আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেসবুক এবং প্রোপাগান্ডা!

১.
রিমন ঘুম জড়ানো চোখে মোবাইল ফোনে সময় টা দেখে নিলো। ৭ টা ১৫ বাজে, আরো মিনিট পনেরো গড়িয়ে নেয়া যাবে। এই সুযোগে সে ফোন থেকেই ফেসবুকে ঢুকল। হোম পেজে এক গাদা নতুন পোষ্ট। সবগুলোর মূল বক্তব্য একই, সরকার কেন কোটি কোটি টাকা সরাসরি গরীব মানুষেকে না খাইয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মত ফালতু কাজে ব্যয় করতে হবে? প্রায় প্রতিটি পোষ্টের সাথেই গরীব মানুষের কষ্ট করে জীবন যাপনের ছবি।

রিমন ফেসবুক থেকে বেড়িয়ে এল। চোখ কচলে বাথরুমের দিকে গেল ফ্রেশ হবার জন্য।

দুপুর পর্যন্ত সময়টা অফিসে বেশ ব্যস্ততার মধ্যেই কাটলো। দুপুরের খাবার খেয়ে একটু সময় পেল ফেসবুকে ঢোকার। এখনো বিভিন্ন পেজ থেকে পোষ্ট দিয়ে সরকার কে গালি গালাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ফেসবুকের হোমপেজে বেশ কয়েকজন “নিরপেক্ষ” বন্ধুকেও সে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখলো। রিমন নিজে রাজনীতি নিয়ে তেমন একটা চিন্তা ভাবনা করে না। রাজনীতিবিদের সে একদল অকাট মূর্খ জংলী ভাবতেই ভালোবাসে। নিরপেক্ষ ভাবে সব রাজনৈতিক দলকে গালি দেয়াকেই সে একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করে! পাশের ডেস্কের কলিগ ডাক দেয়ায় সে ফেসবুক থেকে বেড়িয়ে এলো।

সন্ধ্যায় সিএনজি করে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে সে আবার ফেসবুকে ঢুকল।

সবাই মিলে এখনো সরকারের মুন্ডুপাত চালিয়ে যাচ্ছে। যে সব পেইজ থেকে এই সন পোষ্ট আসছে, তারা আপাত দৃষ্টিতে রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ দল বলেই মনে হয়। এছাড়া তাদের পেজ লাইক করেছে হাজার হাজার মানুষ। সবাই যখন এই জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে কথা বলছে, এই ইস্যুতে একটা স্ট্যাটাস না দেয়াটা ঠিক হবে না। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল বাড়িতে ফিরেই একটা স্ট্যটাস দিয়ে ফেলবে এই পোস্টগুলোর সাথে সুর মিলিয়ে।

২.
মানুষ ফেসবুকে কি লিখবে না লিখবে, সেই জিনিসের অনেকটাই নির্ভর করে সে কোন কোন পেজ সাবস্ক্রাইব করে রেখেছে তার উপর। যখন হোমপেজে সাবস্ক্রাইব করা পেজগুলোর পোষ্টে ভর্তি হয়ে যায়, তখন যে কারোই মনে হতে পারে "বাতাস মনে হয় এই দিকেই বইছে, আমিও দিয়ে দিই একটা স্ট্যটাস"! এক বারও কেউ চিন্তা করে না একটা একাউন্ট থেকেই শত শত পেইজ বানানো সম্ভব।

স্বীকার করতেই হবে এই দিক থেকে জামাত শিবির সবার থেকে বেশি এগিয়ে আছে। চটি এবং ওড়না পেজ থেকে শুরু করে হার্ডকোর ধর্মীয় পেজ সবই আছে তাদের দখলে। সেই জন্যই নিতান্ত গোবেচারা বন্ধু, যে কিনা বছরে ১০/১২ টার বেশি স্ট্যটাস দেয় না, সেও স্ট্যটাস মেরে বসে ২৬ মার্চ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিরুদ্ধে।

অথচ সেই একই বন্ধু নিশ্চুপ থাকে জামাত-শিবিরের জ্বালাও পোড়াও উৎসবে আর তারেক জিয়ার অসংলগ্ন কথায়!

এই প্রোপাগান্ডা ছড়ানোতে এবং হাবিজাবি পেইজ প্রোমোট করতে ফেসবুকের পলিসি-ও দায়ী। টাকা খরচ করেই এই কাজটা করা সম্ভব। বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটা দেখা যেতে পারে-

যারা এই পোষ্টটি দেখছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে এই লিঙ্কে গিয়ে শিবিরের বাছা বাছা প্রোপাগান্ডা পেজগুলো আনলাইক করুন। নিজেকে কোন সন্ত্রাসী সংঠনের উন্নতির সোপান হতে দেবেন না। আপনার জানা চিহ্নিত ফেসবুক পেজ, যেগুলো জামাত-শিবিরের প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর লিংক কমেন্টে শেয়ার করুন।

যাতে করে বাকিরা এই সব প্রোপাগান্ডা থেকে দূরে থাকতে পারেন।

-- কাজী ফয়সাল

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.