আমিও শিশুর মতো/ তারই মতো মেনে নিতে পারি, যতো ব্যাথা না পাবার,/ ততো কাঁদি, ততো ঠুঁকি মাথা,/ যতো ক্ষতে বয়ে চলে- এ জীবনধারা। "আত্নহত্যা" শব্দটি আমাদের মধ্যে এক ধরনের অস্হিরতা, এক রকমের হাহাকার সৃষ্টি করে। আমার কাছে আত্নহত্যা যেন হত্যাকান্ডের চেয়েও ভয়াবহ একটা ব্যাপার। পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্মে আত্নহত্যা ক্ষমাহীন অপরাধ। তারপরেও প্রাচীন কিছু ধর্মমতে নিরিবিলি পরিবেশে দেহত্যাগের কথা উল্লেখ আছে।
যুগে যুগে এই পৃথিবীতে আত্নহননের ঘটনা ঘটেছে। তবে সচরাচর আত্নহননের মতো ঘটনাগুলো ঘটে লোকচক্ষুর আড়ালে। এই পৃথিবীর বুকে এমন ঘটনাও ঘটে, যেখানে আত্নহত্যা করা হয় সকলের সামনে। আজ আমরা এমন কয়েকটি ঘটনার দিকে আলোকপাত করবো।
১।
রবার্ট বাড ডয়ার: ডয়ার ছিলেন একজন আমেরিকান রাজনীতিবিদ। তিনি পেনসিলভানিয়ার ৩০তম ট্রেজারার হিসেবে ১৯৮১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেবার নামে ঘুষ খাবার অভিযোগে ডয়ারকে অভিযুক্ত করা হয়।
২২শে জানুয়ারী ১৯৮৭, আদালতের রা্য় প্রকাশের একদিন আগে ডয়ার একটি প্রেস কনফারেন্স ডাকেন। কনফারেন্সে তিনি নিজেকে নিরপরাধ বর্ননা করেন।
এসময় তাকে বেশ নার্ভাস লাগছিলো। বক্তব্য প্রদানের মাঝখানে তিনি পিস্তল বের করেন এবং উপস্হিত সবাইকে তার কাছে না আসার জন্য অনুরোধ জানান। সবাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি পিস্তল মুখে ঢুকিয়ে গুলি চালিয়ে দেন।
মুখে গুলি করার আগ মূহুর্তে ডয়ার
২। ক্রিষ্টেইন চুবুক: ক্রিষ্টেইন ছিলেন একজন মার্কিন সাংবাদিক ও সংবাদপাঠিকা যিনি সরাসরি সম্প্রচারিত টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সামনে আত্নহত্যা করেন।
১৯৭৪ সালের ১৫ই জুলাই সকালে ক্রিষ্টেইন তার পরিচালিত সংবাদ ভিত্তিক একটি লাইভ অনুষ্ঠানে উপস্হিত থেকে পর পর তিনটি জাতীয় সংবাদ কভার করেন এবং অনু্ষ্ঠান শুরুর ৮ মিনিট পর আচমকা পিস্তল বের করে ডান কানের পেছনে গুলি করে আত্নহত্যা করেন।
৩। আব্রাহাম ব্রিগস্: ১৯ বছর বয়েসী এই ছেলেটি আত্নহত্যা করে ওয়েব ক্যামের সামনে যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ সেটি সরাসরি দেখতে পায়। ব্রিগস্ তার জীবন ও প্রেমিকার বিষয়ে খুব হতাশ ছিলো। আত্নহত্যার পূর্বে সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবাইকে তার উদ্যগের কথা জানায়।
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই তার কথা বিশ্বাস করেনি। উপরন্তু অনেকে তাকে রসিকতার ছলে উৎসাহ প্রদান করে। আত্নহত্যার দিন ব্রিগস্ প্রচুর পিল খায়। সেদিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় ১৫০০ লোক এই আত্নহত্যার দৃশ্য দেখে।
৪।
আমান্ডা টড: ১৬ বছরের টিনেজ মেয়ে আমান্ডা। সে জনসম্মুখে আত্নহত্যা করেনি ঠিকই কিন্তু তার আত্নহত্যার কারনটি ভিডিও করে রেখে যায়। ৭ই সেপ্টেম্বর ২০১২, আমান্ডা ৯ মিনিটের একটি ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করে যার শিরোনাম: My story, struggling, bullying, suicide and self harm । ভিডিওটিতে সে তার জীবনের নিপীড়ন ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের দূর্বিষহ ঘটনাগুলো ফ্ল্যাশকার্ড আকারে লিখে দেখায়। ২০১২ সালের ১০ই অক্টোবর সে আত্নহত্যা করে।
২০১২ সালের ১৩ই অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১৬০০০০০ দর্শক এ ভিডিওটি দেখেছিল।
আমান্ডার ভিডিওটির ফ্ল্যাশকার্ডগুলি দেখা যাচ্ছে
৫। Self immolation: Self immolation বলতে বোঝায় নিজের শরীরে আগুন লাগানো বা আগুন দ্বারা নিজেকে ভষ্মীভূত করা। এটি করা হয় রাজনৈতিক প্রতিবাদরূপে অথবা নিজের মতামত অন্যের কাছে তুলে ধরতে দৃষ্টি আকর্ষনের নিমিত্তে।
দক্ষিন ভিয়েতনামের বহুসংখ্যক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বৈষম্যের প্রতিবাদে রাজপথে নিজেদের শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্নহত্যা করেন।
যদিও বৌদ্ধ ধর্মমতে কারো প্রতি ভায়োলেন্স প্রয়োগ বা প্রদান সম্পূর্ন নিষিদ্ধ তবুও বোধিসত্যগুরুর কতিপয় সূত্র মতে যারা সেল্ফ এমোলেশনের মধ্যে দিয়ে যায় তারা ঐশ্ব্যরিক প্রাপ্তি লাভ করে।
সন্ন্যাসীদের সেলফ ইমোলেশনকে পশ্চিমা মিডিয়া রাজনৈতিক প্রতিবাদরূপেই দেখে থাকে। এটি সুইসাইড আটাকের মতো অন্যকারো জান মালের ক্ষয়ক্ষতি না ঘটালেও যিনি এ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যান তিনি ভষ্মে পরিনত হন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।