বিরোধী দলের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। এই সংসদেই প্রথমবারের মতো সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে নজিরবিহীন সমঝোতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।
৩৬ কার্যদিবসের এই অধিবেশনে বিরোধী দল সরকারি দলের সব কর্মকাণ্ডে নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়েছে। সরকারের প্রতি বিরোধী দলের ছিল অবিচল আস্থা। আর বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে স্বতন্ত্র সাংসদের সমালোচনার মুখে সরকারি দল তাদের প্রতি জানিয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন।
গতকাল শেষ দিনেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘ওয়েস্টমিনস্টারের আদলে আমরা সংসদকে পরিচালনা করতে চাই। ওয়েস্টমিনস্টারে সরকার ও বিরোধী দল একে অন্যের পরিপূরক। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই, নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাই। যদিও আমাদের সন্দেহ করা হয়।
’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলের দায়িত্ব সরকারি দলকে সহযোগিতা করা। বিরোধী দল সেই কাজটি করে যাচ্ছে।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের পর প্রথমবারের মতো বিএনপিবিহীন এই সংসদের যাত্রা শুরু হয় গত ২৯ জানুয়ারি। প্রথম কার্যদিবসেই বিরোধীদলীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাঁদের অবিচল আস্থা প্রকাশ করেন। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের সময় বিরোধীদলীয় সাংসদেরা টেবিল চাপড়ে সরকারি দলের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সরকারি দলের মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জাতীয় পার্টির সমর্থনে বক্তব্য দেন।
সংসদের এই অধিবেশনে দুটি বিল পাস হয়েছে। বিল দুটি হলো আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল-২০১৪ এবং সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (রিমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) (সংশোধন) বিল-২০১৪। বিল দুটির ব্যাপারেও বিরোধী দল থেকে আপত্তি জানিয়ে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। বরং বিল পাসের সময় সমর্থন জানিয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায়ও বিরোধী দলের সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রশংসা করেন।
গতকাল বেলা তিনটায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শেষে স্পিকার অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা-সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান।
সমাপনী বক্তব্যে স্পিকার বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলের বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা সরকারকে সহযোগিতা করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে। এই সংসদে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সাংসদেরা নিয়মিত অংশ নিয়েছেন।
এতে সংসদীয় কার্যক্রম ও গণতন্ত্র সুসংহত হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
নবম সংসদের মতো এই সংসদেও প্রথম অধিবেশনেই সব কটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। তবে নবম সংসদে সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদে বিরোধীদলীয় সদস্যদের রাখা হলেও এবার রাখা হয়নি, যা নিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, প্রথম অধিবেশনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন ১৪ কার্যদিবস।
আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ উপস্থিত ছিলেন চার দিন। নবম সংসদের পুরো মেয়াদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ দিন।
তারেক রহমানের বিচার দাবি: সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করায় তারেক রহমানের বিচার দাবি করেছেন সরকারি দলের সাংসদেরা। গতকাল রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় সরকারি দলের সাংসদেরা এ দাবি জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আরে আহাম্মক! লেখাপড়া জানে না।
তোর বাপ কী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিল? তোর বাপ তো আমাদের স্যার স্যার বলতে বলতে মুখ দিয়ে লালা বের করে ফেলত। ’ তিনি আরও বলেন, ‘বেয়াদবির একটা সীমা থাকা দরকার। ওরা তো ইতিহাস জানে না। ’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, ‘এক অর্বাচীন যুবক ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছে। বারবার রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, হিন্দুরা নীরবে-নিভৃতে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। হিন্দুদের দেশত্যাগ ঠেকানো না গেলে বাংলাদেশ মহাসংকটে পড়বে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হলে দেশত্যাগের ঘটনা ঘটত না।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আরও আলোচনা করেন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, হুইপ আতিউর রহমান, সাগুফতা ইয়াসমিন প্রমুখ। তাঁরা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।