচটি ম্যাক্সওয়েল নিলেন সেটি টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিতেই পারে। শুধু ম্যাঙ্ওয়েল কেন, কাল উইকেটরক্ষক ব্রাড হাডিন ডান দিকে শূন্যে লাফিয়ে এক হাতে স্যামুয়েলসের যে ক্যাচটি ধরেছেন সেটি টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচ হওয়ার দাবিই জানিয়ে রাখল। তাছাড়া পুরো ২০ ওভারই অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে অসিরা। তারপরও মাঠ ছাড়তে হয়েছে হতাশা নিয়ে।
শেষ ওভারে বিড়ম্বনায় পড়ে টি-২০ বিশ্বকাপ থেকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল অস্ট্রেলিয়ার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।