সোমবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা আগামী এক মাস ধরে চলবে।
বর্তমানে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও জরিপে এগিয়ে আছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।
পঙ্কজ শরণ বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের’ ওপর নির্ভর করে। আর সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে ‘স্বার্থের’ বদল হয় না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্ট্যাডিজে (বিআইএসএস) এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির সম্পর্ক একই থাকবে কি না জানতে চাইলে হাইকমিশনার এ কথা বলেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন মোড় নেয়। দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিরোধ নিষ্পত্তিতে অগ্রসরও হয় প্রতিবেশী দুই দেশ, মূলত যা এগোয় কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সুসম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরে হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, ১৭ মে ভারতে নতুন সরকার এলে ওই বিষয়গুলো উধাও হয়ে যাবে না।
তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের কিছু স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় থাকে, যেগুলো কখনো পাল্টে যায় না।
“আমরা বিদ্যুৎ লাইন তুলে নিচ্ছি না। আমরা মৈত্রী এক্সপ্রেসও বন্ধ করছি না। বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং এগুলো সময়ের প্রয়োজন। ”
যতদিন বাংলাদেশে এসব পদক্ষেপের গুরুত্ব থাকবে ততোদিন ভারত এগুলো অব্যাহত রাখবে- মন্তব্য করেন তিনি।
পঙ্কজ বলেন, “যদি এমন অবস্থা হয় যে, বাংলাদেশ সরকার বিদায় জানিয়ে দিচ্ছে তখন আমরা নিজেদের গুটিয়ে নেব এবং ঘরে ফিরে যাব।
“অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও লাভজনক হয় এমন সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে বজায় রেখে আমরা সামনে এগিয়ে যাব। ”
গত পাঁচ বছরে দুই দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে শুরু করে দুই দেশের সম্পর্কে ব্যাপক অগ্রগতি হয়।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে ৮০ কোটি ডলার ঋণ এবং ২০ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে ভারত।
ভিসা ব্যবস্থা নমনীয় করার পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ‘উল্লেখযোগ্য’ অগ্রগতি হয়।
বিএনপি নেতৃত্বাধী জোটের বর্জনের মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ভারতের জোর সমর্থন পেয়েছে বলে মানুষের মধ্যে ধারণা রয়েছে।
হাই কমিশনার পঙ্কজ বলেন, ভারত সব সময় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে।
“আমরা সব সময় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলি। ”
তিনি বলেন, “আমরা চিন্তা করি কোনটা সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে।
“বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে না মিললে আমরা পেছনে ফিরি এবং নিজেদের কাছে প্রশ্ন করি- আমরা কি এমন কিছু করছি, যা ঠিক নয়। ।
”
দুই দেশের সম্পর্ক একই রকম থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যতক্ষণ দুই দেশের সম্পর্কের মৌলিক দিকগুলো সংহত থাকবে এবং আমাদের স্বার্থ একই রকম থাকবে ততক্ষণ নীতিও একই থাকবে। ”
দুই দেশের সম্পর্ক ‘সরকার ও রাজনীতি’র বাইরে রেখে বিবেচনা করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
ভারতীয় দূত মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্ক এমন একটি পর্যায় পার করছে, যা ২৫ বা ৩০ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত।
তবে দুই দেশের পারস্পারিক বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
পঙ্কজ বলেন, “আমরা পরস্পরকে চিনতে বা জানতে পারি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা একে অন্যকে কি বুঝতে পারি?
“আমাদের প্রতিদিনি নিজেদেরকে এ প্রশ্ন করা দরকার। ”
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে অগ্রগতি হলেও স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থন এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখনো ঝুলে আছে।
তিস্তা চুক্তি সই না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন ভারতীয় হাই কমিশনার।
এছাড়া ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের বিষয়টি ঝুলে থাকাটাও ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভারত এসব বিষয়ের সুরাহায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কোনো ‘সংশয়’ নেই।
তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর এসব ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে তা থেকে পিছনে ফেরা হবে না।
হাই কমিশনার বলেন, ভেবেচিন্তেই স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের বিষয়টি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে উত্থাপন করা হয়েছে, যাতে লোকসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টিও শেষ না হয়ে যায়।
নতুন সরকার এলেও তা ‘আইনিভাবে কার্যকর’ থাকবে বলে জানান তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।