"প্রত্যেক সত্ত্বাকে মৃত্যু আস্বাদন করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, নিঃসন্দেহে সে হল সফল। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। " আল ইমরান,আয়াত ১৮৫
মূল লেখাটি ইংরেজিতে আমাদের এক বোন আসমা বিনতে শামীম লিখেছেন।
লেখাটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। তাই সেটা অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি আমি। যদিও লেখাটি যারা হজ্জ্ব করে এসেছেন তাদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে, কিন্তু লেখাটি সব মুসলমানদের জন্যই অনুপ্রেরণাদায়ক। সবাইকে পড়ে দেখার অনুরোধ রইল।
হুমম... তাহলে আপনি হজ্জ্ব থেকে ফিরেছেন, আলহামদুলিল্লাহ !
হজ্জ্বের সব আহকাম ঠিক মত পালন করে আপনি ফিরে এসেছেন।
আবার সেই পুরনো রুটিনে, সেই একই জীবনের হই হুল্লোড়ে, সেই চাকরী/ব্যবসা বাণিজ্য, ঘরে সন্তান সন্ততি... সেই পুরনো আপনিতে ফিরে এসেছেন।
একটু দাড়ান... সেই পুরনো আপনিতে ফিরে এসেছেন?? নাহ, সেটা হতে পারে না...
আপনি সেই পুরনো আপনিতে ফিরে যেতে পারেন না। আপনি আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছেন যে আপনি নিজেকে পরিবর্তন করবেন... আপনি নিজেকে আরো ভাল'’র দিকে ফেরাবেন... একজন ভাল মুসলিম এবং ঈমানদার হওয়ার জন্য আপনি যা করা দরকার সেটা করবেন।
আপনার কি মনে পড়ে না, আপনি কেমন বোধ করেছিলেন যখন প্রথম মহিমান্বিত, অপূর্ব কা’বা ঘর আপনার নজরে আসে? আপনি অবাক, হতবিহবল হয়ে পড়েছিলেন, আপনার গাল বেয়ে আবেগাশ্রু ঝরছিল, হয়ত আপনি টেরও পান নি... আপনি প্রকম্পিত হয়েছিলেন আর আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছিলেন...
মনে পড়ে কিভাবে আপনি কাদছিলেন আরাফাতের ময়দানে? কিভাবে আল্লাহর কাছে দু’হাত প্রসারিত করে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করেছিলেন? আল্লাহর কাছে শুধু এটাই বলছিলেন, আমাকে আর একটি বার সুযোগ দাও !!
আর এও কি মনে পড়ে না, কি এক অন্তর্নিহিত শক্তি আর মনোবল নিয়ে জামারাতে শয়তানের দিকে কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন? সব ধরণের গোনাহের পথ থেকে মুক্ত হয়ে শুধু মাত্র ভাল এর পথে ফেরার প্রত্যয়ে... শুধুমাত্র সরল পথে থাকার কি এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন??
আপনার কি মিনা’র সেই সুন্দর দিনগুলোর কথা মনে পড়ে না, মুযদালিফাতে সেই শান্তি এবং রহমতের রাত, আপনার সকল ইবাদত, তাওয়াফ, দোয়া, অশ্রু আর তওবার কথা??
নিশ্চয় আপনি সেসব ভুলতে পারেন নি...
তাহলে সতর্ক থাকুন, দুনিয়ার চাকচিক্য যেন আপনার হজ্জ্বের অর্জনকে ব্যর্থ না করতে পারে। আপনার প্রাত্যহিক ব্যস্ততা যেন আপনাকে আপনার সেই প্রতিশ্রুতি এবং দৃঢ় চিত্ততাকে ভুলিয়ে না দেয়...
মনে রাখবেন, ৬০০ কোটি মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন... হ্যা আপনাকে... তার মহিমান্বিত ঘরে আমন্ত্রণ করেছেন... আপনাকে সম্মানিত এবং আশীর্বাদপুষ্ট করেছেন হজ্জ্ব করার তৌফিক দান করে...
এটা একমাত্র আল্লাহর করুণা যে তিনি আপনাকে তার ঘরে নিয়েছেন।
তিনি না চাইলে আপনি কখনোই যেতে পারতেন না।
তাহলে আপনি কেন আল্লাহর শোকরগুজার বান্দা হবেন না??
তাহলে কেন আপনি বাকী জীবন আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করবেন না? আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, তার নির্দেশমত জীবন যাপন এবং আল্লাহ যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বেচে থাকা -– এইতো হওয়া উচিত আপনার জীবন !
তাই যে কোন কাজ করার আগে আল্লাহকে ভয় করুন এবং স্মরণ করুন।
আপনার দৃঢ়চিত্ততাকে শয়তান যেন টলাতে না পারে।
দুনিয়ার সব ধোকাকে না বলুন, সব ধরণের হারাম কাজ থেকে বেচে থাকুন।
আপনার আগের সব বদ অভ্যাসকে ঝেড়ে ফেলুন, সু অভ্যাসের উপর মজবুত থাকুন।
উত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত থাকুন, অন্যকে ধোকা দেয়া, মিথ্যা বলা বা গীবত করার ইচ্ছেকে দমন করুন।
আল্লাহর রাস্তায় খরচ করুন আর প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকুন, কুরআনের অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন আর আল্লাহ বাণী মোতাবেক নিজের জীবন পরিচালনা করুন।
আর যাই করুন না কেন, আপনার এলার্ম ডিভাইসের স্নুয বাটনটা যেন আপনাকে নামায থেকে দূরে রাখতে না পারে...
দৃঢ় চিত্তে চলুন, হিজাব পড়ে অথবা মুখে দাড়ি নিয়ে... মুসলমান হিসেবে গর্ব বোধ করুন, আলহামদুলিল্লাহ ! মনে রাখবেন, এগুলোই ঈমানদারের লক্ষন।
আপনার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের কথায় পাত্তা দেবেন না, তারা যদি আপনার হিজাব বা দাড়ি নিয়ে কিছু বলে, তাদের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলুন, “ " এটা আল্লাহর নির্দেশ !” "
মনে রাখবেন, আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আপনাকে আরেকটি সুযোগ দিয়েছেন... যেমনটি আপনি প্রার্থনা করেছিলেন। আপনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়েছিলেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আপনাকে এমনভাবে পবিত্র করে দিয়েছেন, যেন আপনি মাত্র ভূমিষ্ট হলেন ! তাই বেশী বেশী আল্লাহ শোকরিয়া আদায় করতে থাকুন।
আপনার আমলনামা এখন এক টুকরো সাদা কাগজের মত, যাতে কিছুই লেখা নেই। আর যে কলম দিয়ে এই কাগজে লেখা হবে সেটা আপনার হাতে !
তাই আপনি কি লিখবেন, সেটা নিয়ে সতর্ক থাকুন !
কারণ, আপনি জানেন না... আপনি জীবনে আরেকবার আমলনামাকে সাদা কাগজের ন্যায় বানানোর সুযোগ পাবেন কি না...
سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاء وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاء وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত। এটা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারীদের জন্যে। এটা আল্লাহর কৃপা, তিনি যাকে ইচ্ছা, এটা দান করেন। আল্লাহ মহান কৃপার অধিকারী।
(সূরা আল হাদীদ, আয়াত ২১) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।