আপন আলোয় আলোকিত হবার অব্যাহত চেষ্টা সবাই এখনো আর সি মজুমদার মিলনায়তনে নিশ্চয়ই খানা-পিনায় ব্যস্ত। আমি এই ফাকে প্রথম অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কারণ কিছুক্ষণ পর সব নামকরা ব্লগার রা ব্লগ করে করে সামুর সার্ভার হ্যাং করে ফেলবে। তার আগে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়া যাই ।
এই সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না।
গতকাল দেখলাম আমি ব্লগে আছি ১বছর ১দিন। মানে ব্লগ ডে আমার ব্লগে জন্মদিনের মতই! আজকে ব্লগ ডে তে যাওয়া নিয়ে মনে অনেক সংশয় ছিল। কাউকে চিনি না, জানি না। আর খুব একটা যে কথা বলতে পারি তাও না। সুতরাং খুবই অনিশ্চিত ছিলাম।
কিন্তু যাবার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল। যাদের লেখা এত ভাল লাগে, তাদের কাছ থেকে খুব দেখার ইচ্ছা ছিল।
এই শীতের মধ্যে শেভ করলাম। চেহারা একটু হলেও ভদ্রস্থ করার অপচেষ্টা। বাসে উঠলাম, রাস্তায় জ্যাম।
কাকরাইলে নাকি গন্ডগোল। যাই হোক, শাহবাগ পৌছলাম। এখন অডিটোরিয়াম খুঁজে পাইনা। হাঁটতে হাঁটতে একে তাকে জিজ্ঞেস করে খুঁজে চলে এলাম। এখন সামনে দেখলাম বড় করে অডিটোরিয়ামের নাম লেখা, কিন্তু ভিতরে কিসু দেখা যায় না।
ইতি উতি তাকিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। এক ভাই হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ব্লগার ভাই, ভিতরে গিয়ে বসেন। মনটাই ভাল হয়ে গেল। ঢুকলাম ভেতরে। কেউ ইতঃস্তত ঘোরা-ফেরা করছে।
শরৎ ভাইকে দেখামাত্র চিনলাম, নোবিতা রিফু কে দেখলাম। ল্যাপ্টপ দিয়ে ভিডিও স্ট্রিমিং করার চেষ্টা করছিলেন তারা। আমি ঢুকে পেছনের সারিতে বসতে গেলাম। ব্লগার এক ভাই হাত বাড়িয়ে বললেন, আপনি ব্লগিং করেন? আমি মাটির সাথে মিশে গিয়ে বললাম, জ্বী করি তো একটু আধটু। নিক টা জানতে পারি ? আস্তে করে বললাম, আধখানা চাঁদ।
উনি মনে হল মিচকি হাসল একটু। বলল, 'আমি সাদরিল। ' নামকরা ব্লগার।
একটু পর দেখতে পেলাম তামিম ভাইকে। তামিম ভাই হয়তো আজকে ব্লগ ডেতে তাকে যেন সবাই দেখামাত্র চিনতে পারে সে উপলক্ষে বেশ কদিন আগে থেকেই তার অরিজিনাল ছবি প্রো পিকে দিয়ে রাখসে।
হ্যন্ডসাম, ড্যাশিং। তাকে খুবই ভাল দেখাচ্ছিল। তিনি ঠিক তার মতই সমান বিখ্যাত তার সেই কমলা ক্যামেরা দিয়ে কয়েকটা ছবি তুললেন।
একজন মেয়েকে দেখলাম চশমা পড়া, হাঁটা-হাঁটি করছিল। যে কজন মেয়ে ব্লগার চোখে পরল সবাই চশমা পড়া।
সিরিয়াস ব্লগিং করে চোখ খারাপ করে ফেলেছেন B-
আরমান ভাইকে চোখে পড়ল, গোলাপ ভাইকে দেখলাম। একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন। একটু বয়স্ক আমাদের চেয়ে দেখলাম এসে বসলেন চেয়ারে, পোশাকে আশাকে কেতাদুরস্ত।
এর মাঝে জানাপা এসে ঢুকলেন। হাতে একতারা কাগজ নিয়ে কী যেন পড়লেন।
এর মাঝে শরৎ ভাই কাকে যেন বলছেন, "পরিচিত হও নাই, তো এখন হও, কথা না বললে কিভাবে পরিচিত হবা?" এক্কেবারে খাঁটি কথা।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম প্রিয় ব্লগার নোমান নমি। খুবই ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে এসে ঢুকলেন। সিটে বসলেন। কার সাথে যেন গল্প করছিলেন।
