রিতুর সাথে আমার পরিচয় হওয়ার পর্বটা ইন্টারেস্টিং।
একদিন আননোন একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। আমি ফোন রিসিভ করে বললাম - হ্যালো।
ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বলল - আপনি কি তাজুল?
- হ্্যাঁ।
- আমি রিতু।
- কোন রিতু?
- মুন্সিগঞ্জ থেকে।
- মুন্সিগঞ্জ থেকে? রিতু? ঠিক চিনতে পারছি না।
- চিনতে পারছেন না? আচ্ছা ঠিক আছে।
মেয়েটি ফোন রেখে দিল। ফোন রাখার সাথে সাথে আমার মনে পড়ল ‘আরে তাইতো, মুন্সিগঞ্জ থেকে তো আমার একটা কল আসার কথা ছিল, রিতু নামে’।
মনে পড়ল জুয়েল আমাকে সন্ধার সময় বলেছিল যে, সে রিতু নামে একটা মেয়েকে আমার নাম্বার দিতে চায়। আমার কথা শুনে নাকি মেয়েটির ইচ্ছা হয়েছে আমার সাথে কথা বলার। কেন, কি ব্যপার - এই সব আর জানতে চাইনি। আমি কোন সুপার স্টার না যে আমার সাথে কথা বলার জন্য মানুষ হাঁ করে রয়েছে। একজন আগ্রহ করে কথা বলতে চাইছে এটাইতো বিরাট ব্যপার।
আমি সাথে সাথে কল ব্যাক করে বললাম - আপনি রিতু? মুন্সিগঞ্জ থেকে?
- হ্যাঁ।
- তখন হঠাৎ করে আপনাকে চিনতে পারিনি।
- এখন কিভাবে চিনতে পারলেন?
- সেটা অন্য এক ঘটনা।
- সেই ঘটনাটিই শুনতে চাচ্ছি।
আমি রিতুকে ঘটনা বললাম।
এভাবেই তার সাথে পরিচয়। মানুষ সম্পর্কে আমার গভীর কৌতুহল। কোন মানুষের সাথে আমার নতুন পরিচয় হলে আমার মধ্যে নানান প্রশ্ন আসে। এই মানুষটা কেমন? সে কি করে, তার ভাবনা কী?-ইত্যাদি ইত্যাদি। রিতুর সাথে আমার নিয়মিত কথা হত।
হাজার কথা হত তার সাথে। সে যে বহু দূরে থাকে, তাকে কখনও দেখিনি এটা মনেই থাকত না। মনে হত যেন তার সাথে আমার নিয়মিত দেখা সাাত হচ্ছে। এভাবে এক বছর কেটে গেল। একদিন জুয়েল এসে বলল - ভাই, যাইবেন নাকি বেতকা, মুন্সিগঞ্জ?
- রিতুদের বাড়ি?
- হ্যাঁ।
বড় ভাইয়ের হোন্ডাটা আজকে ফ্রি পাইছি।
- চল।
হুট করেই রওনা হয়ে গেলাম। প্রায় বিশ কিলোমিটারের পথ। আমরা আসছি এটা রিতুকেও জানানো হয়নি।
বেতকা গিয়ে পৌছাতে পৌছাতে সন্ধা পার হয়ে গেল। বেতকায় তখন রাত নেমে গিয়েছে। রিতু ফোনে বলল - ‘ এত রাতে আসছেন, এখন কি বের হওয়া যাবে? আচ্ছা ঠিক আছে আসছেনই যখন পাঁচ মিনিটের জন্য বের হতে পারব। রাতের বেলা, বুঝেনই তো। শুধু দেখা করে চলে যাব।
’
রিতুর বলা জায়গায় আমি আর জুয়েল হোন্ডার লাইট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোন মানুষজন দেখা যাচ্ছে না। চারদিকে ঘণ গাছপালা। রাস্তার দুই পাশে বড় বড় গাছ দাঁড়িয়ে আছে ভুতের মত।
তখন নভেম্বরের শেষ সময়। কিন্তু সেখানে শীত লাগছে। কিছুণ পর রিতু এবং তার চাচাত বোন আসল। অন্ধকারে চেহারা দেখা যাচ্ছে না কারও। শুধু দুইটা ছায়া মূর্তি।
রিতু তার চাচাত বোনকে বলল - রিনু, মোবাইলের লাইট-টা মার তো। তাকে একটু দেখি।
আমি বললাম - ‘ভাল বুদ্ধি তো’। আমিও তার দিকে মোবাইলের লাইট মারলাম। তাকে কমবয়েসি মেয়েদের মত লাগছে।
অথচ সে তখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।
আমি মোবাইলের লাইট বন্ধ করে রিতুকে বললাম - তোমাকে তো খুবই কমবয়েসি দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন স্কুল পালিয়ে এখানে চলে আসছ।
‘তাই?’ রিতু আমার কথা শুনে হাসল। সে বলল - সরি, আর থাকতে পারছি না।
দেখেন না, কেমন রাত হয়ে গেছে? পরে ফোনে কথা হবে। তারা দুজন অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আমি আর জুয়েল হোন্ডা স্টার্ড দিয়ে আবার রওয়ানা হয়ে গেলাম। রিতুদের জায়গাটা খুব সুন্দর। ধলেস্বরী নদীর পাশে।
নদীর উপর দিয় ব্রিজ। ব্রিজের নীচ দিয়ে সুরঙ্গের মত এক জায়গা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের হতে হয়। ব্রিজের উপর মানুষজন দেখা যাচ্ছে, চটপটির দোকান আছে। তারা হয়ত রাতে বেড়াতে বের হয়েছে। ভাবলাম কত দূরে, কোথায় এসে পড়েছি।
আসার সময় হোন্ডার স্পিড যত বাড়ছে তত ঠান্ডা বাতাস লাগছে নাকে, কানে। শীতের ঠান্ডা বাতাসে হাত পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। আমি জুয়েলকে বললাম - দেখ, কত দূরের কে, কিভাবে তার সাথে পরিচয় হল। জীবনে তার সাথে আবার দেখা হবে কিনা কে জানে। কি অদ্ভূত ব্যপার, তাই না?
জুয়েল কী যেন বলল, শোনা গেল না।
হোন্ডার টানে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।