যখন হার্টের রক্ত সরবরাহকারী এক বা একাধিক করোনারি ধমনী আংশিক কিংবা পুরোপুরি ব্লক হয়ে যায়, তখন হার্ট পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পায় না; এই অবস্থাকে ইশকেমিক হৃদরোগ বা করোনারি ধমনী রোগ বলা হয়। এই রোগ হলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। যখন করোনারি ধমনীতে এমন আংশিক বা পূর্ণ ব্লকের সৃষ্টি হয় তখন হার্টে বাইপাস সার্জারি নামক অপারেশনের মাধ্যমে পুনরায় হৃদযন্ত্রে রক্তের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হয়। বাইপাস সার্জারির সময় ডাক্তার, রোগীর শরীরের অন্য জায়গা থেকে একটি ধমনী বা শিরা সংগ্রহ করেন। এই ধমনী বা শিরা দিয়ে করোনারি ধমনীর যে অংশে ব্লক রয়েছে তার বাইরে দিয়ে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে হার্টে রক্ত প্রবাহের একটি নতুন পথ সৃষ্টি করেন।
এই বাইপাস দিয়ে হার্টে সঠিক পরিমাণ রক্ত প্রবাহ বজায় থাকে।
বাইপাস গ্রাফটিং : বাইপাসের জন্য পায়ের স্যাফেনাস শিরা ব্যবহার করা যায়, এর এক প্রান্ত করোনারি ধমনীর সঙ্গে এবং অন্যপ্রান্ত মহাধমনীর মধ্যে ছিদ্র করে সেলাই করে গ্রাফটিং করা হয়। গ্রাফটের জন্য বক্ষপিঞ্জরের মধ্যের ইন্টারনাল ম্যামারি ধমনী নামের রক্ত পরিবাহী এক প্রকার ধমনীও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর একপ্রান্ত আগে থেকেই মহাধমনীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, অন্যপ্রান্ত করোনারি ধমনীর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। বাইপাস অপারেশনের জন্য অন্যান্য কিছু ধমনীও ব্যবহার করা হয়।
এগুলোর মধ্যে বাহুর রেডিয়াল ধমনী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। গ্রাফটের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তারের সাহায্যে বক্ষপিঞ্জরের হাড় পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই তার বুকের মধ্যেই থেকে যায়। অপারেশনের জন্য উপরিত্বকের কাটা অংশ সেলাইয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। অপারেশন সম্পন্ন হতে চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে।
অপারেশনের পর রোগীকে নিবিড় পরিচর্যার জন্য ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) বা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
অপারেশনের পরবর্তী পর্যায় : অপারেশনের পর রোগীকে পাঁচ থেকে সাত দিন হাসপাতালে অবস্থান করতে হয় যার মধ্যে প্রথম দুই-তিন দিন আইসিইউ-তে থাকেন। এরপর তাকে নিয়মিত পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। হৃদযন্ত্রের চতুর্দিক দিয়ে যে তরল পদার্থ নির্গত হয় তা নির্গমনের জন্য বুকের মধ্যে দুই-তিনটি টিউব লাগানো থাকে। অবশ্য এগুলোকে অপারেশনের এক থেকে তিন দিনের মধ্যে অপসারণ করা হয়।
নিয়মিত প্রস্রাব নির্গমনের জন্য ব্লাডারের সঙ্গে নমনীয় ক্যাথেটার লাগানোরও দরকার হতে পারে। রোগীকে এমন একটি মেশিনের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখা হয়, যা রোগীর পাল্স, শরীরের তাপমাত্রা ও শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি মনিটর করে। হাসপাতালে অবস্থানকালে নার্সরা এই মনিটরের দিকে লক্ষ্য রাখেন, কিছুদিনের মধ্যেই রোগীকে অল্প-স্বল্প কাজ করতে উৎসাহিত করা হয়। এই সময়ের মধ্যেই রোগীর কার্ডিয়াক পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। সার্জারির পর কাজ শুরু করতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে।
লেখক : কনসালটেন্ট-কার্ডিও থোরাসিক ও
ভাস্কুলার বিভাগ, এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।