মাত্র পঞ্চাশ গ্রাম কোকেইন অথচ কি দানবীয় শক্তিই না আছে এর মধ্যে। জাহিদের সামনে কাঁচের আয়নার উপর পঞ্চাশ গ্রাম কোকেইন পড়ে আছে। এগুলো তাকে ভুলিয়ে দেয় সব কিছু, দিন-রাত্রি, সুখ-দুঃখ মিলেমিশে সব একাকার হয়ে যায়।
পৃথিবীর সমস্ত আঁধার কে খুব বেশি কাছের মনে হয়, ব্যর্থ আর সপ্নছেড়া সুতোগুলো নির্বাসনের চাদরে ঢেকে যাবে একটু পরেই।
জাহিদ আয়নার উপরে কোকেইন গুলোকে ছোট ছোট অনেক গুলা সারিতে সারিবদ্ধ করে সাজিয়ে নেয়।
মনে হতে থাকে রঙ্গিন কিছু ঘুড়ি তার চোখের সামনে পড়ে আছে। বুকের ভিতর জমে থাকা অজানা ব্যাথা গুলো হঠাৎ করেই যেন তাকে তাকে গ্রাস করে নিতে চায়, সামনেই পিসির ওয়ালপেপারে শায়লার ছবি।
ভালবাসি তোমাকে অনেক ভালবাসি, তাই এই বিষের আশ্রয়ে আছি । ক্ষমা করে দিও আমায়, পিসির স্ক্রিনে তাকিয়ে ফিস ফিস করে বলে জাহিদ। আমি জানি তুমি চাওনি কখনো এমনটা হোক।
কিন্তু বিশ্বাস কর প্লাবনের ক্ষত চিহ্ন মুছে দিতে এই বিষের পেয়ালার জুড়ি মেলা ভার। বড় বেশি দুঃসাহসে তোমায় ছুতে গিয়েছিলাম আর তাই আজ নাগরিক কোলাহল থেকে দূরে আঁধারে পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হতে চাই।
কোকের সাথে দেয়া ছোট্ট পাইপটি দিয়ে জাহিদ সারিবদ্ধ কোকেইনের প্রথম দুই সারি দুই নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিয়ে নেয়। দপ করে জ্বলে উঠে চোখের জ্যোতি, ধীরে ধীরে পরিচিত একটা নোনতা স্বাদ অনুভব করে গলার মধ্যে। মাথার দুই পাশে রগ গুলো দপ দপ করে ওঠে,অজানা শক্তি ভর করে ওঠে তার মধ্যে...... এইত সেই চিরচেনা সুখের অনুভূতি।
হাতে ফোন নেয় জাহিদ, ডায়াল করে শায়লার নাম্বারে_
-কেমন আছো? ফোন ধরতেই প্রশ্ন করে জাহিদ।
-এইত তুমি কেমন আছো?
-ঠিক যেমন থাকে উদাসি নদীতীরে শেকড় ছেড়া কোন বৃক্ষ, ঠিক যেমন থাকে হঠাৎ জীবন লাভ করে ওঠা কোন ক্র্যাচ। ঠিক তেমন আছি যেমন টি থাকে আলো ছায়াহীন এর মাঝে হঠাৎ বন্দী হয়ে যাওয়া কোন সবুজ প্রজাপতি।
-ওফ ! তোমার কথা বুঝিনা কিছু। আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছ এসব কথা বলে? আমি তো তোমাকে সরি বলেছি, আমার কিছু করার ছিলোনা বিশ্বাস কর।
-হয়ত একটা সময় খুব বেশি বুঝে গিয়েছিলে আমাকে তাই এখন আর বুঝতে চাওনা। তোমাকে বিরক্ত করতে ফোন করিনি, হঠাৎ ইচ্ছে হল তোমায় একটু কষ্ট দেই।
-জাহিদ! প্লিজ এমন করে কথা বলতে নেই, আমি চাই তুমি সুখে থাকো।
-হা হা হা হা হা হা হা ...... পাগলের মত হাসতে থাকে জাহিদ।
-কি হল? হাসছ কেন এভাবে?
একটু ধর ফোনটা আমি আসছি ... এসে বলছি...
জাহিদ পর পর বেশ কয়েকটা লাইন কোকেইন নিয়ে নেয়।
-হ্যাঁ বল... কি বলছিলে।
-কোথায় গেলে হঠাৎ এভাবে?
-সুখ কিনতে গিয়েছিলাম, আমার বিছানার উপর সুখের দোকান । কয়েক চিলতে সুখ আর একটু খানি তুমি... আহা! এইত জীবন ।
-কি বলছ আবোল তাবোল, তোমার কথা কিছু বুঝিনা। যা বলছিলাম, হাসছিলে কেন তখন ওভাবে?
- ওহ আচ্ছা ... তৃষ্ণার্ত পথিক কে সমস্ত আঁধার একসাথে ছুড়ে দিয়ে বলছ সুখে থেকো, তাই হাসছিলাম।
-আমি সরি ...... ডুকরে কেঁদে ওঠে শায়লা, বিশ্বাস কর আমি সরি !
ফোন কেটে দেয় জাহিদ, এভাবেই স্পর্শহীন ভগ্ন মেঘের ভেলায় খুজে ফিরে সে এক জোড়া চোখের বিষণ্ণতা, যেগুলো কিনা কাতর হবে শুধু তারই জন্য।
জানো শায়লা? যখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি একে একে নেমে আসে এই বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে, আমি তখন সব উপেক্ষা করে শুধু তোমার কথা ভাবি, পিসির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আবার ফিস ফিস করে বলে ওঠে জাহিদ। আমার ছায়াময় শরীর হয়ত পড়ে রবে এই মেঝেতে আর তোমার বিষাদী চোখ চেয়ে রবে কোন নিহারিকায়, তবে জানো? আজ তোমার চোখে জল মানায় না কারন তুমি এতটাই দূরে, আবেগ গুলো তোমায় আর স্পর্শ করেনা।
জাহিদ এর নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে...... আর সুখ-দুঃখের মাঝে কোন এক যায়গায় সে চোখ বন্ধ করে ভাবে কোন সুখ নেই কোন দুঃখ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।