‘আবুল তোর ভাই টা মরল কেন রে??’
আবুল কথা বলে না। খটমট করে ভাইয়ের নিথর দেহটার দিকে তাকায়। সামান্য একটা লুঙ্গি পরে পাবলিক প্লেসে হাত পা ছাড়িয়ে উদাম গায়ে শুয়ে আছে আবুলের ভাই। গা ভর্তি কালো কালো দাগ, রক্ত জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে আছে। আবুলের মোটা ভাইটাকে আরো অনেক মোটা দেখাচ্ছে।
মোটা দেখাবেই না কেন? খাওয়াদাওয়াটা তো আর কম হয়নি! চড়-থাপ্পর, কিল-ঘুষি-লাত্থি, হক স্টিক, রড, চাপাতি বাদ যায়নি কিছুই। ওর বন্ধুরা সারারাত ধরে আদর করে খাইয়ে দিয়েছে। ভাইয়ের আদর মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে আবুল।
আবুলের এ দুর্ভাগা ভাইটির নাম সাদ। সাদ ইবনে মমতাজ।
একাএকা মরে গেছে। একটা আদুরে স্পর্শ কিংবা এক ফোটা জল। অভাগার কপালে কিছুই জোটেনি। কখন মরে গেছে সেটাও কেউ জানেনা। ‘কি এমন পাপ করেছিল রে তোর ভাই?’ পাপ! পাপই বটে।
দেশের একটা খ্যাতনামা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সবচেয়ে বড় পাপটা করেছিল সে। যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবিত মানুষেরও নিরাপত্তা দিতে পারেনা মৃত লাশেরও না। নিরাপত্তাহীন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু হায়েনাকেও সরলমনে বিশ্বাস করেছিল সে। হায়েনারা তার বিশ্বাসের উপযুক্ত প্রতিদান দিয়েছে। পঁচে যাওয়া পৃথিবীর তীব্র পঁচা গন্ধে হয়ত ঘুমাতে অনেক কষ্ট হত সাদের।
সাদের সেই বিশ্বস্থ হায়েনারা তাকে সে কষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তি দিয়েছে। ‘আবুল, তোর ভাইটা তাহলে মরেই বেঁচে গেল নাকি রে?’
ঐ যে... ওরা কারা আসে? ঝাপসা চোখ মুছে তাকায় আবুল। সাদের মত এক জোড়া নিরীহ চোখ, সাদের মতই নিষ্পাপ চাহনি, এমনকি দুই চোখের মাঝের নাকটা দেখতেও অবিকল সাদের মত! সাদ... সাদ... সাদ...! হাজার হাজার সাদ রাজপথে নেমে এসেছে। আরে মেয়েটা কাঁদছে কেন? অবাক কান্ড! কে? কে স্লোগান দেয়??
‘আমার ভাই মরল কেন? প্রশাসন জবাব চাই...
সাদের খুনিদের... ফাঁসি চাই... ফাঁসি চাই...’
আবুল নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা। মিছিলের মাঝে মিশে যায়।
দাঁতে দাঁত চেপে বজ্রকন্ঠে চিৎকার করে ওঠে-
‘আমার ভাই মরল কেন? জবাব চাই... জবাব চাই...’
জবাবটা জানা যে আবুলের খুব দরকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।