আমি যে নতুন, তাই কিছু ভুল হয়ে যায় নিসার ১ নং আয়াতে উল্লেখ (বাংলা অনুবাদ) আছে -
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।
১ নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
এখানে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি অর্থাৎ নারীকে পুরুষের একটি অংশ উল্লেখ করে প্রথমেই একটি বৈষম্যের দাগ দেওয়া হয়েছে। সৃষ্টির এ ধুম্রজালেও নারীকে পেছনে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
নিসার ৩ নং আয়াতে উল্লেখ (বাংলা অনুবাদ) আছে
আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভব।
৩ নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
এখানে এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে না পারলে পুরুষদেরকে হক আদায়ের জন্য দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রেখে হক আদায়ের জন্য পুরুষদের চারটি পর্যন্ত বিয়ে করা জায়েজ বা রিতীসিদ্ধ । তাহলে প্রশ্ন থাকে যে,এতীম ছেলেদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে না পারলে মেয়েদেরকে হক আদায়ের জন্য দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার কথা বলা হল না কেন? তাছাড়া নারীর কেনই বা একের অধিক বিয়ে করার সুযোগ থাকছে না।
তবে কি মেয়েদের হক আদায় করার প্রয়োজন নেই না’কি বিয়ের ক্ষেত্রে এ আয়াত নারী-পুরুষের বৈষম্যের একটি উদাহরণ? অপর পৃষ্ঠায় এ বিষয়ে একটি চার্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট করা হল।
সূরা নিসার ৭ নং আয়াতে উল্লেখ (বাংলা অনুবাদ) আছে
পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশী। এ অংশ নির্ধারিত।
৭ নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
এ আয়াতের ‘অল্প হোক কিংবা বেশী’ এ অংশটুকু ‘নারী-পুরুষের সমান অধিকার’ বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অর্থাৎ নারীদের জন্য সম্পত্তির অংশ নির্ধারিত হলেও তা যে অল্প, এ কথাটিই স্পষ্ট হয়েছে।
যদি স্রষ্টা নারী জাতিকে শারীরিকভাবে দূর্বল করেই থাকেন,তাহলে যুক্তি অনুযায়ী তার নারীদের জন্য সম্পদের বেশী অংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রত্যেকটি আয়াতে দেখা যাবে যে,বেশী অংশ দূরে থাক্,সমান অংশটুকু নিশ্চিত করা হয়নি।
সূরা নিসার ১১ নং আয়াতে উল্লেখ (বাংলা অনুবাদ) আছে
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন- একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু' এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে।
যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদেরজন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহসর্বজ্ঞ,রহস্যবিদ।
১১ নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
নারী-পুরুষের অধিকার সম্পর্কিত উপরিউক্ত এ আয়াতটি সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য।
এ আয়াতেই ব্যাখার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে, সম্পত্তিতে নারীর অধিকার পুরুষের তুলনায় অর্ধেক বা অনেক কম এবং এর কারণ হিসেবে আয়াতটির শেষদিকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক কম উপকারী। সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে এরকম একটি কারণ একেবারেই নগণ্য। কেননা নারীরা তখনই কম উপকারী হবে যখন তাদের আর্থিক ক্ষমতা থাকবে না। তাই সম্পত্তিতে নারীর অধিকারকে সমভাবে নিশ্চিত করলে তারা অবশ্যই সমাজের জন্য উপকারী হবে।
সূরা নিসার ১২ নং আয়াতে (বাংলা অনুবাদ) উল্লেখ আছে
আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে।
যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে।
এ বিধানআল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
১২ নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
১) এখানে স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী পাবে স্ত্রীর সম্পত্তির অর্ধেক অন্যদিকে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী পাবে এক-চতুর্থাংশ (সন্তান না থাকলে)
২) আবার স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী পাবে স্ত্রীর সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ অন্যদিকে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী পাবে স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (সন্তান থাকলে) ।
এই তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের যে বৈষম্য ফুটে ওঠেছে তা ব্যাখা করার প্রয়োজন পড়ে না।
তবে এখানে একটি ভুল লক্ষণীয় যে, যদি কোন মৃতের মা,বাবা,দুই মেয়ে ও এক পত্নী থাকে তবে মা ১/৬, বাবা১/৬, দুই মেয়ে ২/৩ এবং পত্নী ১/৮ অংশ পায়।
এক্ষেত্রে মোট সম্পত্তি ১ সমস্ত ১/৮ হয়। অথাৎ ষোল আনার স্থলে হয় আঠারো আনা।
এ ভুলের সমাধান করেছিলেন হযরত আলী(রা) নিজেই করেছিলেন বলে জানা যায়-
মা ৪/২৭, বাবা ৪/২৭, দুই মেয়ে ১৬/২৭, পত্নী ৩/২৭ ।
ফলে সম্পত্তি ষোল আনা হয়।
সূরা নিসার ৩২ নং আয়াতে উল্লেখ (বাংলা অনুবাদ) আছে
আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না এমন সব বিষয়ে যাতে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।
৩২ নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়া মানেই শ্রেষ্ঠত্ব নয়। যদি তাই হয়, তাহলে কেন পুরুষকে নারীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে? এ আয়াতের মাধ্যমে নারীদের অনুৎসাহিত করা হয়েছে।
সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে উল্লেখ (বাংলা অনুবাদ) আছে
পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।
৩৪নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
এখানে বলা হয়েছে পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল কারণ নারীরা পুরুষের অর্থ ব্যয় করে। নারীদের অর্থও পুরুষ ব্যয় করতে পারে এক্ষেত্রে নারীরাও কর্তৃত্বশীল হতে পারতো। এবং বলা হয়েছে যেহেতু স্রষ্টা পুরুষকে শারিরীকভাবে কর্তৃত্বশীলের জন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছেন তাই নারীরা যেন পুরুষের প্রতি অনুগত থাকে। এখানে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিটি পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আয়াতে আরও উল্লেখ আছে, নারীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা করলে পুরুষরা যেন তাদের সদুপদেশ দেয়, তাদের শয্যা ত্যাগ করে এবং প্রহার করে।
তবে প্রশ্ন থাকে যে, পুরুষদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা করলে নারীরা কী ব্যবস্থা গ্রহন তা কি উল্লেখের প্রয়োজন ছিল না?
সূরা নিসার ১২৯ নং আয়াতে উল্লেখ (বাংলা অনুবাদ) আছে
তোমরা কখনও নারীদেরকে সমান রাখতে পারবে না, যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও। অতএব, সম্পূর্ণ ঝুঁকেও পড়ো না যে, একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়। যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
১২৯ নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
যেসব ওলামাগণ বলেন যে, নারীদেরকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে; তারা কি এ আয়াতটি পড়েন নি? আমার এ প্রতিবেদনটি যা লিখে সমাপ্ত করার প্রয়োজন মনে করেছিলাম তা এ আয়াতেই স্পষ্ট করা হয়েছে। নারীদের সমান রাখার বিষয়টি এ আয়াতের মাধ্যমে নিষেধ করা হয়েছে।
নারীর সমান অধিকারের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেল।
সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতে উল্লেখ (বাংলা অনুবাদ) আছে
মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন।
আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত।
১৭৬ নং আয়াতের বিশ্লেষণ:
সূরা নিসার সর্বশেষ এ আয়াতে কোন পুরুষ মারা গেলে কিভাবে নারীর সাথে বৈষম্য করা যায় সে বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন পুরুষ মারা গেলে তার সন্তান না থাকলে তার ভাই-বোন ঐ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে;সেক্ষেত্রে ভাইয়ের অর্ধেক পাবে বোন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।