বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলিপ লা হুরে-এর সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকে তিনি একথা জানান বলে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে রেষারেষিতে বিশ্ব ব্যাংকের ১২০ কোটি ঋণ না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর বেশ কয়েকবারই ঋণদাতা সংস্থাগুলোর শর্তের বেড়াজাল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন হাসিনা।
ঢাকা সফরে আসা ফিলিপ লা হুরে দুপুরে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান।
বাংলাদেশের উন্নয়নের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসাবে বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অবশ্যই বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তাকে স্বাগত জানায়।
তবে সেই সঙ্গে উন্নয়নের ধারণার সঙ্গে আঞ্চলিক মিথষ্ক্রিয়ার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “পৃথিবীর প্রতিটি দেশের উন্নয়ন দর্শন, সে দেশের সংস্কৃতি, মানুষের মনসতত্ত্ব, ভৌগলিক এবং পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে।
“কিন্তু, বাংলাদেশ কারো কাছ থেকে দেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো শর্তযুক্ত সহায়তা চায় না। ”
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে অফিস স্থাপনের পর থেকে বিশ্ব ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে ফিলিপ লা হুরে বলেন, উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রায় বিশ্ব ব্যাংক সব সময়ই বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করার আগ্রহের কথাও প্রকাশ করেন বলে জানান শাকিল।
২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে ২৮০ কোটি ডলার সহায়তা করার অঙ্গীকার পূরণ করবে বলে জানান সংস্থার আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক ১৭৩ কোটি ডলারের সাহায্য সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের সঙ্গে।
অর্থনৈতিক ভাবে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসাও করেন বিশ্ব ব্যাংকের আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার একমাত্র লক্ষ্য দেশের জন্য ভালো কিছু করা। দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও নিরক্ষরতামুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের ওপর রাখতে সক্ষম হয়েছি।
আমরা আশাবাদী, ২০২১ সালে বাংলাদেশ এই প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিট অতিক্রম করবে। ”
গত সোমবার রেকর্ড পরিমাণ ৭ হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বিদ্যুতের সিস্টেম লস ৪০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে আসার কথাও বলেন তিনি।
শাকিল বলেন, “৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার অভাবনীয় অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে ফিলিপ লা হুরে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনি সফলভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ”
এই অঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে এক্ষেত্রে সহায়তার আগ্রহও প্রকাশ করেন বিশ্ব ব্যাংকের আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট।
প্রধানমন্ত্রী তাকে জানান, বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারত এবং বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মধ্যে দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে।
বাংলাদেশে প্রথম সফরে আসা ফিলিপ লা হুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করেন বলে শাকিল জানান।
“তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি বুঝতে পেরেছেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের মনের কোথায় আছে। ”
ঢাকার বাইরে যশোর ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা শহরে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ফিলিপ লা হুরে বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে কৃষকদের উদ্যোগ ও পরিশ্রমের প্রশংসা করেন।
অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।