দেশজ সম্পদের ওপর নির্ভর করে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় গতকাল বৃহস্পতিবার সংশোধিত এডিপির আকার অনুমোদন দেওয়া হয়। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংশোধিত এডিপিতে যে পরিমাণ বিদেশি সহায়তার অর্থ বরাদ্দ রয়েছে, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ জোগান দেওয়া হবে স্থানীয় উৎস থেকে। এটা নজিরবিহীন। সংশোধিত এডিপিতে স্থানীয় উৎস থেকে ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা জোগান দেওয়া হবে। আর বিদেশি সহায়তার ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, গতকালের সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া ৫৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত আকার প্রস্তাব করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে সাংবাদিকদের জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাড়তি পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনর্বিন্যাস করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, স্থানীয় মুদ্রায় জোগান দেওয়া বাড়তি পাঁচ হাজার কোটি টাকা এমনভাবে নেওয়া হবে, যাতে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের বেশি নেওয়া না হয়।
বহুল আলোচিত সংশোধিত এডিপির আকার নিয়ে দুই মাস ধরে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ চলছিল। প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত বাজেটের আকার ৫৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরে আরও এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন তা মানতে রাজি হয়নি। সংশোধিত এডিপির জন্য ৬০ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা চেয়েছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত গতকালের এনইসি সভায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবই করা হয়।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতের অমিল হবেই।
কিন্তু দিন শেষে মিলে যাব। উনারা (অর্থ মন্ত্রণালয়) কী পরিমাণ দিতে পারেন, সেটাও দেখতে হবে। ’
উল্লেখ্য, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় না হওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় লক্ষ্য ১১ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই সংশোধিত এডিপির বাড়তি পাঁচ হাজার কোটি টাকার জোগান ব্যাংকঋণ থেকেই নেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবার অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বছর শেষে সাধারণত সংশোধিত এডিপির ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়।
সে ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরেও একই হারে বাস্তবায়িত হলে ৫৪ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা সম্ভব হবে। তাই পাঁচ হাজার কোটি টাকা হয়তো খরচ করাই সম্ভব হবে না।
নতুন প্রকল্পসহ সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৫৪। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ২০২টি। আর এ বছর সমাপ্ত হবে এমন প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩৬টি।
তবে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ কমে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জন্য ছয় হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।
অর্থ মন্ত্রণালয় যেহেতু ৫৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করেছিল আর শেষ পর্যন্ত মোট আয়তন ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে, তাই এখন ব্যয় বরাদ্দগুলো কিছুটা পুনর্বিন্যাস করে সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত করা হবে।
কথা বলায় সাবধান হবেন পরিকল্পনামন্ত্রী: এডিপি নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে গত সোমবার প্রকাশ্যে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এর পরদিন অর্থমন্ত্রীও পরিকল্পনামন্ত্রীর সমালোচনা করেন।
এমন অবস্থায় গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘অনেক হয়েছে। আমাকে কথা বলায় অনেক সাবধান হতে হবে। আর কথা বলব না। ’ তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে যেসব বিষয়ে এসেছে তা আমার আর উনার (অর্থমন্ত্রী) ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তিগত বিষয় গণমাধ্যমে না আসাই উচিত বলে মনে করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এ বয়সে উনি অনেক কাজ করেন। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।