ম্যাচের শেষপ্রান্তে ঠোঁট ফেটে গেল হাভিয়ের মাসচেরানোর। সবুজ ঘাসের জমিনে টুপ টুপ করে ঝরল লাল রক্ত। সেই রক্তাক্ত ঠোঁট নিয়েই হেঁট মাথায় মাঠ ছাড়লেন মাসচেরানো। বার্সেলোনা ডিফেন্ডারের রক্ত দৃশ্যমান। কিন্তু লাখো-কোটি বার্সা-সমর্থকের হূদয়ের রক্তক্ষরণ অপ্রকাশ্যই থেকে গেল।
ফিরতি লেগে বার্সাকে ১-০ গোলে (দুই লেগ মিলিয়ে ২-১) হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠে গেল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব টুর্নামেন্টে ৪০ বছরে প্রথমবারের মতো শেষ চারে উঠল নিজেদের নতুন করে চেনানো মাদ্রিদের ক্লাবটি।
ওদিকে মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনাতেও রক্তক্ষরণ হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকদের। প্রথম লেগের মতো ফিরতি লেগেও বায়ার্ন মিউনিখের জালে প্রথমে গোল ঢুকিয়ে আশার সলতেয় আগুন জ্বালিয়েছিল ইউনাইটেড। ৫৭ মিনিটে প্যাট্রিস এভরার দুর্দান্ত শটে এগিয়ে গিয়ে আগের রাতে আরেক ইংলিশ ক্লাব চেলসির দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল ডেভিড ময়েসের দল।
কিন্তু দুই মিনিটের মধ্যে মারিও মানজুকিচ সমতা ফেরান। ৬৮ মিনিটে টমাস মুলারের পর ৭৬ মিনিটে আরিয়েন রোবেনের গোলে বায়ার্ন শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলেই জেতে। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ ব্যবধানে শেষ চার নিশ্চিত করে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
আজ ভাগ্য নিশ্চিতভাবেই পাশে ছিল বার্সার। ১৯ মিনিটের মধ্যেই তিন তিনবার বার্সার গোলবারে ধাক্কা লেগে ফিরে এসেছিল বল।
এরই একটা শেষ পর্যন্ত গোলে রূপান্তরিত করেছিলেন কোকে। ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথাতেই আদ্রিয়ানের শট বারে লেগে ফিরে এলে বাঁ প্রান্ত থেকে বার্সারই সাবেক খেলোয়াড় ডেভিড ভিয়া ক্রস করেন। সেই ক্রস থেকে রাউল গার্সিয়ার হেড পৌঁছে যায় ওত পেতে থাকা কোকের কাছে। জোরাল শটে বল জালে জড়িয়ে দেন কোকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে এটাই ২২ বছর বয়সী তরুণ মিডফিল্ডারের প্রথম গোল।
আর সেই গোলটাই কী এক স্মরণীয় জয় এনে দিল অ্যাটলেটিকোকে!
প্রথম গোলের উত্স ভিয়া এরপর ১১ মিনিটে প্রথমবার এবং ১৯ মিনিটে দ্বিতীয়বার বারে বল লাগান। ২০ মিনিটের মধ্যেই অ্যাটলেটিকো ৩-০ করে ফেলতে পারত। বারবার কপালগুণে বেঁচে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল ভাগ্য বুঝি আজ বার্সার দিকেই মুখ তুলে তাকাবে। এমনকি একটি পেনাল্টির জোরাল দাবি থেকেও রেফারির সৌজন্যে বেঁচে গেছে তারা। কিন্তু ভাগ্যের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরতে হলে নিজেদেরও হাত বাড়িয়ে দিতে হয়।
বার্সা সেটাই করতে পারেনি।
চারবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের সেরা তিনটি সুযোগ নষ্ট করেছেন দলের দুই তারকা লিওনেল মেসি ও নেইমার। ১৩ মিনিটে মেসির বিরল হেড ডানপোস্টে বাতাস লাগিয়ে বেরিয়ে গেছে। ৭৮ মিনিটে নেইমারের হেড বাঁ পোস্টের মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে ছিল। ৪৮ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি এর আগে দুবার অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে বার্সাকে উদ্ধার করা নেইমার।
গোলরক্ষক কর্তোয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে বল সরিয়ে দিয়েছেন নেইমারের পা থেকে। ৬০ মিনিটে জাভির ফ্রি হেডারও কাজে আসেনি।
এ ছাড়া এই মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে ভালো রক্ষণভাগ নিয়ে খেলা অ্যাটলেটিকোর দূর্গে তেমন আতঙ্ক ছড়াতে পারেনি বার্সা। ফলাফল? টানা ছয় মৌসুম পর প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চারে উঠতে না পারা।
পুরো রাতে মেসি ছিলেন নিষ্প্রভ।
এই দলটা কতটা মেসির ওপর নির্ভরশীল সেটা প্রমাণ হয়ে গেল আরেকবার। মেসিকে বেঁধে ফেললেই যেন সব খেল খতম। দ্বিতীয়ার্ধে তবু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে বার্সা। কিন্তু ম্যাচ শেষে বার্সা অধিনায়ক জাভিকে পুড়তে হলো সুযোগগুলো হাতছাড়া করার আক্ষেপে, ‘ম্যাচ আমাদের হাতের নাগালেই ছিল। আমরা চার-পাঁচটা এমন সুযোগ পেয়েছিলাম, অন্য সময়ে যেগুলো গোলই হতো।
কিন্তু ওরা প্রথম ১৫-২০ মিনিটে দুর্দান্ত লড়াই করে খেলার পুরো সুবিধাই তুলে নিয়েছে গোলটা করে। এর পরও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম, অন্তত ড্র-টা পাওনাই ছিল আমাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অ্যাটলেটিকো সমর্থকদের অভিনন্দন জানানো ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। ’
এই অ্যাটলেটিকোর সঙ্গেই বার্সার লিগ শিরোপার দ্বৈরথ কিন্তু এখনো আছে। তা ছাড়া কদিন পর স্প্যানিশ কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গেও ম্যাচ।
চ্যাম্পিয়নস লিগের আশা শেষ হয়ে যাওয়ার পর বার্সা নিশ্চয়ই লিগ আর কাপেও প্রতিপক্ষ সমর্থকদের অভিনন্দন জানাতে চাইবে না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।