দারুন উৎকন্ঠা আক্কেল আলীর মনে। ব্লগ ডে অনুষ্ঠান হবে। তবু সেটা তার শিক্ষাঙ্গনে । বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্যাচালএরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই অনুষ্ঠানে যাবে কি যাবে না চিন্তা করে তার সারাদিন গিয়েছে।
দুই পক্ষেই সে অত্যন্ত জোরালো যুক্তি দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে।
না যাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। সারা বছরে একটাই প্রোগ্রাম সেটা কোন ভাবেই মিস করা যাবেনা। তাছাড়া অনেক সুন্দরী ব্লগাররা আসবেন। সব মিস করলেও এটা মিস করা যাবেনা।
শায়মা আপারে সরসরি দেখার তার খুব ইচ্ছা। আর জানা আপু; তার লগে একটু খাতির করতে পারলে আর লাগে কি?সুতরাং এই পোগ্রাম মিস করা কোন ভাবেই সম্ভব না। তাছাড়া সে তো এই অনুষ্ঠানে বিয়ের পাত্রি পেয়েও যেতে পারে।
বিপক্ষের যুক্তি আরো জোড়ালো। পরের দিন হরতাল বিরুধীদলের।
আগের দিন হরতাল ছিল সরকারীদলের। এই দুই হরতালের যুগসন্ধিক্ষণে ঢাবির মতন ক্যাচালের আখরায় যাওয়া আর ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের কাছে যাওয়া একই কথা। আক্কেল আলীর মুখে দাড়ি । জমানা খারাপ এখন দাড়ি রাখা আর পিস্তল রাখার মধ্যে যে কোন একটা বেছে নিতে বললে মানুষ পিস্তল বেছে নিবে।
কারন পিস্তল সহ পুলিশের কাছে ধরা পড়লে কয়েকবছর জেল হবে কিন্তু দাড়িসহ ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাগু নেতাদের সামনে পড়লে বিশ্বজিতের মতন কেটে টুকরো করে মেরে ফেলবে।
আক্কেল আলী এখনো বিয়ে করে নাই তাই না যওয়াটাই যৌক্তিক । বিয়ের আগেই মারা যাওয়া। এটা কত বড় ট্রজেডি?
তাছাড়া সামুর ব্লগাররা যে হারে ক্ষ্যাপা যুদ্ধ অপরাধীর উপর তাতে দাড়িওয়ালা আক্কেল আলীকে দেখামাত্র ব্লগাররাই হয়তো তার উপর ঝাপিয়ে পরবে। তাকে মেরে যুদ্ধঅপরাধী বলে চলিয়ে দিলে জীবন বরবাদ। ৫ বছরে মানুষ যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা হলে আক্কেল আলী ৩৪ বছরে যুদ্ধঅপরাধী হলেই অযৌক্তিক কিসে?তাছাড়া তাকে দেখতে যথেষ্ট বৃদ্ধ মনে হয়।
সুতরাং যাওয়া বন্ধ। সবচেয়ে বড় আশংকা মডুরা। তার দাড়ি দেখার পর যদি তারে ব্যান করে দেয়। সাহিত্য চর্চা এখন তার নেশা। ওটা থেকে বাদ পরে যাওয়া আর মারা যাওয়ার মধ্যে কোন পাথক্যই নাই তার কাছে।
আক্কেল আলী আলুর দূষে দূষিত। মহীলা থাকলে সেখানে সে যাবেই। আক্কেল আলী অফিস থেকে শত আশংকা নিয়ে কলাভবনের দিকে চলতে থাকে। মনের বিপক্ষেই সে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে চলতে থাকে। যাওয়ার পথে রমনায় আওয়ামীলীগের একটা প্রোগ্রামের বক্তব্য শুনতে শুনতে যাচ্ছিল।
