অনেকদিন ধরেই পাকিস্তানী নতুন প্রজন্মের কারো সাথে আলাপ করার ইচ্ছে ছিল, মুলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ৭১ নিয়ে। লন্ডনে পড়তে এসে সেটা সম্ভব হয়েছে, খুব ভালো করেই। বলতে গেলে একসাথে থাকা। হলে আমার পাশের রুম একজন পাকিস্তানী মেয়ের। একি ফ্লোরে একজন ভারতীয়ও আছে।
আমরা সমবয়সি। একি কিচেন ব্যবহার করি। পাকিস্তানী ঐ মেয়ের সাথে কথা বলে বুঝলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তরুণ পাকিস্তানীদের ধারণা অসম্পূর্ণ। তার ধারণা আমরা (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) একসাথে ভালই ছিলাম, সুখেই ছিলাম। যত দোষ ঐ ভারতের।
তাদের জন্যই পাকিস্তান দ্বি-খন্ডিত হয়েছে। তাদের শক্তি খর্ব হয়েছে। এর জন্য ভারতকে কখনই বন্ধু ভাবা যায় না। আমি বললাম, তুমি সঠিক ইতিহাস জাননা। তোমাদের সাথে আমাদের বিস্তর ফারাক, ভাষা, সংস্কৃতি, ইত্যাদিতে।
মাঝখানের দুরত্বও অনেক। আর তৎকালীন পশ্চিম-পাকিস্তানী শাষক গোষ্টি আমাদের সাথে চরম অন্যায়, অবিচার করেছে, এমনকি বিপুল ভোটে বিজয়ের পরেও জনগনের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগ করেছে, মানুষ মেরেছে। হ্যা, ভারত সেই যুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার দাবি, লড়াই, জীবনদান সবিই করেছে বাংগালীরা, পূর্ব-পাকিস্তানের আপামর জনগন।
আরেকজন পাকিস্তানী ক্লাসমেট বলল, বাংলাদেশকে হারিয়ে তারা খুবই মর্মাহত।
বাংলাদেশ সাথে থাকলে ভারতের সাথে টেক্কা দিতে আরো সুবিধা হত। কাস্মীর নিয়ে ভারতকে চাপে রাখা যেত। আমি তাকে বলেছি, আমরা আলাদা হয়ে যার পর নাই আনন্দিত, খুবিই খুশি। তোমাদের আর্মি আমাদের তিন মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে। এর জন্য তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
তার জবাব, হতাহতের এই পরিসংখ্যান অতিরঞ্জিত, এটাতেও ভারতের হাত রয়েছে। ইতিহাস তারাই লিখে যারা জয়ী হয়।
ভাবলাম, এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভারত বিদ্বেষ (ভারতীয়রাও পাকিস্তানিদের নিয়ে চরম সন্দেহবাতিক!)। নিজেদের সঠিক ইতিহার এরা জানেনা, জানতেও চায় না। না জানুক, তাতে কী? আমরা স্বাধীন জাতি, যুদ্ধ করে জন্ম হয়েছি।
এটাই আমার গর্ব। মানব উন্নয়ন সুচকে ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে আমার এই ছোট্ট দেশটি এগিয়ে আছে, যদিও সম্পদ কম। ঝগড়া-ঝাটি, মাড়া-মাড়ি লেগেই আছে, তবুও বলব আমরা ভালো আছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাষ এসব ঝগড়া-কাচাল আস্তে আস্তে কমে যাবে। সবাই মিলে একযোগে কাধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।
আমার বাংলাদেশ, আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।
পুনশ্চঃ এখানে আমাদের নতুন প্রজন্মের তিনজনের মধ্যে (বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের) বেশ বন্ধুত্ব। আমরা মনে করে, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ের জন্য পারস্পরিক বন্ধুত্ব খুবই প্রয়োজন।
১৬ ডিসেম্বর ২০১২
ওয়েস্টমিনিস্টার, লন্ডন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।