যোবায়ের ভাইকে দেখলাম। নামকরা টেকি ব্লগার। খুব অল্পবয়স হবে ভেবেছিলাম। ছেলে দেখলাম বড় হয়ে গেছে
কালা মনের ধলা মানুষকেও দেখলাম , যদি আমি ভুল করে না থাকি। হাসোজ্জ্ব্ল একজন মানুষ।
আমার পছন্দের ব্লগার।
আরমান ভাইকে দেখলাম, যদি ভুল করে না থাকি। চশমা পড়া। তামিম ভাই, আরমান ভাই, গোলাপ ভাই এদের একটা গ্রুপ আছে। তারা নিজেরা নিজেরা মজা করেন।
এ তার পেটে খোঁচা দিয়ে হাসতে থাকেন। ভালই লাগছিল দেখতে।
ইনফ্যক্ট সবারই দুজনের হলেও একটা গ্রুপ আছে। আমি আর আর কজন হতভাগা ছিলাম এতিম ব্লগার। কেউ নাই।
চুপ করে বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না।
সবার সাথে কথা বলতে পারলে ভাল হত। আবারো নিজের খোলসটা ভাংতে না পারায় তেমন কারো সাথে কথা হল না। তার মনে হয়না প্রয়োজন ও আছে। লেখা দিয়ে যাদের সাথে পরিচয় (অবশ্যই তাদের লেখা, আমি আবার লিখতে পারি নাকি!) তাদের সাথে সামনা সামনি দেখা পাওয়াটা আমার জন্য ভাগ্যের।
আমার কাছে আমার ব্লগাররা হিরো। আর আমাকে খুঁজে পাওয়া তো পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ। আকাশে তাকালেই আমাকে দেখা যায়। সুতরাং আমাকে দেখতে চাইলে বাইরে আকাশে কষ্ট করে তাকালেই হবে !
এইতো, সবার কান্ডকারখানা চেয়ারে বসে বসে খেয়াল করছিলাম। শেষমেষ উঠেই পড়লাম সিট থেকে।
বের হওয়ার সময় সাদরিল ভাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন, যেন চোখের ভাষায় প্রশ্ন করলেন, অই মিয়া, অনুষ্ঠান শুরু হয় নাই, কই যান? আমিও হাসি হাসি মুখ করে বের হয়ে আসলাম।
বের হবার সময় দেখলাম আরো ব্লগার আসতে শুরু করেছেন। তামিম ভাইকে আবার দেখলাম। চোখাচুখি হতে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ততার ভান করলাম। তারপর আর কি।
জ্যাকেটের ভেতর হাত দিয়ে হাঁটা দিলাম।
আমার ব্লগ ডে এখানেই শেষ । খাওয়া-দাওয়া মিস করলাম । ব্যাপার না। সময় কম নিয়েই বের হয়েছিলাম, কিছু করার ছিল না, টায়ার্ডও ছিলাম।
সব মিলিয়ে আর থাকা সম্ভব ছিল না।
সামু তথা বাংল ব্লগিং আমার খুব পছন্দের একটা জায়গা। এটা এমন একটা প্ল্যাটফরম যেখানে আমি আমার সবকিছু পাই। মুভি রিভিউ, ডাউনলোড লিঙ্ক থেকে শুরু করে ই-বুক,সফটওয়ার, ছবি ব্লগ, টেকি হেল্প, গল্প, কবিতা, অনুকাব্য কি নেই সামুতে। সবাই এত ভাল এখানে।
মাঝে মাঝে একটু হয়ত ঝামেলা হয়, মতের অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু প্ল্যটফরমটাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমরা একটা অনেক বড় পরিবার, অনেক সুখী পরিবার।
আমি অত্যন্ত নগন্য ব্লগার। লেখার চেয়ে পড়তেই ভালবাসি।
এখানে যে সব ব্লগারদের কথা উল্লেখ করা হল তা আমার একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ব্লগ ডের সর্বাংগীন সাফল্য কামনা করছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।