‘আমি বাংলাদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেখানে রানা প্লাজার মতো কারখানা পরিদর্শন করেছি। আমি খুব ভালো করেই জানি, ভবনটি ধসে পড়ার আগে এর অবস্থা কতটা খারাপ ছিল!’ সম্প্রতি ভোগ ফ্যাশন সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এমন মন্তব্যই করেছেন ‘হ্যারি পটার’খ্যাত ব্রিটিশ অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন।
দেখতে দেখতে রানা প্লাজা ধসের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। গত বছরের ২৪ এপ্রিল ভয়াবহ ওই ভবনধস কেড়ে নিয়েছে ১ হাজার ১৩৩ জন মানুষের জীবন।
আর আহত হয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ। অনাথ হয়েছে অন্তত ৮০০ শিশু। মানবসৃষ্ট ভয়াবহ ওই বিপর্যয় স্তম্ভিত করে দিয়েছে বাংলাদেশের পাশাপাশি পুরো বিশ্বকে।
বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের করুণ এ চিত্র প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একাধিক তারকা।
ভোগ ফ্যাশন সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে টিনেজ মেয়েদের শপিংয়ের অভ্যাস পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে ২৩ বছর বয়সী এমা ওয়াটসন বলেন, ‘শপিং করার আগে অন্তত দুবার চিন্তা করতে হবে। আমার পছন্দ-অপছন্দের পুরো দায়টাই আমার। মনে রাখতে হবে, আমার পছন্দ-অপছন্দ ভয়াবহ কোনো পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ’
এমা ওয়াটসন ছাড়াও এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ২০১৪ সালের অস্কারজয়ী হলিউডের অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। তাঁর মতে, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রতি যে ধরনের মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, পোশাকশিল্পের প্রতিও ঠিক একই ধরনের মনোযোগ দিতে হবে।
পোশাক কেনার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বেশি সচেতন ও বিবেকবান হতে হবে। আমাদের আত্মিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই পোশাকশিল্পে পরিবর্তন আনতে পারব আমরা। ’
ইমারত বিধিমালা ভঙ্গ করে ঢাকার সাভারে নির্মিত হয়েছিল রানা প্লাজা। ভবনটিতে পাঁচটি কারখানা, একটি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি দোকান ছিল।
রানা প্লাজায় ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনধসের এক দিন আগেই ব্যাংক এবং দোকানের কর্মচারীরা সেখান থেকে চলে যান। কিন্তু পোশাক কারখানার শ্রমিকদের যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি কাজ না করলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেতে হয় পোশাক শ্রমিকদের। নয়তলা ভবনটি ধসে পড়তে সময় লেগেছিল মাত্র ৯০ সেকেন্ড।
ভবনটির দুর্বল নকশা, মূল নকশাবহির্ভূত তলা নির্মাণ, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, নির্মাণ চলাকালীন তদারকি না করা, ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও ভবনের মালিক সোহেল রানা ও তাঁর বাবা আবদুল খালেক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে শ্রমিকদের জন্য আসলে একটি মৃত্যুফাঁদ তৈরি করেছিলেন। সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হলেও ভবনটিতে অবস্থিত পোশাক কারখানা ফ্যান্টম টেকের অন্যতম মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড মেয়ের রেকো ঘটনার পরপরই তাঁর মাতৃভূমি স্পেনে চলে গেছেন। ফলে তাঁকে আর গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। রানা প্লাজা ধসে নিহত লোকজনের স্বজনেরা এই মৃত্যুর মিছিলকে হত্যা বলেই রায় দিয়েছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।