আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জনরোষের ভয়ে এলাকায় যান না এনামুল হক

ক্ষমতায় থাকাকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক ভাই-ভাগ্নেসহ আত্দীয়স্বজনদের প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তাদের টেন্ডারবাজি, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে সীমাহীন চাঁদাবাজি ও অবাধে নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন করেছেন। ফলে শিবগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ বেহাল অবস্থায় রয়েছে। সে সময় জামায়াত-শিবির কর্মীরা স্থানীয়দের সহায়তায় কানসাট পল্লী বিদ্যুতে আগুন দিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। অন্যদিকে মোহাম্মদ এনামুল হকের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ায় তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হন।

এ ছাড়া জনরোষের কারণে বর্তমানে এলাকায় যেতে পারেন না। জানা গেছে, তৎকালীন বিএনপি আমলে পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক। সে সময় তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হলে ২০০১ সালের দিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালে তিনি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। মন্ত্রিত্ব লাভের পর তার এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেন শিবগঞ্জ উপজেলার এক চিহ্নিত রাজাকারের ছেলেকে। সে সময় এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ হলেও তিনি এসবের কোনো গুরুত্ব দেননি।

এ সময় তার ভাই বিএনপি সমর্থক মোহাম্মদ নাজমুল হক রাতারাতি আওয়ামী লীগার বনে গিয়ে এবং জামায়াত সমর্থিত ভগি্নপতি মফিজ উদ্দন ও ভাগ্নে বিপ্লব তদবির বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ এনামুল হক ক্লিন ইমজের অধিকারী হলেও তার ভাই, ভগ্নিপতি ও ভাগ্নের টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য ও সোনামসজিদ স্থলবন্দরে চাঁদাবাজির দায়দায়িত্ব তার ওপরই বর্তায়। এতে স্থানীয় লোকজনসহ তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হতে থাকেন। সে সময় শিক্ষক নিয়োগসহ পুলিশ ও বিদ্যুৎ বিভাগে যতজনের চাকরি হয়েছে তারা সবাই জামায়াত-বিএনপির লোক। এভাবেই অবমূল্যায়ন করা হয়েছে দলীয় লোকজনকে।

এ নিয়ে তার ওপর স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ফলে স্থবির হয়ে যায় দলীয় কার্যক্রম। সরকারের শেষ আমলে তিনি অনেকের চক্ষুশূলে পরিণত হওয়ায় তার নির্বাচনী এলাকা শিবগঞ্জ উপজেলায় গেলেও তিনি পৈতৃক বাড়িতে রাতযাপন না করে কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের রেস্ট হাউসে থাকতেন। এ নিয়েও অনেকেরই ক্ষোভ ছিল। একপর্যায়ে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশ হয় ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার দিন।

ওইদিন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে ক্ষুব্ধ লোকজন অংশ নিয়ে কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আগুন দেওয়া ছাড়াও সোনামসজিদে নির্মাণাধীন পর্যটন মোটেলে তাণ্ডব চালিয়ে আগুন দেন এবং একজন প্রকোশলীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেন। এ ঘটনার পর তৎকালীন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী পুলিশ পাহারায় মাত্র কয়েকবার শিবগঞ্জে গেলেও সেখানে রাতযাপন না করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউসে থাকতেন। প্রসঙ্গত, সে সময় থেকেই তার ভাই নাজমুল, ভগ্নিপতি মফিজ ও ভাগ্নে বিপ্লব এলাকা ছেড়ে চলে যান। এদিকে নবম জাতীয় সংসদের তথা সরকারের মেয়াদ শেষে মন্ত্রিত্ব হারানোর পর মোহাম্মদ এনামুল হক জনরোষের কারণে আর এলাকায় যেতে পারেননি। এমনকি জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণে তাকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দিয়ে কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।

তার পরও তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি জনরোষের ভয়ে। বর্তমানে তার ভাইসহ আত্মীয়স্বজনের কারণেই শিবগঞ্জ আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এ ব্যাপারে জানতে মোহাম্মদ এনামুল হক, তার ভাই নাজমুল হক ও ভাগ্নে বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, তিনি পরিবার নিয়ে প্রবাসজীবন যাপন করছেন।

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।