বক্তব্যের শেষে ভারত সরকার আর সোনিয়া গান্ধিকে শ্রদ্ধাজানানো হলো। আক্কেল আলী ব্যাক্কেল হলো..আগে তো বঙ্গবন্ধুকে স্বরণের মধ্যে দিয়ে বক্তব্য শেষ হতো আর এখন?আক্কেল আলী মনে মনে ভাবে যাওগ গা দিন বদলাইছে না!দিন বদলের হাওয়ায় আওয়ামীলীগ একদিন জামাতে পরিণত হবে। বিশ্বজিৎ সাহেবরে তো জামাতি স্টাইলেই হত্যা করা হলো। তখন বক্তব্যে পাকিস্তান সরকারকে শুভ্চ্ছো জানিয়ে শেষ করা হবে। আক্কেল আলী সেইদিন জ্ঞান হারিয়ে মারাও যেতে পারে।
অনুষ্ঠনে গিয়েই খুব সুন্দর এক রমণীর দিকে তার চোখ পড়লো। আক্কের আলীর চোখ আর সরে না। সুন্দরী রমনী সবার সাথে মিষ্টি স্বরে কথা বলছেন। একাই অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখছেন। তবে শরৎ ছেলেটা প্রায়ই তাকে ডিস্টার্ব করছে।
এই মডু তো বহুত খারাপ। সুন্দরীর নাম আরজু পনি। ইস আক্কেল আলীর এইরকম একটা গার্ল ফ্রেন্ড থাকলে কত ভালো হতো। এই প্রোগ্রামটা আরজু পনি উপস্থাপন করলে আনেক বেটার হতো। তার মত হাসি শরৎ সাহেব সারাজীবন চেষ্টা করলেও দিতে পারবে না।
।
জানা আপা ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়েছে। তাই অনুষ্ঠান শুরুতে দেরি। তার ট্রাফিক জামে পরা জাতির জন্য মঙ্গল জনক। তিনি হয়তো বিরক্ত হয়ে ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে লিখবেন।
মানুষ একটু উপকার পেলে পেতেও পারে। আক্কেল আলী টেনশনে ৫ টার অনুষ্ঠান কয়টায় শুরু হবে। ছোট মির্জা আর ঘুড্ডির পাইলট দুজনে টাকি মাছের মতো চ্যালংব্যালং করছে। আর শরৎ বাবু তার নিরস বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। আরজু পনি কে তারা একটু বেশি সুযোগ দিলে সমস্যা কি?নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে এত সভা সেমিনার অথচ বাস্তবে যে লাউ সেই কদু ।
একেবারে সবার শেষে এক সুন্দরী রমনী হুতূম পেঁচার মতো মুখ করে বসে আছে। তাকে ঘিরে ৮/১০ জন তাগড়া পোলা। (নওজোয়ান ব্লগার)তাদের একজন তাকে লক্ষী পেঁচা বলে ডাকলো। আরে এতো লক্ষী পেঁচা!!আক্কেল আলী তার সাথে কথা বলার লোভ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে । পরে বাধ্য হয়ে নিজেকে সংবরণ করলো।
লক্ষী পেঁচার তাগড়া জোয়ান বন্ধুরা তাকে রামধোলাই দিলে।
আক্কেল আলী অনুষ্ঠান চলাকালে একফোটাও নড়েন নাই। তার ব্যাগ সে কিছু সময়ের জন্যও ছাড়েন নাই। কবিতা লিখার পর তার আচরণে পরিবর্তন আসছে। সে এখন কম কথা বলে।
হফ করে বসে থাকে। আফটার অল সে একজন বিখ্যাত কবি। কবিরা ভাব নিযে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সে প্রয়োজনে জানা আপার সাথেও পরিচিত হবে না। ভাব মেরে থাকবে।
মুই কি হনুরে?
অনেক খুশি আর আনন্দের মধ্যে দিয়ে অনুস্ঠান শেষ হলো। আক্কেল আলীর চিন্তা হলো বাড়ি ফিরতে কয়টা বাজবে। ১০ টার সময় গেট বন্ধ। অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে ১০টায়। গেট বন্ধ থাকলে গেট খোলার নানা কৌশল কি কি হতে পারে ভাবতে ভাবতে সে বাড়ীর পথে চলতে লাগলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।