জিয়ার বিবি সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু শেখের বেটি সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ পার হইয়া গেছে, কিন্তু আর কিছু দিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা ছদ্ম কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে। ক্ষমতার লোভ অবৈধ রকমে বাড়িয়া গেছে বটে, কিন্তু নির্বাচনী চাঁদার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনো তাহার চেয়ে কিঞ্চিৎ উপরে আছে, সেইজন্যই তাড়া। আমি ছিলাম আবাল পাব্লিক, সুতরাং নির্বাচন সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল। আমার কাজ আমি করিয়াছি, ছবিসহ ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়াছি।
আমাদের দেশে যে সরকার একবার ক্ষমতায় গিয়াছে পাব্লিক সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোনো উদ্বেগ থাকে না। ডিম থেরাপি দেয়ার স্বাদ পাইলে আসামী সম্বন্ধে পুলিশের যে দশা হয়, পাব্লিক সম্বন্ধে সরকার ভাবটা সেইরুপ হইয়া উঠে। ডিমের অভাব ঘটিবামাত্র তাহা পারিয়া লইতে তাহাদের কোনো দ্বিধা থাকে না। যত দ্বিধা ও দুশ্চিন্তা সে দেখি আমাদের আবাল পাব্লিকের । নির্বাচনের পৌনঃপুনিক প্রস্তাবে আমাদের কতৃপক্ষের টাকার থলে ব্যাবসায়ীদের আশীর্বাদে পুনঃপুনঃ মোটা হইয়া উঠে, আর প্রথম নির্বাচনের আঁচেই আমাদের কাঁচা মাংস হরতালের আগুনে পুড়িয়া কাবাব হইবার উপক্রম হয়।
সত্য বলিতেছি, আমার মনে এমন বিষম উদ্বেগ জন্মে নাই। বরঞ্চ নির্বাচনের কথায় আমার মনের মধ্যে যেন উত্তুরে হাওয়া দিতে লাগিল। কৌতূহলী কল্পনায় শিক্ষালয়গুলির মধ্যে একটা যেন তালাচাবি লাগিয়া গেল। যাহাকে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের নোট পাঁচ-সাত পাতা মুখস্থ করিতে হইবে , তাহার পক্ষে এ ভাবটা দোষের। আমার এ লেখা যদি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত হইবার কোনো আশঙ্কা থাকিত তবে সাবধান হইতাম।
কিন্তু, এ কী করিতেছি। এ কি একটি নির্বাচনী অংগীকারনামা, যে গল্প লিখিতে বসিলাম। এমন সুরে আমার লেখা শুরু হইবে এ আমি কি জানিতাম। মনে ছিল, কয় বৎসরের পশ্চাৎদেশের বেদনার যে মেঘ কালো হইয়া জমিয়া উঠিয়াছে, তাহাকে হরতালসন্ধ্যার ঝোড়ো বুলেটবৃষ্টির মতো প্রবল বর্ষণে নিঃশেষ করিয়া দিব। কিন্তু, না পারিলাম হিন্দিতে শিশুকাব্য বই লিখিতে, কারণ, অপসংস্কৃত ক্ষুব্ধবোধ ব্যাব্যাকরণ আমার পড়া নাই; আর, না পারিলাম চটিকাব্য রচনা করিতে , কারণ চটিভাষা আমার জীবনের মধ্যে এমন কুষ্পিত হইয়া উঠে নাই যাহাতে নিজের অন্তরকে বাহিরে টানিয়া আনিতে পারি ।
(৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পূর্বে লেখা)।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।